করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে রোগীরা অক্সিজেন কিনে বাসায় আইসোলেশনে থাকছেন। কিন্তু করোনার আগে এই অক্সিজেন ব্যবসায়ীরাই চেপে ধরছেন রোগীদের গলা। ফলে অক্সিজেন সংকটে চট্টগ্রামে রোগীদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। অনেকে মারা যাচ্ছেন অক্সিজেন সংকটে। ওষুধের মতো কৃত্রিম সংকট অক্সিজেন সিলিন্ডারের। আগে অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাড়ায় মিলত। এখন কিনে নিতে হয়, তাও তিন থেকে চারগুণ বেশি দামে। চট্টগ্রামে বর্তমানে চারটি হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা চললেও সেখানে পর্যাপ্ত আইসিইউ ভেন্টিলেটর নেই। বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়ে গড়িমসি চলার মধ্যে সামর্থ্যবান রোগীরা অন্তত প্রাণে বাঁচতে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের অতিরিক্ত দাম রাখার কারণে এবং নিয়মানুযায়ী পর্যাপ্ত অক্সিজেন বোতলে না থাকায় বাসাবাড়িতে আইসোলেশনে থাকা রোগীদের অনেকে অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
জানা গেছে, বাজারে দুই ধরনের অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি হয়। শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত সিলিন্ডারে অক্সিজেন থাকে গড়ে ৬৫ শতাংশ। এসব সিলিন্ডার এখন রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি সাধারণ রোগীদের কাজে এলেও কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য দরকার উচ্চ চাপসমৃদ্ধ (হাই ফ্লু) অক্সিজেন। বিওসি বা লিন্ডের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো হাসপাতালে ব্যবহৃত এসব অক্সিজেনের বোতল সরবরাহ করে থাকে। এসব সিলিন্ডারে অক্সিজেনের পরিমাণ থাকে ৯৯.৯৭ শতাংশ। এই সিলিন্ডারগুলোই মূলত কোভিড রোগীর চিকিৎসার
উপযোগী। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, সরকারি অক্সিজেন সিলিন্ডারের নাম করে শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত অক্সিজেন রোগীদের সরবরাহ করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে অক্সিজেনের পরিমাণ কত আছে তাও জানার সুযোগ থাকছে না। সরকারি কারখানা থেকে সরবরাহ করা একটি সিলিন্ডার পুরোদমে ৪ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারার কথা থাকলেও বিভিন্ন দোকান থেকে যে সিলিন্ডার কেনা হচ্ছে তা রোগীদের কাজেই আসছে না। সেখানে কী পরিমাণ অক্সিজেন আছে তাও জানার উপায় নেই।
কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসাসংক্রান্ত সরকারি তদারকি কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মিজানুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, কোভিড রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহের ক্ষেত্রে দুই ধরনের অনিয়ম দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা সরকারি অক্সিজেনের বোতল কিনলেও পরবর্তী সময়ে তারা গ্যাস ভরছে বাইরে থেকে। ফলে অক্সিজেনের পূর্ণাঙ্গ মান বজায় থাকছে না। অথচ বিক্রি করা হচ্ছে সরকারি দামের দ্বিগুণ দামে। এর বাইরে শিল্পকারখানার অক্সিজেন সিলিন্ডারও সরকারি সিলিন্ডার বলে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার জাহাজ ভাঙাশিল্পের কাঁচামাল দিয়ে রাতারাতি অক্সিজেন সিলিন্ডার বানিয়ে সরবরাহের জন্য ওয়ার্কশপ তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজ (সোমবার) থেকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অক্সিজেনের বোতল, দাম ও অক্সিজেন সরবরাহের ক্ষেত্রে কারসাজির অভিযোগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ কাতালগঞ্জের শহীদ এন্টারপ্রাইজ, মেডিক্যাল এলাকার সৌদিয়া এন্টারপ্রাইজ, সাহান মেডিকো, হিরা মেডিকো, জেকে এন্টারপ্রাইজ ও কে কোবরা, আন্দরকিল্লা তাজ সায়েন্টিফিক মার্ট, এবি সার্জিক্যাল ও নীপা সার্জিক্যাল। এর মধ্যে গতকাল পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়।
জানা যায়, গতকাল দুপুর থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুকের নেতৃত্বে করোনাকালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও নেবুলাইজারের দামবৃদ্ধির বিরুদ্ধে নগরীর আন্দরকিল্লা, সদরঘাট ও প্রবর্তক মোড় এলাকায় অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক জানান, বর্তমান করোনা সংকটে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মানুষের জীবন নিয়ে খেলা শুরু করেছেন। তারা মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে অতিপ্রয়োজনীয় অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ চিকিৎসাসামগ্রীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও দাম বাড়িয়ে মুনাফা করছেন। মানুষ জীবন রক্ষার্থে তাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এ ধরনের অনিয়মের অভিযোগে আজকের (সোমবার) অভিযানে নগরীর সদরঘাটের ব্রাদার্স প্রকৌশলী ওয়ার্কসকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। প্রতিষ্ঠানের মালিক দিলীপ কুমার কোনো ধরনের ইনভয়েস ও ব্যবসায়িক কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। নিজেদের মতো বিক্রি করে আসছিলেন সিলিন্ডার ও মিটারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি। তিনি সিলিন্ডারপ্রতি লাভ করেছেন প্রায় ১৫ হাজার টাকা, মিটারপ্রতি লাভ করেছেন ৩ হাজার টাকা।
অভিযানে আন্দরকিল্লা তাজ সার্জিক্যাল ও নীপা সার্জিক্যালে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া যায়নি। এবি সার্জিক্যাল ও প্রবর্তক মোড়ের কে কোবরা সার্জিক্যাল দোকান পাওয়া যায়।