আফগানিস্তানের তালেবান গোষ্ঠী নারীর বিরুদ্ধে যে কঠোর বৈষম্যমূলক আচরণ করেছিল, তা সবার জানা। শান্তি আলোচনার সময় একজন নারী সাংবাদিক যখন সেই গোষ্ঠীর কিছু পুরুষের মুখোমুখি হচ্ছেন তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য, তখন ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াচ্ছে? আর সাক্ষাৎকারদাতা যখন নারী সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতেই চান না – অথবা এমন একজন, যিনি চোখে চোখ রেখে তাকান না, তার সঙ্গে কীভাবে কথা বলবেন? কাতারের দোহায় এখন তালেবান এবং আফগান সরকারের মধ্যে যে ঐতিহাসিক শান্তি আলোচনা চলছে, সেটির খবর সংগ্রহ করতে গেছেন বিবিসির পশতু বিভাগের শাজিয়া হায়া । সেখানে যা ঘটছে তার নেপথ্য কাহিনী শোনা যাক তার কাছে:
“আমি খুনি নই, কিন্তু আমাকে আপনাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে একজন খুনি হিসেবে। আমি রাজনীতি নিয়ে কথা বলবো না। বরং আপনাদের সবার সঙ্গে বসার জন্য একটা সময় ঠিক করা যাক। আমরা একসঙ্গে চা খাব এবং আমি আপনাদের কিছু কবিতা শোনাবো।”
কথাগুলো তিনি বললেন নরমভাবে, তার মুখে মৃদু হাসি।
তালেবানের খুব গুরত্বপূর্ণ একজন নেতা এভাবে কথা বলবেন, সেটা আমি আশা করিনি।
কাতারের দোহায় জঙ্গিদের সঙ্গে আফগান সরকারের ঐতিহাসিক আলোচনার শেষ দিনে আমি তার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলাম একটা সাক্ষাৎকারের অনুরোধ নিয়ে।
আমি তখন বিমানবন্দরের দিকে রওনা দেব। তখন হোটেলের লবিতে দেখলাম তালেবান প্রতিনিধিদলের কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের ঘিরে রেখেছে রিপোর্টাররা।
একটা চমৎকার প্রতিবেদন লেখার জন্য তার কাছ থেকে দারুণ কোন তথ্য পাওয়ার এটাই শেষ সুযোগ।
কিন্তু তিনি তো কবিতা নিয়ে কথা বলতে দোহায় আসেন নি। আমিও না।
‘আমি কথা বলবো না‘
রুদ্ধদ্বার আলোচনার খবর সংগ্রহ করা সবসময় কঠিন। আমাদের জন্য শুরুটা মোটেই আশাব্যঞ্জক ছিল না।
দোহার শেরাটন হোটেলটা দাঁড়িয়ে আছে একেবারে সাগরের তীরে। যখন প্রথম এই হোটেলে এলাম, তখনই চোখে পড়লো তালেবান নেতারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
আমি আমার ব্যাগটা মেঝেতে রেখে তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম তক্ষুনি একটা সাক্ষাৎকারের অনুরোধ নিয়ে।
অনেক সময় যদি কাউকে অপ্রস্তত অবস্থায় ধরতে পারেন, তাদের কাছ থেকে কথা বের করা যায়। খুব সতর্কভাবে লেখা কোন প্রেসবিজ্ঞপ্তির চেয়ে বরং এভাবেই একমাত্র পাওয়া যেতে পারে আপনার প্রতিবেদনে ব্যবহারযোগ্য কোন উদ্ধৃতি।
“আমি কথা বলবো না,” তালেবানের এই নেতা সাথে সাথে বললেন।
আমি যখন আসলে তার দিকে ক্যামেরা হাতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, তিনি আমাকে আশা করছিলেন না।
আমি তার অস্বস্তি বুঝতে পারছিলাম এবং সাথে সাথেই একটু পিছিয়ে এলাম।
আমি হাসিমুখে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বললাম সাক্ষাৎকার নেবেন আমার পুরুষ সহকর্মী। আমি সেখানে থাকবো ক্যামেরা ধরার জন্য।
দোহায় আমার কাজটা কথা কঠিন হতে যাচ্ছে, সেটা দ্রুতই আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
চোখে চোখ না রাখা
শেষ পর্যন্ত আমি অবশ্য কথা বলতে অনিচ্ছুক ঐ তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছিলাম। কিন্তু সাক্ষাৎকারের পুরোটা সময় আমি খেয়াল করলাম, তিনি এবং তার প্রতিনিধিদলের অন্য তালেবান নেতারা আমার চোখে চোখ রাখছেন না। এটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল যে তারা পুরুষদের সঙ্গে কথা বলার সময় যতটা সহজ, মেয়েদের বেলায় মোটেই তা নন।
এরা বিশ্বাস করে, একজন অপরিচিত নারীর চোখে রাখা মানে তাকে অশ্রদ্ধা করা। তাদের দৃষ্টিতে এটা পাপ।
আমি পুরো তিন মিনিট সময় ধরে একজন তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার নিলাম কিন্তু তিনি একবারও আমার দিকে তাকালেন না।
আমি সত্যিই বিশ্বাস করি তিনি যদি ভবিষ্যতে আমাকে দেখেন, তিনি মনেই করতে পারবেন না যে আমাকে তিনি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন।
কিন্তু এসবের কিছুতেই আমি অবাক হইনি। যে গোষ্ঠীটি বহু বছর ধরে লুকিয়ে ছিল, লড়াই করছিল- তাদেরকে চোখের সামনে দেখা, নানা প্রশ্নের মুখোমুখি করা, সেটাও কয়েকমাস আগে অকল্পনীয় ছিল।
কাজেই আমি আরও অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য তৈরি ছিলাম।
ঐতিহাসিক ঘটনা
আফগান সরকার এবং তালেবান নেতৃত্ব বহু মাস ধরে আলোচনা চালিয়েছে এরকম একটি মুখোমুখি বৈঠকের জন্য। তাদের আলোচনা কখনো এগিয়েছে, কখনো পিছিয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই বৈঠক কখন, কোথায় হবে, সে ব্যাপারে তারা একমত হয়েছে। তখন আরও অনেক আফগান সাংবাদিকের মতো আমারও মনে হয়েছে, এই ঐতিহাসিক ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বহু দশকের রক্তপাত এবং খুনোখুনির পর দুই পক্ষ শেষ পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে রাজী হয়।
আমাদের চোখের সামনেই উন্মোচিত হচ্ছিল এক নতুন ইতিহাস।
দ’হাজার দুই সাল থেকে আমি অনেক ঘটনা, অনেক পরিবর্তন দেখেছি। তালেবানের পতনের পর এক নতুন আফগানিস্তান তখন যাত্রা শুরু করেছে। কিন্তু নতুন সরকারকে সাথে সাথেই আবার তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে হলো।
কিন্তু ১৮ বছর পর দুই চরম শত্রুপক্ষ সমঝোতার জন্য আলোচনার টেবিলে মুখোমুখি।
কী পোশাক পরবো?
দোহার উদ্দেশে কাবুল থেকে যখন বিমান ছাড়লো, আমি এই ঐতিহাসিক ঘটনার নানা দিক নিয়ে ভাবছিলাম। নারী অধিকার থেকে নারী স্বাধীনতার ভাগ্য, আফগানিস্তানের সংবিধান থেকে শুরু করে দুই পক্ষের আলোচনার বিষয়।
কীভাবে এই আলোচনার খবর সংগ্রহ করবো, সেটা নিয়ে আমি ভাবছিলাম। কার সাক্ষাৎকার নেব, কী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবো এসবের পাশাপাশি একটি বিষয়ও আমার ভাবনায় এলো।
আমি কী পোষাক পরবো? নিজেকে প্রশ্ন করলাম আমি।
এটি আমার কোন অহমিকার ব্যাপার নয়। অনেক পুরুষ সহকর্মীর বেলায় এরকম প্রশ্ন হয়তো তাদের মাথাতেই আসবে না।
কিন্তু নারী স্বাধীনতা এবং অধিকারের ব্যাপারে তালেবানের যে কঠোর নিয়ম-কানুন, সেজন্যে একজন নারী সাংবাদিক হিসেবে আমাকে আমার পোশাক নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। যদিও আমার মাথা হতে পা পর্যন্ত পোশাকে আবৃত। কাবুলের রাস্তায় যে পোশাক পরে মেয়েরা প্রতিদিন অফিসে যান, যে পোশাক নিয়ে তাদের দ্বিতীয়বার ভাবতে হয় না, আমার পরনে সেরকম পোশাকই।
আমি এখানে এসেছি তালেবানের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সাক্ষাৎকার নিতে। যে তিনদিন আমি এখানে থাকবো, তাদের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এখন আমি এখানে যে পোশাকে এসেছি, ১৮ বছর আগে এই পোশাকে আমার পক্ষে রাস্তায় হাঁটা সম্ভব ছিল না।
তখন আফগানিস্তানে তালেবান মেয়েদের পোশাকের ব্যাপারে যে কঠোর বিধান চালু করেছিল, তাতে নীল চাদর (হিজাবের মতো একটি পোশাক যা নারীর মাথা থেকে পা পর্যন্ত আবৃত করে রাখে) পরা বাধ্যতামূলক ছিল। যারা এটি পরতো না, তাদের তালেবান কঠোর সাজা দিত।
তারা এখন কতটা বদলেছে, আমি ভাবছিলাম। তারা এখন আমাকে কীভাবে নেবে?
‘ভুল হতেই পারে’
তাদের অবস্থান আগের চেয়ে নমনীয় হয়েছে আমার এমন আশা করার যথেষ্ট কারণ আছে।
যখন আমার বয়স মনে হয় চার বছর, তখন একদিন আমি আমার খালার বাড়িতে যাচ্ছিলাম। আমার সঙ্গে ছিলেন আমার মা, তিনি চাদরে নিজেকে আবৃত করেছিলেন।
যখন আমরা এসে পৌঁছাচ্ছি, তিনি চাদর খুলে ফেললেন, তার মুখ উন্মোচন করলেন।
তখন এক তালেবান পুরুষ এসে তাকে একটা চাবুক দিয়ে আঘাত করলো। আমার চোখের সামনে। লোকটা চিৎকার করে বললো, ‘তোমার মুখ ঢাকো।’
আমার শৈশবের সেই স্মৃতি আমার মনে গেঁথে আছে। আমি জীবনে কখনো সেই দিনটির কথা ভুলতে পারবো না। যখন আমরা আমার খালার বাড়িতে ঢুকে গেছি, তখন আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বারবার আমার মাকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, লোকটা কি আমাদের পেছন পেছন আসছে, আমাদের অনুসরণ করছে?
এই সম্মেলন আমি যখন এক তালেবান প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলছিলাম তখন এই স্মৃতির কথা তাকে বললাম এবং জানতে চাইলাম, এটা শুনে তার প্রতিক্রিয়া কী।
“অতীতে অনেক ভুল হয়েছে এবং এসব ভুলের আর পুনরাবৃত্তি হবে না,” শান্তভাবে তিনি জবাব দিলেন।
এই তালেবান প্রতিনিধিদল যদি এখন কাবুল যায়, তারা অনেক পরিবর্তন দেখতে পাবে।
একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হচ্ছে সব জায়গায় মেয়েদের অনেক বেশি প্রকাশ্য উপস্থিতি। পার্লামেন্টের অন্তত ২৫ শতাংশ আসনের এমপি এখন নারী। গণমাধ্যমে এবং বিনোদন জগতে তাদের এখন বেশ উল্লেখযোগ্য অবস্থান। সরকারি দফতরে কাজ করছে অনেক তরুণী কর্মকর্তা।
স্কুলে প্রত্যাবর্তন
আর যে পরিবর্তনটা আপনি সত্যই দেখতে পাবেন সেটা হলো শিক্ষায় মেয়ে এবং নারীদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ।
আমার পরিবার পাকিস্তানে কয়েকমাস কাটিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলা করার পর তারা ফিরে আসে। এরপর অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এলো।
আমার মনে আছে কাবুলের চারিদিকে তখন শিক্ষা বিষয়ক অনেক বিজ্ঞাপন। একটা পোস্টারে হাসিখুশী এক ছেলে আর এক মেয়ের স্কুলে যাওয়ার ছবি ছিল। পোস্টারে লেখা ছিল, ‘চলো লেখাপড়া করি।’
তালেবান শাসনের সময় আমার বড় বোন পড়াশোনা করতে পারেনি। কিন্তু আমি আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি স্কুলে যেতে পারি কিনা এবং স্কুলের খাতায় নাম লেখাতে পারি কিনা।
আফগানিস্তানে এখন প্রায় এক কোটি ছাত্র-ছাত্রী, এদের একটা বড় অংশ হচ্ছে মেয়ে।
যদি কোন শান্তি চুক্তি হয়, এসব অর্জনের কোনগুলোকে বিসর্জন দিতে হবে?
কাতারে তালেবানের যে রাজনৈতিক অফিস, তার মুখপাত্র হচ্ছেন সুয়াহিল শাহীন। তাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “যদি আপনারা একটা শান্তি চুক্তিতে পৌঁছান এবং কাবুলে যান, এরকম কি আবার ঘটবে, আমি কি আমার ক্যামেরা আর মাইক হাতে এভাবে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করতে পারবো?”
“অবশ্যই পারবেন,” একটু হেসে উত্তর দিলেন তিনি, “তবে আপনাকে ইসলামী কায়দায় হিজাব পরতে হবে।”
স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন
হোটেলের করিডোরে আমি লক্ষ্য করলাম, যখন বিদেশি নারীরা ভিন্ন পোশাকে চারিদিকে হাঁটছে, সেটা নিয়ে তালেবান প্রতিনিধিদের সেরকম মাথাব্যাথা নেই। তখন আমি ভাবছিলাম, যদি আফগানিস্তানের প্রত্যেক নারী তার ইচ্ছেমতো জীবনযাপন করতে চায়, তালেবান সেটাও এরকম সহজভাবে মেনে নেবে কীনা।
দুই পক্ষের মধ্যে দোহায় যে শান্তি আলোচনা চলছে সেখানে নারী অধিকার এবং নারী স্বাধীনতা নিয়েই সবচেয়ে কঠিন দরকষাকষি চলবে।
আফগান সরকারের যে প্রতিনিধিদল আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে, তার পাঁচজন সদস্য নারী। যাদের মুখোমুখি তাদের আলোচনার টেবিলে বসতে হচ্ছে, তাদের সবাই পুরুষ। তালেবান দাবি করছে, মেয়েদেরকে ইসলামী শরিয়া আইন অনুযায়ী চলতে হবে।
আফগান সরকারের প্রতিনিধি এই নারীদের অন্য অনেক স্পর্শকাতর বিষয়ের সঙ্গে এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতে হবে। গত দুই দশকে নারীর যে অর্জন, সেগুলোকে কি শ্রদ্ধা করা হবে? তালেবানের সময় আলোচনায় এগুলো ঘুরে-ফিরে আসবে।
তালেবান প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্যকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, নারীদের ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গী কী? তালেবানদের পক্ষে আলোচনা করছে যে প্রতিনিধিদল, সেখানে কেন একজন নারীও নেই?
“আমাদের অনেক শিক্ষিত নারী আছে; তারা পর্দার অন্তরালে কাজ করে এবং তাদের এখানে আসার সময় হয়নি,” জানালেন তিনি।
তারপর তিনি আবার বললেন, মেয়েরা যদি কাজ করতে চায়, তালেবান গোষ্ঠীর তাতে কোন আপত্তি নেই। তারা চায় মেয়েরা যেন আরামে থাকে, তাদের যেন শ্রদ্ধা করা হয়। “আপনার মতো নয়, আপনি এখানে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছেন,” রসিকতা করে বললেন তিনি।
প্রজন্মের ব্যবধান
দোহায় একটা মজার জিনিস চোখে পড়লো। এখানে তালেবানের মধ্যে দুটি প্রজন্ম। সামনের সারিতে বসে আছে খুব রাশভারী, গুরুগম্ভীর বয়স্ক নেতারা। তার বিপরীতে পেছনের সারিতে বসা তরুণ নেতারা অনেক সহজ এবং মিশুক।
তালেবান প্রতিনিধিদলের নেতা মোল্লাহ বারাাদার যখন সম্মেলন কক্ষে ঢোকেন, সাথে সাথেই যে পরিবেশটা বদলে যায় সেটা আপনি বুঝতে পারবেন। হঠাৎ যেন সবাই আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যখন তিনি থাকছেন না, তখন তালেবান প্রতিনিধিদলের সদস্যরা যেন অনেক বেশি স্বাভাবিক।
আমি তালেবান প্রতিনিধিদলের নয় জন সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিনিধিদলের তরুণ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা অনেক সহজ। তাদের পাওয়া যায় সহজে, তারা বেশ কথা বলে এবং আমি যে নারী সাংবাদিক তাতেও কিছু আসে যায় না।
কিন্তু তালেবানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তরুণদের বা নারীদের কোন ভূমিকা নেই বললেই চলে। অথচ তালেবান কিন্তু স্বীকার করে যে আজকের আফগানিস্তানের জনসংখ্যার বড় অংশই হচ্ছে তরুণ।
এই তরুণরা লেখাপড়া শিখছে। তাদের ইন্টারনেট আছে, আছে স্মর্টফোন। তাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলার অধিকার দাবি করছে তারা।
কিন্তু তাদের জন্য এখন কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে?
দোহায় আমি যা দেখে এসেছি, কিছু আশাব্যজ্ঞক ইঙ্গিত হয়তো আছে।
কিন্তু এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, দোহায় ইস্ত্রি করা পাটভাঙ্গা কাপড় পরা যে তালেবান পুরুষদের আমি দেখেছি, আফগানিস্তানের রণাঙ্গনে তার চেয়ে অনেক বিরাট সংখ্যায় আছে যুদ্ধপোশাকে সজ্জিত তালেবান। তারা সেখানে এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আফগান সরকারের বিরুদ্ধে।