ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহরের ওপর গত রাতে রুশ বাহিনী বোমাবর্ষণ করেছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় লাভিভ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, লাভিভ শহরে তিনটি সামরিক স্থাপনা এবং গাড়ির টায়ার মেরামতের দোকানের ওপর চারটি রকেট এসে পড়ে। এতে কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছে। এসময় বড় আকারের বিস্ফোরণ ঘটে এবং শহরের আকাশে ঘন কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলি উঠতে দেখা যায়।
লাভিভের সামরিক কম্যান্ডার বলছেন, কাস্পিয়ান সাগরের দিক থেকে আসা বিমান থেকে এসব রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।
ইউক্রেনে ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া রুশ অভিযানে এতদিন লাভিভের ওপর তেমন কোন বড় আক্রমণ হয়নি। তবে লাভিভে এ আক্রমণ এমন এক সময়ে হলো – যখন গত রাতেই বেশ কয়েকটি ইউক্রেনীয় শহরের ওপর রুশ বাহিনী বোমাবর্ষণ করেছে।
এ ছাড়া খারকিভ শহরে আবাসিক ভবনের ওপর রুশ বাহিনী গোলাবর্ষণ করলে অন্তত দু’জন বেসামরিক লোক নিহত হয়। রাজধানী কিয়েভেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের ভেতরে মোট ৩১৫টি লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হেনেছে।
উত্তরের খারকিভ এবং দক্ষিণের বন্দরনগরী ওডেসার কাছে মিকোলায়েভের ওপরও আক্রমণ হয়েছে।
‘মস্কভা ডুবে যাবার প্রতিশোধ?’
কিয়েভে অবস্থানরত বিবিসির সংবাদদাতা মার্ক লোয়েন বলছেন, কৃষ্ণসাগের ‘মস্কভা’ রণতরী ডুবে যাবার ঘটনার পর স্পষ্টতই এর প্রতিশোধ হিসেবে রাশিয়া প্রতিদিন ইউক্রেনের ভেতরে নানা জায়গায় বিমান হামলা চালাচ্ছে।
ইউক্রেন দাবি করেছে যে তাদের নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রই জাহাজটির ওপর আঘাত হানে, তবে রাশিয়া বলছে এক অগ্নিকাণ্ডের পরে সাগর উত্তাল থাকায় মস্কভা ডুবে গেছে।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলের ওপর পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালানোর আগে ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনাগুলোকে দুর্বল করে দেবার চেষ্টা করছে রাশিয়া।
পূর্বাঞ্চলীয় দনিপ্রোপেত্রোভস্ক এলাকার গভর্নর বলছেন, সেখানকার লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর রুশ গোলাবর্ষণে কমপক্ষে দুই ব্যক্তি আহত হয়েছে।
পূর্বাঞ্চলীয় ক্রেমিন্না শহর ছেড়ে পালানোর চেষ্টার সময় চারজন বেসামরিক লোককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ সময় আরো একজন আহত হয়।
মারিউপোলে কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না
দক্ষিণপূর্বের অবরুদ্ধ মারিউপোল শহর থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে -রুশ বাহিনী শহরটি থেকে কাউকে বের হতে বা তাতে ঢুকতে দিচ্ছে না।
শহরের মেয়রের একজন উপদেষ্ট বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে আসা-যাওয়া করতে হলে বাসিন্দাদের একটি পাস নিতে হবে, এবং কিছু লোককে হয়তো ইচ্ছের বিরুদ্ধে ধরে রাশিয়া নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
ইউক্রেনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেসচুক বলেছেন, মারিউপোল এবং অন্য শহরগুলোতে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা লোকজনকে নিরাপদে বের হয়ে যেতে দেবার জন্য রুশদের সাথে এখনো কোন ঐকমত্য হয়নি।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দেশকে রাশিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য আরো অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেবার জন্য নতুন করে আবেদন জানিয়েছেন।
রুশ টিভিতে ইউক্রেনে ধরা পড়া ব্রিটিশ যোদ্ধা
অন্যদিকে রুশ রাষ্ট্রীয় টিভিতে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হাতে ধরা পড়া দুজন ব্রিটিশ যোদ্ধাকে দেখানো হয়েছে। একটি ভিডিওতে শন পিনার নামে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ইউক্রেনিয়ান মেরিন সেনাদের পক্ষে লড়াই করার সময় মারিউপোল বন্দরে তাকে ধরা হয়।
ওই দুই ব্যক্তি তাদের মুক্ত করতে সহায়তা করার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রতি আহ্বান জানান ।
এর বিনিময়ে ইউক্রেনে আটককৃত মস্কো-পন্থী এমপি ভিক্টর মেদভেসচুককে মুক্তি দেবার কথাও বলেন তারা।
এ দুই ব্যক্তি চাপের মুখে এ বক্তব্য দিয়েছেন কিনা তা স্পষ্ট হয়নি।