চট্টগ্রামের পটিয়ায় মোর্শেদা আক্তার (২৩) নামে নয় মাসের অন্তসত্বা এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। জিনের আছরে মারা গেছেন প্রচার করে তার লাশ দাফনের ছয় দিন পর স্বামীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে পুলিশ নিহতের স্বামী মো: রফিক(৩০) ও হত্যাকাণ্ডের দুই সহযোগী মফজল আহমদ (৫০) ও তার স্ত্রী শাহিন আক্তারকে (৩০) গ্রেফতার করেছে।
এ ব্যাপারে নিহত গৃহবধূর বড় বোন হালিমা বেগম গতরাতে পটিয়া থানা একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
গত ২৪ এপ্রিল গভীর রাতে উপজেলার আশিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কমলা পাড়া মৃত মফজল মাস্টারের বাড়িতে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরদিন ২৫ এপ্রিল দুপুরে জিনের আছরে মারা গেছে প্রচার করে নিহতের লাশ কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই দাফন করা হয়। লাশ দাফনের পর থেকে গৃহবধূর মৃত্যু রহস্য নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। এক পর্যায়ে শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) সকালে এলাকাবাসী ওই তিনজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তারা পুলিশের কাছে গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন।
ওই দিন রাতেই নিহতের বড় বোন হালিমা আক্তার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন বলে নিশ্চিত করেন পটিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক মো: বোরহান উদ্দিন। গ্রেফতারকৃত তিনজনকে গতকাল ১ এপ্রিল আদালতে চালান দেয়া হয়েছে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
নিহত গৃহবধূর বড় বোন হালিমা আক্তার গতরাতে বলেন, আমাদের সাত বোনের মধ্যে মোর্শেদা ছিল সবার ছোট। ওর বয়স যখন পাঁচ মাস তখন তার মা এবং এর দুইমাস পরে বাবা আবদুস সালাম মারা যান। সাত মাসের ছোট বোনকে নিজের সন্তানের মত লালন করেন। গত বছর জুনের ১৯ তারিখে স্থানীয় উকিলের (বিয়ের উকিল) মাধ্যমে রফিকের সাথে তার বিয়ে হয়।
তিনি জানান, রফিক সীতাকুন্ডে চাকুরী করে। তার সাথে অন্য কোনো মেয়ের সর্ম্পক রয়েছে তা জানার পরেই তার বোনকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন রফিক।
তিনি আরো জানান, ঘটনার দিন ২৪ এপ্রিল রাতে বোন ও বোন জামাইর সাথে টেলিফোনে কথা হয়। প্রথম রমজানের সেহেরী খাওয়ার জন্য রাত ৩টার দিকে পুনরায় ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। ২৫ এপ্রিল সকালে মোবাইলে জানান তার বোনের জিনের আছর ছিল, জিনই মেরে ফেলেছে। এ কথা শুনে তিনি ছুটে যান।
তিনি বলেন, আমরা অসহায় ও অভাবগ্রস্ত মানুষ ছিলাম সে কারণে ওই মৃত্যু মেনে নিয়ে ছিলাম। কিন্তু ঘটনার পরে তার বোন জামাই বোনের সবকিছু বিক্রির কথা বলে তখন তাদের বাড়ি গিয়ে বোনের এক ভরি ওজনের লকেটসহ একটি চেইন ও কানের দুল গায়েব হওয়ার বিষয় নিয়ে তোলপার শুরু হয়। বিষয়টি বিয়ের উকিলকে জানানোর পর তিনি ওই তিনজনকে স্বর্ণ বের করে দেয়ার জন্য বলেন। পরে তা ড্রয়ারের মধ্যে পাওয়া যায়।
নিহতের বোন হালিমা বলেন, ওই স্বর্ণ পাওয়ার মধ্য দিয়েই এলাকাবাসীর কাছে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি পরিস্কার হয়। সাথে সাথে তাদের আটক করে পুলিশে দেয়া হয়। পরে তারা পুলিশের কাছে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেন।
পটিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক মো: বোরহান উদ্দিন বলেন, আসামি চালান দেওয়ার পর থেকে পুলিশ মামলাটিকে গুরুত্ব দিয়ে আরো অধিকতর তদন্ত শুরু করেছে বলে জানান।