কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকার গৃহবধূ রেকসোনাকে গলা কেটে হত্যা মামলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। সোমবার কিশোরগঞ্জ আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অপস) মো. তরিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে সোমবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকদের অবহিত করেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল আমিন। এ সময় সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ দাউদ উপস্থিত ছিলেন।প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ২০০৫ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের হারুয়া এলাকার তাইজুলের (৪৫) সাথে বিয়ে হয় রেকসোনার (৩৫)। বিয়ের পর থেকে তাইজুলের ভাগ্নে মামুনের সাথে মামি রেকসোনার অবৈধ সম্পর্ক গঠে ওঠে। ঘটনা জানাজানি হলে তাইজুলের সাথে রেকসোনার পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। দাম্পত্য জীববনের ১৭ বছরে তাদের ঘরে জন্ম নেয় ২ ছেলে ও ১ মেয়ে। ভাগ্নে মামুন ও মামি রেকসোনার এই অবৈধ সম্পর্ক টেরপেয়ে পরিবার মামুনকে অন্যত্র বিয়ে করিয়ে দেয়। মামুনের ঘরেও জন্ম নেয় এক সন্তান।
কিন্তু এরপরও মামুন ও মামির অবৈধ সম্পর্ক চলতে থাকে। এক পর্যায়ে মামুনের স্ত্রী চলে যায় মামুনকে ছেড়ে। এরমধ্যে মামুন ও মামি রেকসোনার সম্পর্কেও অবনতি ঘটে। মামুন মামির সাথে এ অবৈধ সম্পর্ক শেষ করতে চাইলেও মামির কারণে তা শেষ করতে পারেনি। মামুনও তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে মামিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন গত ২৩ জুলাই দুপুরে ফাকা বাসায় রেকসোনা রান্না করার প্রস্তুতি নেন। এ সময় ভাগ্নে মামুন ঘরে ঢুকে মামির সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে মামুন তার মামিকে প্রথমে ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে আঘাত করে। পরে ধারালো ছুরি দিয়ে মামিকে গলা কেটে হত্যা করে।
গত ২৪ জুলাই মামুনকে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুল আমিনের আদালতে তোলা হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে মামুন বলেন, মামির সাথে এ অবৈধ সম্পর্ক শেষ করতে চেয়েও তা শেষ করতে পারেননি। এছাড়াও মামার সাথে মামি অনেক খারাপ ব্যবহার করতো। আমি অনেক পাপ করেছি, মামিকে হত্যা করে সেই পাপ শেষ করে ফেললাম। দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামুন (৩০) কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের চরশোলাকিয়া এলাকার সোহরাব উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন রঙ মিস্ত্রী। অন্যদিকে, নিহত রেকসোনা আক্তার শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ওয়াসীমুদ্দিন ছাত্রাবাসের বিপরীতে হারুয়া এলাকার তাইজুলের স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তানের জননী।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ দাউদ জানান, ঘটনার দিন গত ২৩ জুলাই রাতেই নিহতের স্বামী তাইজুল বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা রুজু হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মামুনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি। মামলার তথ্য উপাত্ত ও সাক্ষী পাওয়ায় আদালতে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলেও জানান তিনি।