আমার বয়স যখন পাঁচ-
তখন আমার এক খেলার সাথী মেয়ে,
আমাকে দিয়েছিলো
একটি পা ভাঙ্গা মাটির পুতুল।
পা ভাঙ্গা পুতুল দেখলেই তখন তার রাগ হতো ।
দশ বছর বয়সে এক বালিকা দিয়েছিলো একটি হলুদ ঘুড়ি।
যেটি তাদের উঠোনে উড়ে এসে পরেছিলো সুতো কেঁটে।
ঘুড়িটা উঠোনের ভিঁজা মাটিতে পড়ে একটু ছিড়ে গিয়েছিলো তাই আমাকে দিয়েছিলো।
বয়স যখন আঠারো তখন এক
কিশোরী ভুল করে একটি নীল খাম দিয়েছিলো।
চিঠি লিখতে গিয়ে সে তখন কাগজ
খুঁজে পায়নি।
তাই শুধু খামের উপর আমার নাম লিখে দিয়েছিলো।
আটাশ বছর বয়সে একজন নারী- আমাকে তার চুলের নষ্ট ক্লিপ দিয়েছিলো ঠিক করে দিতে।
আমি অনেক চেষ্টা করেও ঠিক করে দিতে পারিনি।
তাই সেই ক্লিপ ফিরিয়ে নেয়নি।
তারপর আমার চল্লিশে একজন নারী দিলো
তার বারান্দায় পড়ে থাকা কিছু স্যতস্যতে দীর্ঘশ্বাস-
কড়কড়ে রোদে শুকোতে।
তখন থেকে অনেকদিন সূর্য উঠেনি,
তাই সেই স্যতস্যতে দীর্ঘশ্বাস কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।
হঠাৎ পাঁচচল্লিশে একজন নারী দিলো তার কিশোরী বয়সের কিছু
সাদা কালো ছবি-
রঙিন করে দিতে।
ভালো কারিগরের অভাবে ছবিগুলো আর রঙিন করা হয়নি।
এই সবকিছুই আমি সারাজীবন জমিয়েছিলাম একটি লাল আর হলুদ ফুল আঁকা টিনের বাক্সে।
ইদানিং হয়েছে এক যন্ত্রনা-
রাত হলেই টিনের বাক্স থেকে জল গড়িয়ে পড়ে আমার শোবার ঘরে।
পুরো ঘর কোমড় জলে ডুবে যায়।
সারারাতই এই জলে সাঁতরাতে সাঁতরাতে আমি এক সময় অবসাদগ্রস্থ হয়ে যাই।
তাই একদিন সাতচল্লিশে এসে খুব ভোর বেলায় সেই টিনের বাক্স নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছি।
সবার ঠিকানা খুঁজে ফিরিয়ে দিতে হবে সব কিছু।
আমার একটি করে কবিতা তাদের কাছে বন্ধক ছিলো।
সেইগুলো আমাকে ফিরিয়ে নিতেই হবে।
তা না হলে আমি কখনোই আর কবি হতে পারবোনা।
——————————
রশিদ হারুন
২৭/১২/২০১৯