বাংলাদেশে করোনায় দৈনিক মৃত্যু আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে৷ চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা বলছেন, ধীরে ধীরে মৃত্যুর সংখ্যা আরো কমবে৷ কিন্তু টেস্ট কমে যাওয়ায় সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে৷

বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে৷ প্রথম মৃত্যু ঘটে ১৮ মার্চ৷ এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুবরণ করেছেন দুই হাজার ৪৫৯ জন৷ যার অর্ধেকই ঘটেছে জুন মাসে৷ ৩০ জুন এক দিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জন মারা যান৷ জুন মাসে গড়ে প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৩ জনেরও বেশি৷

বাংলাদেশে জুলাই মাসের প্রথম ১৮ দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৩৭ জন, অর্থাৎ গড়ে ৪২ জন প্রতিদিন৷ তবে গত এক সপ্তাহে (১২ থেকে ১৮ জুলাই) মারা গেছেন ২৭৬ জন৷ সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৯ জন৷

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে করোনার বিশাল পিক বললে যা বুঝায় তা হওয়ার লক্ষণ নেই৷ আমার বিবেচনায় মৃত্যু এখন একটি স্থিতিশীল অবস্থায় আছে৷ এরপর হয়তো কমতে শুরু করবে৷’’

তার মতে, করোনায় বাংলাদেশে হাজার হাজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি৷ আর ঘটার আশঙ্কাও নাই৷ কারণ এরই মধ্যে অনেকের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি৷ যেসব পরিবারে কোনো একজন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে অন্য সদস্যদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে৷ কোনো বড় গবেষণা ছাড়া বলা সম্ভব নয় যে কত ভাগ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে৷ তবে আমরা দেখেছি একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের বাকি পাঁচ জনের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে৷ আবার অনেকে আছেন করোনায় আক্রান্ত হলেও সামান্য লক্ষণ প্রকাশের পর তারা এমনিতেই ভালো হয়ে গেছেন৷’’

মৃত্যু কমার বিষয়টি সবাই মানলেও প্রশ্ন উঠছে টেস্ট এবং শনাক্তের সংখ্যা নিয়ে৷ পরীক্ষা আগের তুলনায় কমেছে৷ অন্যদিকে সংক্রমণের হার বাড়ছে৷ গত মাসে যেখানে গড়ে ২০ হাজার টেস্ট হয়েছে, এখন তা ১১-১২ হাজারে নেমে এসেছে৷ আর সংক্রমণের হার এই মাসে টেস্টের ২৫ ভাগে পৌঁছেছে৷ গত মাসে যেখানে ছিলো ২০-২২ ভাগ৷

চিকিৎসকরা মনে করছেন, মানুষ সচেতন হওয়ায় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে ধারণা তৈরি হওয়ায় মৃত্যুর হার কমেছে৷ কিন্তু সংক্রমণ আগের চেয়েও দ্রুত গতিতে বাড়ছে৷ এক্ষেত্রে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো গেলে পরিস্থিতি সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা পাওয়া যেত৷

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান খান বলেন, ‘‘আমাদের ল্যাবে প্রতিদিন যে নমুনা টেস্ট করি তার ৩০ ভাগই পজেটিভ আসে৷ ফলে সংক্রমণ বাড়ছে৷ মৃত্যু হার কমার কারণ এই নয় যে সংক্রমণ কমছে৷ মুত্যু কমার কারণ মানুষের সচেতনতা ও চিকিৎসা আগের চেয়ে সহজ হওয়া৷’’

তিনি বলেন, ‘‘ফি নির্ধারণ করায় টেস্ট কিছুটা কমেছে৷ আর ভুয়া টেস্টের একটার পর একটা ঘটনা ধরা পড়ায় মানুষ করোনা টেস্টের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে৷ সব মিলিয়েই টেস্ট কমছে৷’’

অথচ বাংলাদেশের ৭০টি ল্যাবে এখন প্রতিদিন ২০ হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব৷ নেই কিট সংকটও৷ তারপরও টেস্ট অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে দ্বিতীয়বার টেস্টকেও৷

জাহিদুর রহমান এর মতে, টেস্ট বাড়িয়ে তারপর যদি দেখা যায় সংক্রমণ ধারাবাহিকভাবে কমছে তাহলে বলা যাবে করোনার প্রাদুর্ভাব কমে আসছে৷ তার আগে নয়৷