অনলাইন ডেস্ক :
মসজিদে ৫ ওয়াক্ত জামাতে ইমামসহ ৫ জনের বেশি অংশ নিতে পারবেন না। এছাড়া জুমার নামাজের ক্ষেত্রে ১০ জনের বেশি জামাত করা যাবে না। আজ দুপুরে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
আরও জানানো হয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নিজ নিজ উপাসনালয়ে না গিয়ে ঘরে প্রার্থনা করতে হবে।

ইসলামী চিন্তাবিদ ও কলামিস্ট রশীদ জামীল বলেন মানুষকে মসজিদে না যেয়ে ঘরে নামাজ পড়ে নিতে বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমগণ আনুষ্ঠানিকভাবে সাজেস্ট করেছেন। এরপরেও মসজিদমুখী মানুষের ঢল থামছে না। তাঁরা বলেছেন, এই সময়ে জুম’আ না-পড়ে ঘরে জুহরের নামাজ পড়ে নিলেও হবে, তবুও ইমানদার মুসলমান দমছে না। বিষয়টি স্পর্ষকাতর। উলামায়ে কেরামের পক্ষে এরচে বেশি কী করার আছে? তাঁরা তো আর বলতে পারেন না, ‘খবরদার! কোনো মুসলমান যেন মসজিদে না যায়’।

সরকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি বন্ধ ঘোষণা না করলেও জমায়েত সীমিত করবার কথা বলেছে। সরকারি কোনো নির্দেশনা যদি শরিয়তের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়, তাহলে সেটা মানা জরুরি। এই বিষয়ে বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের পয়েন্ট অব ভিউ সামনে রেখেই বলা যায়, সকলের উচিত এই সময়ে সরকারের নির্দেশনা এবং স্বাস্থবিধি ফলো করা।
দুই
বাংলাদেশ সরকার জরুরি সার্ভিস ছাড়া সব ধরণের ব্যবসায়িক প্রতিষ্টান বন্ধ রাখবার নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল আমরা দেখলাম লক্ষ লক্ষ মানুষ পায়ে হেঁটে ঢাকা যাচ্ছে। এরা সবাই গার্মেন্ট কর্মী। যাদের ঘামে গড়ে উঠে পুঁজিপতিদের অট্টালিকা। যাদের শ্রমে তৈরি হয় মুনাফাখোরদের ইমারত।
পরিবহণ ব্যবস্থা ডাউন থাকায় আমরা দেখলাম ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে লক্ষ মানুষ শত শত মাইল পায়ে হেঁটে যাত্রা করেছে। কেউ কেউ ট্রাক বা ভ্যানগাড়িতে গাদাগাদি করে, কেউ বাদুরঝুলা হয়ে কাজে ফিরছে। একেবারেই অরক্ষিত অবস্থায় তারা ছুটে চলেছেন তাদের কর্মস্থলের দিকে। বাংলাদেশের ৪০ লক্ষ মানুষ গার্মেন্টসে কাজ করে।
তিন
বাংলাদেশের মানুষ রাস্থায় বেরুলে আইন-শৃংখলা বাহিনি লাঠিপেটা করছে। ব্যাপারটি দৃষ্টিকটু এবং অনুচিত হলেও আমরা যারা দেশি মানুষের মেন্টালিটি জানি, তারা জানি মানুষকে ঘরে রাখতে হলে এর বিকল্প নেই। প্রশ্নহলো, এই যে মালিক-পক্ষের নির্দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল বিনা বাঁধায় রাজধানী অভিমুখে মার্চ করল, এ থেকে কি প্রমাণ হয় না সরকারের ক্লিয়ারেন্স ছিল? না থাকলে পুলিশ নীরব ছিল কেন?
এই যে লক্ষ লক্ষ গার্মেন্টস কর্মী মানুষগুলো, যাদের জীবনকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলল মুনাফাখোর গার্মেন্টস মালিকগণ, স্যোশাল ডিসটেন্সিং-এর সরকারি আদেশ অমান্য করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে যারা করোনা ঝুঁকিতে ফেলল, তাদের ব্যাপারে সরকার কি আদৌ কোনো ব্যবস্থা নেবে?
বোকার মতো একটা প্রশ্ন করে বসলাম। যেদেশের সরকারের মন্ত্রী-এমপিরাই গার্মেন্টস মালিক, অন্যকথায় গার্মেন্টস মালিকগণ যেদেশে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আসন অলংকিত করে বসে থাকেন, সেখানে কার বিচার কে করবে?
চার
বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমগণ বারবার বলছেন এই সময়ে মসজিদে ভিড় না করে ঘরে নামাজ আদায় করে নিতে। তবুও কিছু মুসলমানকে দমানো যাচ্ছে না। ব্যাপারটি নিয়ে সমালোচনা করতে করতে জিহবার ছাল উঠিয়ে ফেলছেন আমাদের সো-কল্ড সুশীল শ্রেণি। কিন্তু এই যে লক্ষ মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে তাদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলা হলো, তাদের মাধ্যমে ঢাকাবাসীকে স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে ঠেলে দেওয়া হলো, দেশের স্বাস্থ্য-সুরক্ষার নড়বড়ে দেয়ালটাকে চ্যালেঞ্জ জানানো হলো, এটা নিয়ে তথাকথিত সুশীলদের যতটা পাগল হওয়ার কথা, মাঝে তার ছিটে-ফোটোও এখনও দেখিনি! এর থেকেই কি প্রমাণ হয় না এরা অবস্থার প্রেক্ষিতে কথা বলে না, কথা বলার জন্য পছন্দের প্রেক্ষিতের অপেক্ষা করে?
পাঁচ
নিউইয়র্কের প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ আলেম মুফতি মুহাম্মাদ ইসমাইল বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের সার্বিক কর্ম-তৎপরতা নিয়ে মন্তব্য করতে যেয়ে চমৎকার একটি কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন এখন হেফাজতে ইনসান নিয়ে কাজ করা দরকার। আগে মানুষ বাঁচুক, পরে দেখা যাবে।
আমি তাঁর সুরে সুর মিলিয়ে একই সুরে বলতে চাই, বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামকে আমরা হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে দেখেছি। জাতির এই দুঃসময়ে আমরা তাদেরকে হেফাজতে ইনসানের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চাই।
করোনাকে পাত্তা না দিয়ে ইউরোপ-আমেরিকা যে ভুল করেছিল, সেই ভুলের খেশারত দিচ্ছে এখন। বাংলাদেশও সেই একই ভুল করল কি না- সেটা আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। তবে এখন থেকে আর ভুল করা যাবে না। স্বাস্থগত ব্যাপারে ডাক্তারের এবং দ্বীনি ব্যাপারে উলামায়ের কেরামের নির্দেশনা মানতে হবে। সময় খুবই নাজুক।
ছয়
মনে রাখতে হবে দুনিয়া হলো দারুল আসবাব। এই জগতকে আল্লাহপাক একটি নির্ধারিত নীতিমালার আন্ডারেই পরিচালনা করেন। আগুণের নিজস্ব ক্ষমতা নেই কাউকে পোড়াবার- এটা হলো ইমান। কিন্তু ইমান পরীক্ষা করার জন্য আগুনে হাত ঢুকিয়ে দেওয়াকে ইমানের পাওয়ার বলে না। এর নাম বোকামি।
সাত
আমরা চাই বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভয়াবহ প্রেডিকশনগুলো মিথ্যা হোক। আমরা দোয়া করি বাংলাদেশ নিয়ে তাদের সকল আশংকা ভুল প্রমাণিত হোক। সতের কোটি মানুষের দেশটি ভালো থাকুক। আর এ জন্য দুটি কাজ করতে হবে।
১. আল্লাহর উপর ভরসা করা।
২. স্বাস্থবিধি মেনে চলা।
আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।
পৃথিবীর সকল মুসলমানকে হেফাজত করুন।
পৃথিবীর সব মানুষকে হেফাজত করুন।