বাংলাপোস্ট২৪ ডেস্ক : হঠাৎই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে গত মঙ্গলবার বিএনপি-প্রধানের সঙ্গে বিএনপি নেতা হারুনুর রশীদসহ তিন এমপির সাক্ষাতের পর এ আলোচনার সূত্রপাত। এরপর গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে হারুনুর রশীদের বৈঠক হয়। যদিও তিনি বলেছেন, এলাকার কাজ নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলেছেন। বেগম জিয়ার জামিন নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানান তিনি। এরপর ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপেক্ষা করুন। শিগগিরই গরম খবর পাবেন।’ সর্বশেষ বিকালে বিএনপির চার এমপি বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহলের শেষ নেই। বেগম জিয়া কি শিগগিরই জামিন পাচ্ছেন? ঘুরেফিরে এ প্রশ্নই এখন সবার মুখে। গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমি সরাসরি প্যারোল বিষয়ে ম্যাডামকে বলেছিলাম। ম্যাডাম আমাকে বলেছেন, জামিন তাঁর হক। দেশের আইন অনুযায়ী তিনি এখনই জামিনলাভের যোগ্য। কোনোরকমের অপরাধ তিনি করেননি। সুতরাং এখানে প্যারোলের প্রশ্ন কেন?’ বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বিএনপির এমপিরা নির্বাচিত হওয়ার পর বেগম জিয়ার সঙ্গে তাদের দেখা হয়নি। তার সাক্ষাতের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু একসঙ্গে বেগম জিয়ার সঙ্গে সাতজনের সাক্ষাৎ করার অনুমতি না থাকায় দুই গ্রুপ হয়ে যান তারা। এ নিয়ে বাইরে আলোচনা হলেও ভিতরে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো উদ্যোগ নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক হলে বেগম জিয়ার জামিন যে কোনো দিন হতে পারে। আর বেগম জিয়া কোনো অবস্থাতেই প্যারোল নিতে রাজি নন। জামিনের জন্য যত দিন প্রয়োজন তত দিনই তিনি লড়াই করে যাবেন। বিএনপির আরেকটি সূত্র জানায়, হাইকমান্ডের নির্দেশেই এমপিরা সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বেগম জিয়ার জামিনের ব্যাপারে যোগাযোগ করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। প্যারোল দিতে রাজি সরকার। কিন্তু বেগম জিয়া রাজি না থাকায় দলের এমপিরাও সমঝোতার পথে এগোতে পারছেন না। বেগম জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী জামিন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। জানা যায়, চার এমপির সাক্ষাতের সময় প্যারোল প্রসঙ্গ উঠলে বেগম জিয়া তা সরাসরি নাকচ করে দেন। জামিন নিয়ে বিদেশ যাওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেছেন, জামিন তাঁর অধিকার। তিনি কোনো অন্যায় করেননি। প্যারোল নয়, জামিন নিয়েই তিনি বের হবেন। গতকাল দুপুরে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির যুগ্মমহাসচিব হারুনুর রশীদ। বৈঠকে দলপ্রধানের জামিন নিয়ে কথা বলেন তিনি। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করার জন্য ওবায়দুল কাদেরকে অনুরোধ করেন।
পরে বিএনপির এই সংসদ সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, তিনি নিজের কাজে সেখানে যান। এরপর ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে কথা বলেছেন জানিয়ে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘গতকাল যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছি, তা মন্ত্রীকে (ওবায়দুল কাদের) অবহিত করলাম। নেত্রীর জামিনের বিষয়টিও জানালাম। এটা তো দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি আমরা। কিন্তু এখন জামিনের বিষয়টি সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার জন্য বলে এসেছি। তাঁর (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ তাই দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। হারুনুর রশীদ জানান, ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীকে খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে অবহিত করবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করেছেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটু অপেক্ষা করুন, গরম খবর পাবেন। যখন জানাব তখনই বুঝবেন কী ধরনের খবর। চাঁদাবাজ, ক্যাসিনো পরিচালনাকারী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরও জোরদার হবে।’ খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জামিন পেলে খালেদা জিয়া বিদেশে যাবেন- এ কথা বিএনপির যে সংসদ সদস্য বলেছেন, তিনি (হারুনুর রশীদ) আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি আমাকেও একই কথা বলেছেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে বলেছিলেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আসলে আদালতের। আদালতকে জামিন দেওয়ার কথা আমরা কীভাবে বলব। বিচার বিভাগ তো স্বাধীন।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যখন আদালত তাঁকে (খালেদা জিয়া) জামিন দেবে, তখন পক্ষে-বিপক্ষে কথা হবে। তাঁকে জামিন দেবেন কিনা, তা বিচারকের বিষয়। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তো আমাদের কোনো বিরোধ নেই।’প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান বিএনপির এমপিরা : বেগম জিয়ার জামিন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরা। গতকাল বিকালে বিএনপির চারজন এমপি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান জি এম সিরাজ এমপি।
মঙ্গলবার বেগম জিয়ার সঙ্গে বিএনপিদলীয় তিন এমপি সাক্ষাৎ করেন। তারা হলেন উকিল আবদুস সাত্তার, হারুনুর রশীদ ও আমিনুল ইসলাম। তাদের সাক্ষাতের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গতকাল বিকালে আরও চার এমপি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা হলেন বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন, বগুড়া-৬ আসনের জি এম সিরাজ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান জাহিদ ও সংরক্ষিত আসনের রুমিন ফারহানা। ঘণ্টাখানেক তাদের এ সাক্ষাৎ হয়। এ সময় হাসপাতালের বাইরে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার ও ছাত্রদলের নবনির্বাচিত সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন।
সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে জি এম সিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, আপনি আমাদের ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) জামিনের পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আপনি আমলাতান্ত্রিক পরামর্শ না নিয়ে দয়া করে রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় আমাদের নেত্রীকে ছেড়ে দিন, জামিনের ব্যবস্থা করে দিন। আমাদের নেত্রী রাজনৈতিক বন্দী। এখানে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া ম্যাডামের মুক্তি হবে না।’
বিদেশ যাওয়ার আগ্রহের কথা খালেদা জিয়া আপনাদের বলেছেন কিনা- এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। ম্যাডামের বক্তব্য হলো, তাঁর সুচিকিৎসা হচ্ছে না। তিনি বেসরকারি কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চান।
দুই মামলায় জামিন পেলেই মুক্তি : বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে ৩৬ মামলার মধ্যে দুটি তাঁর মুক্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে উচ্চ আদালতে অবকাশকাল চলছে। ১৩ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট খোলার পরই এসব মামলায় জামিনের প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আদালতের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬ মামলার ৫টিতে দুর্নীতির অভিযোগে আছে। তা হলো জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা। এ পাঁচ মামলাই সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে (এক-এগারোর) করা। বাকিগুলো হরতাল-অবরোধে নাশকতার মাধ্যমে মানুষ হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহ, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালন ও ঋণ খেলাপের অভিযোগে বর্তমান সরকারের সময়ের। জানা যায়, জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা আপিলের বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন। এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার আইনজীবী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের একটি জামিন আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের অবকাশের পর আমরা সেই আবেদনের শুনানির চেষ্টা করব।’ জামিন পেলে খালেদা জিয়া বিদেশে যাবেন, বিএনপির একজন সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এমন কথা ম্যাডাম কখনই বলেননি। তিনি অসুস্থ। যদি চিকিৎসকরা মনে করেন তাঁর বিদেশে চিকিৎসা দরকার, সে ক্ষেত্রে যাবেন। তবে জামিন পেলেই বিদেশ যাবেন, এমন কোনো কথাই হয়নি।’
বাংলাপোস্ট২৪ /জামিল
সূত্র :বিডি প্রতিদিন