অনলাইনডেস্ক:
ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর পরই দেশের নানা প্রান্তে অভিবাসী শ্রমিকরা তাদের ঘরে ফেরানোর দাবিতে তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় এরকম হাজার হাজার শ্রমিকের জমায়েতকে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করেছে।
গুজরাটের সুরাটেও অভিবাসী শ্রমিকদের বিক্ষোভ সহিংস আকার নিয়েছে।
বিজেপি যদিও দাবি করছে, এই সব বিক্ষোভের পেছনে কোনও কোনও মহলের উসকানি বা ষড়যন্ত্র আছে – অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন এই শ্রমিকদের এখনই নিরাপদে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা না-করলে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।
বস্তুত মুম্বাইয়ের শহরতলি বান্দ্রায় মঙ্গলবার বিকেলে যেভাবে সেখানে কর্মরত ভিন রাজ্যের হাজার হাজার শ্রমিক একটি রেল স্টেশনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তা সরকারের জন্য অবশ্যই একটা বড় অশনি সংকেত।
প্রথম দফার লকডাউন মিটলেই সরকার তাদের গাঁয়ে ফেরানোর জন্য ট্রেনের ব্যবস্থা করবে – এই গুজব শুনেই তারা দলে দলে স্টেশনে এসে জড়ো হন, বিবিসিকে বলছিলেন মুম্বাইয়ের ট্যাক্সিচালক ও বান্দ্রারই বাসিন্দা গোপাল চৌধুরী।
মি চৌধুরীর কথায়, “এরা প্রায় সবাই ছিলেন উত্তরপ্রদেশ বা বিহারের লোক। তারা সবাই কোত্থেকে উড়ো খবর শুনেছিলেন তাদের বাড়ি ফেরানোর জন্য না কি ট্রেনের ব্যবস্থা হচ্ছে।”
“সেই জন্যই বান্দ্রায় হঠাৎ অত ভিড় হয়েছিল। তাদের মুখে ছিল একটাই কথা – বাড়ি গেলে অন্তত দুটো তো খেতে পাব, এখানে তো না-খেতে পেয়ে মরার দশা!”
“আর মুম্বাইতে সরকার যে চাল-ডালের ব্যবস্থা করেছে তা কিন্তু লোকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছচ্ছে না। যারা এগুলো বিলিবন্টনের দায়িত্বে, তারাই এর অর্ধেক সরিয়ে ফেলছেন!”, জানাচ্ছেন গোপাল চৌধুরী।
মুম্বাইয়ের অসংখ্য অভিবাসী শ্রমিকের সঙ্গে এই সঙ্কটে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন মানবাধিকার কর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট কবিতা কৃষ্ণন।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “এরা কিন্তু শুধু করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ক্যারিয়ার নন, এখানে মানবিক দিকটাও দেখতে হবে – এরা এমন কিছু অসহায় মানুষ যারা পরিবারের কাছে ফিরতে মরিয়া।”
“শহরে তারা শখ করে আসেননি, আর শহরে যখন কোনও রোজগার নেই তখন তাদের এক মুহুর্তও সেখানে থাকা বিলাসিতা।”
“সেখানে দিনের পর দিন – লকডাউন থেকে কোনও এক্সিট স্ট্র্যাটেজিরও আভাস নেই, এই পরিস্থিতি মেনে নেওয়া যায় না।”
তবে বান্দ্রায় জড়ো হওয়া শ্রমিকদের মধ্যে বেশির ভাগই যেহেতু ছিলেন মুসলিম, তাই অনেকে এর মধ্যে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণও খুঁজে পাচ্ছেন।
মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাডনভিস তো যুক্তি দিচ্ছেন – এই বিক্ষোভ কিছুতেই স্বত:স্ফূর্ত হতে পারে না।
তিনি বলছেন, “এই শ্রমিকরা যে স্টেশনে জড়ো হয়েছিলেন সেখান থেকে দূরপাল্লার কোনও গাড়ি ছাড়ে না – আর এত বছর মুম্বাইতে থাকার সুবাদে সেটা তারা নিশ্চয় খুব ভাল করে জানেন।”
“তা ছাড়া ছবিগুলো ভাল করে খেয়াল করুন, তাদের কারও সঙ্গে কোনও ব্যাগ পর্যন্ত নেই – অথচ তারা না কি বাড়ি ফেরার জন্য বেরিয়েছেন।”
“হঠাৎ করে এত লোক জড়ো হয়ে গেল, পুলিশ কিছু টেরও পেল না – এটাও তো খুবই আশ্চর্যের!”
তবে উসকানি বা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব দিয়ে অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ যে ঢাকা দেওয়া যাবে না, সরকারও তা উপলব্ধি করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই বিশেষ সার্কুলার জারি করে গ্রামীণ এলাকার বহু শিল্পকে যে আজ লকডাউন থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেটাও অনেকটা সে কারণেই।
কবিতা কৃষ্ণন মনে করেন, এখন ফসল কাটার মৌশুমে গ্রামে ফিরতে পারলে শ্রমিকরা কাজ পাবেন – ফলে তাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করাটা খুব জরুরি।
তার কথায়, “এই শ্রমিকরা বিশ্বাস করেন গ্রামে ফিরতে পারলে একটা সামাজিক সুরক্ষা নেটওয়ার্ককে তারা খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে পারবেন।”
“অন্তত চেনা লোকজন পাবেন, নিজের ভাষায় কথা বলা মানুষদের পাবেন, ক্ষেতে হয়তো কাজও জুটে যেতে পারে – শহরে তো তার কোনওটাই এই মুহুর্তে মিলছে না!”
এই লকডাউনের মধ্যেও গুজরাট সরকার হরিদ্বারে আটকে পড়া তাদের রাজ্যের পর্যটকদের লাক্সারি বাসে করে ফিরিয়ে এনেছে।
ভারতে অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, সেটা যদি সম্ভব হয়, তাহলে করোনাভাইরাসের উপসর্গ পরীক্ষা করে এই শ্রমিকদেরও বিশেষ ট্রেন বা বাসে করে তাদের নিজ নিজ রাজ্যে ফেরানোর ব্যবস্থা করা উচিত।
সূত্র:বি বি সি বাংলা