অনলাইনডেস্ক:

বাংলাদেশে বিরোধীদল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই এক মাস ধরে তিনি ঢাকায় তাঁর গুলশানের বাসভবনে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।

তাঁর বোন সেলিমা ইসলাম বিবিসিকে জানিয়েছেন, তিনি সহ পরিবারের দু’জন সদস্য, একজন গৃহকর্মী এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছাড়া আর কাউকে মিসেস জিয়ার কাছে যেতে দেয়া হচ্ছে না।

বিএনপি নেতারা বলেছেন, পারিবারিক পরিবেশে খালেদা জিয়া এখন মানসিকভাবে স্বস্তিতে থাকলেও তাঁর আথ্রাইটিস ও ডায়াবেটিস সহ জটিল সব রোগের বিষয় বিবেচনা করে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়াবহ বিশ্ব পরিস্থিতিতে সতর্কতা হিসেবে তাঁকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

দুর্নীতির দু’টি মামলায় সরকারের নির্বাহী আদেশে বিএনপি নেত্রীর সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে গত ২৫শে মার্চ তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়।

এর পরদিন থেকেই বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি দিয়ে অঘোষিত লকডাউন শুরু করা হয়েছিল করোনাভাইরাসের দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে।

তিনি মুক্তি পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে তাঁর গুলশানের বাসায় ওঠেন।

সেই থেকে ৭৫ বছর বয়স্ক বিএনপি নেত্রী চিকিৎসকের পরামর্শে বাসার দোতলায় কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

সেখানে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলামসহ পরিবারের দু’জন সদস্য পালাক্রমে গিয়ে তাঁর দেখাশোনা করছেন। এর বাইরে শুধু ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা যেতে পারছেন।

সেলিমা ইসলাম বলেছেন, ডায়াবেটিস এবং আথ্রারাইটিসসহ আগের জটিল রোগগুলোর কোন উন্নতি না হওয়ায় তাঁকে এখনও কোয়রেন্টিনে রাখা হয়েছে।

“বাসায় ডাক্তাররা এসে চিকিৎসা দিচ্ছে তাঁকে। সে অনুযায়ী চিকিৎসা হচ্ছে। তাঁর শারীরিক অবস্থার এখনও তেমন কোন উন্নতি হয় নাই।

”যে কারণে সে কোথাও বের হচ্ছে না এবং তাঁর কাছে কাউকে অ্যালাউ করা হচ্ছে না। সে কোয়রেন্টিনে আছে এখনও,” বলছেন সেলিমা ইসলাম।

সেলিমা ইসলাম আরও বলেছেন, “কেবলমাত্র সন্ধ্যায় মাগরিবের পর আমি যাচ্ছি। আমি তাঁর বোন। আমি যাই সন্ধ্যায়। তখন তাঁর সাথে আমি কথা বলি এবং তাঁকে দেখাশোনা করি। আর সকালে আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী গিয়ে দেখাশোনা করেন। আর গৃহপরিচারিকা ফাতেমা তো সর্বক্ষণিক দেখাশোনা করছে। এর বাইরে কাউকে যেতে দিচ্ছি না।”

তিনি জানিয়েছেন, কোয়ারেন্টিনে খালেদা জিয়া তাঁর দু’জন পুত্রবধু এবং নাতনীদের সাথে টেলিফোনে নিয়মিত কথা বলছেন। এছাড়া তিনি নিয়মিত নামাজ পড়েন এবং টেলিভিশন দেখে ও বই পড়ে সময় কাটাচ্ছেন।

এখন খালেদা জিয়া রোজা রাখতে আগ্রহী এবং সেজন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার।

মুক্তি পাওয়ার পর খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায় ওঠেন। সেখানেই তিনি কোয়ারেন্টিনে আছেন।
মুক্তি পাওয়ার পর খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায় ওঠেন। সেখানেই তিনি কোয়ারেন্টিনে আছেন।

তবে বিএনপি নেত্রী তাঁর পরিবারের সীমিত সংখ্যক সদস্য এবং চিকিৎসকের বাইরে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে দেখা করছেন না। তিনি রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখন করোনাভাইরাসের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তাদের নেত্রীর পুরোনো রোগের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দল থেকেই তারা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন।

“যেহেতু তাঁর বয়স এবং আগের রোগ যা আছে, সেজন্য তিনি এখনকার পরিস্থিতিতে ঝুঁকিপূর্ণ। সেজন্য চিকিৎসকরা বলেছেন যে, এখন তাঁর সাথে কাউকে দেখা করতে দেয়া ঠিক নয়। এমনকী আত্নীয়স্বজনরাও সবাই তাঁর সাথে দেখা করতে পারেন না। খুবই সীমিত পর্যায়ে কয়েকজন দেখাশোনার জন্য যেতে পারেন। তাও তারা যান দূরত্ব বজায় রেখে এবং প্রিকশন নিয়ে।”

“সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরাও যাচ্ছি না। কারণ আমরা বাইরে থেকে যাব এবং রোগ ক্যারি করতে পারি। এটা ঠিক হবে না। তবে প্রথম দিন এসেই তিনি বলেছিলেন যে করোনাভাইরাসের যে আক্রমণ শুরু হয়েছে, তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তাতে উনার বার্তা ছিল, ধৈর্য ধরতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং নিরাপদ থাকতে হবে।”

ঢাকায় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড রয়েছে।

লন্ডন থেকে তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান চিকিৎসার তত্বাবধান করছেন এবং লন্ডনেরই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা চালানো হচ্ছে।

তাঁর একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বোর্ডের অন্য সদ্যস্যদের সাথে দু’দিন আগে গত মঙ্গলবার বাসায় গিয়ে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন।

মি: হোসেন বলেছেন, খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস এখনও অনিয়ন্ত্রিত থাকছে।

তিনি উল্লেখ করেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে এখনকার অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না এবং সেজন্য একটা রুটিন চিকিৎসা চালানো হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের নেত্রী এখন মানসিকভাবে কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও অসুস্থতার উন্নতি সেভাবে হয়নি।

“যে শর্ত উনাকে দিয়েছে যে বিদেশে যাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে আমরা যা করতে পেরেছি, তা হলো, উনি বাসায় যাওয়ার পরে চিকিৎসকরা তাঁকে কোয়ারেন্টিনে রাখেন। ঢাকায় চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে বিলেতের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে চিকিৎসাপত্র দিয়েছেন।

”এখনও তা অনুসরণ করা হচ্ছে। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বাসায় গিয়ে দু’বার তাঁকে দেখেছেন। তাঁর ইমপ্রুভমেন্ট খুব একটা হয়নি। এককথায় বলতে হলে তিনি স্বাস্থ্যগতভাবে ভাল নেই, ” বলেছেন মি. আলমগীর।

জিয়া অরফানেজ এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্ট-এই দু’টি দুর্নীতির মামলায় বিএনপি নেত্রী দুই বছর কারাবাসের শেষ বছরটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তাঁর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শর্তসাপেক্ষে সরকারের নির্বাহী আদেশে তিনি মুক্ত রয়েছেন।

সূত্র:বি বি সি বাংলা