বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত এক চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যদের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর তাদের বাড়ি থেকে সরিয়ে হাসপাতালে স্থানান্তর করার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করার ঘটনা ঘটেছে।
ওই চিকিৎসকের বাড়ি থেকে কয়েকজনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে আসা হাসপাতালের গাড়ি আটকে মঙ্গলবার সকালে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় লোকজন।
ঘটনাটি ঘটেছে ফতুল্লা থানার অন্তর্ভূক্ত এলাকায়।
নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার শিল্পী আক্তার বলেন, “আমাদের পরিবার নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা। আমরা ভাবতেই পারিনি এখানে আমাদের সাথে এই ব্যবহার করবে কেউ।”
বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান, ঘটনার সূত্রপাত সোমবার রাতে, যখন এলাকার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে যে তার পরিবারের বেশ কয়েকজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
যা ঘটেছিল
জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নিয়মিত ডিউটি করছেন চিকিৎসক শিল্পী আক্তার।
তিনি জানান, তার বাসা যে এলাকায় তার কয়েকটি বাসা পরেই তার বাবার বাসা হওয়ায় তিনি নিয়মিত সেখানে যাওয়া আসা করতেন। সপ্তাহ দু’য়েক আগে তার ভাইয়ের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়।
“আমার নিয়মিত হাসপাতালে কাজ করতে হয়, আর আমার ভাই হাসপাতালে আমার খাবার দিয়ে আসতো। সেখান থেকেই তার মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে বলে ধারণা করছি।”
তার ভাইকে ঘরে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল এবং তার বাবার বাড়ি সে সময় থেকেই লকডাউন করা হয়েছিল বলে জানান শিল্পী আক্তার।
“গত বৃহস্পতিবার আমার পরিবার ও বাবার বাড়ির বেশ কয়েক জনের নমুনা পরীক্ষা করতে দেয়া হয়। পরীক্ষার ফল হাতে আসে সোমবার (২৭শে এপ্রিল), যেখানে পরিবারের মোট ১৭ জনের করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে।”
শিল্পী আক্তার জানান, এই খবরে তিনি প্রাথমিকভাবে কিছুটা ভেঙে পড়েন। কিন্তু তার চেয়েও অবাক হন পরদিন তার পরিবারের প্রতি এলাকাবাসীর আচরণে।
“মঙ্গলবার সকালে হাসপাতাল থেকে গাড়ি আসে পরিবারের আরো কয়েকজনের নমুনা নিতে। তখন প্রায় এক-দেড়শো’ মানুষ হাসপাতালের গাড়ি আটকে রাখে। তারা দাবি করে, করোনাভাইরাস আক্রান্ত পুরো পরিবারকে এলাকা থেকে সরিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।”
ওই সময় এলাকার লোকজন প্রায় মিনিট দশেক হাসপাতালের গাড়ি আটকে রাখে বলে জানান শিল্পী আক্তার।
তিনি বলেন, হাসপাতালের গাড়ি চলে যাওয়ার পরও তার এবং তার বাবার বাড়ির আশেপাশে মানুষজন জটলা করে ছিল।
এরপর দুপুরের দিকে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসে লোকজনকে বুঝিয়ে নিজেদের বাড়িতে ফেরত পাঠায় বলে জানান তিনি।
“উপজেলা নির্বাহী অফিসার লোকজনকে বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আমার পরিবারের তত্বাবধানে রয়েছে। তারা যেন ভিড় করে ঝুঁকি না বাড়িয়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফেরত যান – সেই অনুরোধ করেন ইউএনও।”
এরপর সন্ধ্যায় স্থানীয় থানার পুলিশ শিল্পী আক্তারের পরিবারের খোঁজ খবর নিতে এলে কিছু মানুষ তখনও জড়ো হয়ে বিক্ষোভ জানানোর চেষ্টা করে। ওই সময় পুলিশ মানুষজনকে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠায়।
তবে পরিবারের ১৭ জন আক্রান্ত হলেও শিল্পী আক্তারের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। এরই মধ্যে দু’বার তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
প্রশাসন যা বলছে
ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন বিবিসি বাংলাকে জানান, শিল্পী আক্তারের বাবার বাড়ি শুরুতে লকডাউন করার পরও ওই বাড়ির একজন সদস্য মাঝেমধ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার কারণে আগে থেকেই স্থানীয় লোকজনের মধ্যে অসন্তোষ কাজ করছিল।
তিনি বলেন, “ওই বাড়ির একজন সদস্য করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন তা ২২ তারিখে নিশ্চিতভাবে জানার পর ওই বাড়ি লকডাউন করা হয়। কিন্তু তারপরও বাড়ির একজন বয়স্ক বাসিন্দা দু’একদিন বাড়ির বাইরে বের হওয়া এবং আশেপাশে যাওয়ার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ তৈরি হয়।”
তিনি আরও বলেন, এরপর যখন পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে, তখন স্থানীয়দের মধ্যে কিছুটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
তবে সাময়িকভাবে স্থানীয় জনগণ কিছুটা প্রতিবাদ করলেও পরবর্তীতে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করার পর মানুষ আশ্বস্ত হয়ে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যায় বলে জানান ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
সূত্র:বি বি সি বাংলা