বাংলাদেশে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে শুক্রবার আরও দু’জন রোহিঙ্গার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

এনিয়ে দুই দিনে তিনজন রোহিঙ্গা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলো।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা: মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, এই তিনজন কতুপালং শরণার্থী শিবিরের একই ব্লকে থাকতেন এবং সেই ব্লকের ১২শ পরিবারকে এখন লকডাউন করা হয়েছে। এই ব্লকে ১২০০ পরিবারে পাঁচ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস।

কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে প্রথম একজন রোহিঙ্গার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গতকাল বৃহস্পতিবার। তাকে শনাক্ত করার সাথে সাথেই সেখানে একটি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার হাসপাতালে আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া হয়।

উখিয়ায় কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে কোভিড রোগী শনাক্ত হবার পর আজ শুক্রবার বাজার এলাকায় জড়ো হন শরণার্থীরা। ছবি ১৫ই মে ২০২০
উখিয়ায় কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে কোভিড রোগী শনাক্ত হবার পর আজ শুক্রবার বাজার এলাকায় জড়ো হন শরণার্থীরা।

কুতুপালং শিবিরের যে ব্লকে প্রথম এই রোহিঙ্গাকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়, সেই ব্লকেই করোনাভাইরাসের উপসর্গ রয়েছে, এমন দু’জনকে পরীক্ষা করার পর শুক্রবার তাদের কভিড-১৯ ধরা পড়েছে।

সিভিল সার্জন ডা: মাহবুবুর রহমান বলেছেন, “আমরা গতকাল যে রোগী পেয়েছি, তাকে আইসোলেশনে নেয়ার পাশাপাশি, তার পরিবারের ছয়জন সদস্যকে শিবিরের বাইরে কোয়রেন্টিনে রেখেছি। আর উনি যে ব্লকে ছিলেন, সেই ব্লকের আরও দু’জন রোহিঙ্গা শনাক্ত হওয়ার পর তাদেরকেও আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। ব্লকটিতে ১২শো রোহিঙ্গা পরিবারকে একেবারে লকডাউনে রাখা হয়েছে। মানে সেখানে পাঁচ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা থাকছে।”

তবে বৃহস্পতিবার প্রথমে দু’জন রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করার কথা বলা হয়েছিল।

কুতুপালংয়ে কোভিড আক্রান্ত ধরা পড়ার পর লাউডস্পিকারে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। ছবি ১৫ই মে ২০২০
কুতুপালংয়ে কোভিড আক্রান্ত ধরা পড়ার পর লাউডস্পিকারে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে।

সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার শনাক্তদের একজনের ঠিকানা ভুল থাকায় তাকে রোহিঙ্গা হিসাবে ধারণা করা হয়েছিল। পরে তা তারা সংশোধন করেছেন। ফলে এখন বৃহস্পতিবার একজন রোহিঙ্গা এবং শুক্রবার দু’জন মিলিয়ে দুদিনে মোট তিনজন রোহিঙ্গা শরণার্থীর কোভিড-১৯ শনাক্ত হলো।

তিনি জানিয়েছেন, উখিয়া এবং টেকনাফ সব মিলিয়ে ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরকে ঘিরেই সেনাবাহিনী এবং পুলিশ র‌্যাবের নজরদারি কঠোর করা হয়েছে। এসব শিবিরে প্রবেশে এবং বের হওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হয়েছে।

শিবিরগুলোতে গাদাগাদি করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাস করেন, সেখানে পরীক্ষা ব্যাপকভাবে করা হবে কি না- সেই প্রশ্নে সিভিল সার্জন ডা: মাহবুবুর রহমান বলছিলেন, “১১লক্ষ রোহিঙ্গা সেখানে। এত সংখ্যক মানুষের মাঝে র‌্যানডম পরীক্ষা না করে সূত্র ধরে ধরে পরীক্ষা করবো।

”যেমন এই তিনজন শনাক্ত হলো। এখন এই তিনজনের কন্টাক্ট ট্রেসিং করা হবে। অর্থাৎ তারা শিবিরে যাদের সাথে মিশেছে, সেগুলি আমরা খুঁজে খুঁজে তালিকা করছি। তাদের আমরা পরীক্ষা করবো। এর সাথে যাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা যাবে, সেগুলোও আমরা পরীক্ষা করবো,” জানান ডা: মাহবুবুর রহমান।

রোহিঙ্গা শিবিরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় সেখান কর্মরত আন্তর্জাতিক এবং দেশী সাহায্য ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে শংকা দেখা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক ও দেশী সাহায্য ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সংগঠন আইএসসিজি-র পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে সরকার এবং মানবিক ত্রাণ সংস্থাগুলো শরণার্থী শিবিরে সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

সূত্র:বি বি সি বাংলা