কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরায় প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে প্রতিবেদনের সাথে সংশ্লিষ্ট চার জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আবেদন শুনানি শেষে তা ফেরত দিয়েছে আদালত।
ফলে এই আবেদনের প্রেক্ষিতে আর কোন মামলা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে মামলার আবেদনকারী বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি মশিউর মালেক জানান, আদালত বলেছে যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়েরের জন্য সরকারের অনুমোদন থাকার দরকার হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন না থাকার কারণে আবেদনটি বাতিল করার কথা জানানো হয়।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, আদালত বলেছেন যে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কোন মামলা করতে হলে সরাসরি সরকার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করতে হয়।
তিনি বলেন, তবে কোন ব্যক্তি যদি মামলা করতে চায় তাহলে তাকে সরকারের কাছ থেকে আগেই অনুমতি নিতে হবে যে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করতে পারবেন কিনা।
“যদি সরকার অনুমতি দেয় তাহলেই কেবল কোন ব্যক্তি মামলা করতে পারবেন। এছাড়া নয়।”
সেকারণেই মামলার আবেদনটি আদালত আমলে না নিয়ে বাদী বরাবর ফেরত দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে যে, বাদী সরকারি কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়েই মামলার আবেদন করেছেন।
তবে বাদী যদি অনুমোদন নিয়ে আবার নতুনভাবে মামলাটি দায়ের করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে কোন বাধা থাকবে না বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে মামলার আবেদনকারী মশিউর মালেক জানান, তিনি মামলাটি করার বিষয়ে অনুমোদন নিতে সরকারের সাথে যোগাযোগ করবেন। সরকার অনুমোদন দিলে তিনি সেটি নিয়ে মামলাটি আবার দায়েরের আবেদন করবেন। আর যদি অনুমোদন না দেয় তাহলে তিনি আর আবেদন করবেন না।
এরআগে ১৭ই ফেব্রুয়ারি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটির আবেদন করেন মশিউর মালেক।
আবেদনে তিনি অভিযোগ এনেছিলেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান এবং তার ভাইদের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন আল জাজিরায় প্রচার করে রাষ্ট্র এবং সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
আবেদনে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় তারা হলেন, ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল, হাঙ্গেরি প্রবাসী বাংলাদেশি জুলকারনাইন সামি এবং আল জাজিরার ডিরেক্টর জেনারেল ও প্রধান সম্পাদক মোস্তেফা স্যোয়াগ।
মামলার আবেদনকারী বলেছেন যে, তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন সামি এবং ডেভিড বার্গম্যানের তৈরি করা ষড়যন্ত্রমূলক একটি প্রতিবেদন যেটার মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত এবং উস্কে দিয়ে বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, সেই প্রতিবেদন আল জাজিরা কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেছে। যার কারণে আলজাজিরার প্রধান সম্পাদকও একই অভিযোগে অভিযুক্ত।
মি. মালেক বলেন, সে হিসেবে এই চারজনসহ এদের নেপথ্যে মদদদাতা, অর্থযোগানদাতাসহ তাদের সবার বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উদঘাটন করে কারা কারা জড়িত তা বের করে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এটাই ছিল তাদের মূল বক্তব্য।
গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার এ মামলার শুনানি অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও পরে তা পিছিয়ে ২৩শে ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন বা অনুমতির প্রয়োজন হয়।
গত ১লা ফেব্রুয়ারি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামের এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রচারের পর থেকে এখন পর্যন্ত এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক চলছে।