বাংলাপোস্টঃ (রাজর্ষি রায়, জার্মানী থেকে)
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মিলবন্ধনে জার্মানির রাজধানী বার্লিন ইউরোপের এক গুরুত্বপূর্ণ শহর।কত বিখ্যাত কিছুইনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই শহরের অলিতে গলিতে- আছে স্প্রি-নামের নদী, বার্লিন ক্যাথেড্রাল, পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানিকে ভাগ করা ঐতিহাসিক বার্লিন-দেয়াল, জার্মানির পার্লামেন্ট-রাইখসটাগ, দ্বিতীয় বিশবযুদ্ধের ক্ষত বুকে নিয়ে দাড়িয়ে থাকা মিউজিয়ামগুলো আরও কতকিছু ।
এই বিশাল বার্লিন এবং আশেপাশের ব্রান্ডেনবুর্গ এলাকায় কম করে হলেও চল্লিশের বেশি প্রাক্তন সাস্টিয়ানদের বাস। প্রবাস জীবনে কর্মব্যস্ততায় সবার সাথে সবার দেখা হয়ে ওঠে না সবসময়। এই দূরত্ব ঘুচিয়ে দিতে আর আবারও পুরনো দিনের ক্যাম্পাস লাইফের সুখকর স্মৃতিগুলো ফিরিয়ে আনতে ১১ ই সেপ্টেম্বর শনিবার জার্মানির রাজধানী বার্লিন শহরের লিস্টেনবার্গে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা।
দুপুর একটার দিকে একে একে সবাই জড়ো হতে থাকে লিষ্টেন বার্গ পার্কের সবুজ ঘেরা মাঠে। ধুমায়িত চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সবার মুখে মুখে ক্যাম্পাসের সেই পুরানো দিনের গল্প ।একে একে সেই নয়নাভিরাম এক কিলো, দৃষ্টিনন্দন ছোট্ট টিলার উপর শহীদ মিনার , হল , হ্যান্ডবল মাঠ, ক্লাসমেট, টং, শিকড়, নোঙ্গর -মাভৈ সুপা, রিম সহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর গল্প যেন থামতেই চায়না। হাসিখুশি আনন্দ আড্ডায়, খানিক খুনসুটি, যেন নিখাদ ক্যাম্পাসের সেই কবির কিংবা মাসুক মামার টং এর আবহ ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এরই মাঝে নেমে আসে ঝুম বৃষ্টি যেন মনে করিয়ে দেয় বৃষ্টিতে এক কিলোতে হাঁটার স্মৃতিময় পুরানো দিনগুলো। কে কোথায় আছে, কেমন আছে এইসব জিজ্ঞাসাই যেন ঘুরে ফিরে আসে। যেন মনে হয় এইতো সেদিন! আবার যদি ফিরে যাওয়া যেত ক্যাম্পাসের শুরুর সেই পুরানো দিনগুলোতে । আড্ডা শেষে দুপুরে পরিবেশন হয় দেশি খাবার ।
মধ্যাহ্ন ভোজের পর শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীদের ফটোসেশন ও পরিচয় পর্ব।
এরপরই শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্ব । এতে দরাজ কন্ঠে গান গেয়ে শোনান ক্যাম্পাসের সবার প্রিয় মুখ পলাশ। গানের সাথে সবাই সুর মিলিয়ে গেয়ে ওঠে ” আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম।” সবাই যেন মুহুর্তের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল পুরনো দিনের টানে।।
এই জমায়েতের অধিকাংশই জার্মানিতে মাস্টার্স করতে এসেছে। পাশের কটবুস শহর থেকে এসেছিল সি,ই,পি এর রিয়াসাত, বিবিএর আসিফ, ইউরোপা ইউনিভার্সিটি ভায়েদ্রিনা এ পড়া এন্থ্রোপলোজির সৌমেন, সুদূর ব্রেমেন শহর থেকে সি, ই, সি বিভাগের মুকুল ছাড়াও ছিল তৌহিদ,নওশাদ, পার্থ, রাতুল, আনোয়ার, নোমান, কামাল সহ গোটা চল্লিশ জন। সদ্য বার্লিনে শশী কিংবা হিমেলে মত অনেকেই করছেন চাকরি বাকরি। বাংলাদেশ থেকে অনেক সাস্টিয়ান কম্পিউটার সায়েন্স গ্রাজুয়েট এসেছে সরাসরি চাকরি নিয়ে। আর শামীমের মত পুরোদস্তুর সংসারী, সাস্টিয়ানদের সঙ্গে গুটি গুটি পায়ে এসেছিল সেকেন্ড জেনারেশন।
মিলনমেলা অনুষ্ঠানের আহবায়ক ও পরিচালনার দায়িত্ব ছিলেন জার্মানিতে অবস্থানরত প্রাক্তন সাস্টিয়ানদের সংগঠন সাস্টিয়ান জিই এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সবার প্রিয়মুখ রসায়ন বিভাগের ৫ম ব্যাচের ছাত্র ডঃ নিধু লাল বণিক, সবাই কাছে ওনি নিধু দা হিসেবে পরিচিত ।বর্তমানে তিনি একজন পরমানু বিজ্ঞানী হিসেবে ইউরোপিয়ান কমিশনে কর্মরত । সমাপনী বক্তব্যে তিনি অনুষ্ঠান সফল করার জন্য উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। ভবিষ্যতে সাস্টিয়ান বন্ধনকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে বড় পরিসরে এ ধরনের মিলনমেলা আয়োজনের আশা ব্যক্ত করে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়।
গ্রাফিতির নগর বার্লিনে ধীরে সন্ধ্যা ঘনায়, একরাশ আনন্দ নিয়ে একসময় সবাই পা-বাড়ায় ঘরের পানে। ফিরতে ফিরতে কানে বেজে ওঠে- পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়। ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়!
লেখক : রাজর্ষি রায়,
পোস্ট ডক্টরিয়াল ফেলো , কলয়েড কেমিস্ট্রি
বার্লিন পোস্টডেম বিশ্ববিদ্যালয় , বার্লিন , জার্মানী