পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে প্রবাসে যেতে চেয়েছিলেন মো. জুয়েল (৩০)। সে জন্য আস্থা রেখেছিলেন নিজের ফুফু ও ফুফাতো ভাইয়ের প্রতি। জুয়েলের ফুফাতো ভাই আওলাদ হোসেন বলেছিলেন, তিনি থাকেন সিঙ্গাপুরে। জুয়েলকেও সেখানে শ্রমিক ভিসায় নেওয়ার সুযোগ আছে। ধারদেনা করে ভিসা ও উড়োজাহাজের টিকিটের জন্য আওলাদকে চার লাখ টাকা দেয় জুয়েলের পরিবার। এরপর সিঙ্গাপুরে যাওয়ার জন্য ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন জুয়েল। বিমানবন্দরের দুটি ফটক পেরিয়ে তিনি ‘সিঙ্গাপুরে’ থাকা ফুফাতো ভাই আওলাদকে দেখতে পান। তখনই সন্দেহ জাগে, তবুও আওলাদের সঙ্গে উড়োজাহাজে চেপে বসেন তিনি। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর ফ্লাইটটি থামে আরেকটি বিমানবন্দরে। জুয়েল তখন বুঝতে পারেন, সিঙ্গাপুরের কথা বলে তাঁকে আনা হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
এমন অভিনব প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন ইউনিয়নের বটগাছতলা এলাকার বাসিন্দা শহীজল মাঝির ছেলে মো. জুয়েলের সঙ্গে। এ ঘটনায় ৯ মে লক্ষ্মীপুর জজ আদালতে প্রতারণার মামলা করেছেন জুয়েলের বাবা শহীজল। মামলায় আসামি করা হয়েছে শহীজল মাঝির বোন আলেয়া বেগম, ভাগনে আওলাদ হোসেন, আওলাদের শ্যালক সানী, ভাগনির স্বামী শামীম, ভাগনের স্ত্রী আয়েশাসহ ছয়জনকে। আওলাদ হোসেন ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের কুতুবা গ্রামের পল্লি পশুচিকিৎসক বশির আহমেদের ছেলে।বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
মামলার আইনজীবী মুনসুর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আদালত মামলাটি গুরুত্বসহকারে দেখেছেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
প্রতারণার শিকার জুয়েল বলেন, গত ২৮ এপ্রিল ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুই গেট অতিক্রম করার পরপরই তাঁর সঙ্গে ফুফাতো ভাই আওলাদের দেখা হয়। কিন্তু তাঁর সিঙ্গাপুর থাকার কথা ছিল। তাঁকে দেখে সন্দেহ হয়। তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে সে আমাকে ভয় দেখিয়ে প্লেনে উঠতে বাধ্য করে। প্লেন ছেড়ে দেওয়ার ঘণ্টাখানেক পর চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে গিয়ে অবতরণ করে। সেখান থেকে শামীম নামের এক ব্যক্তি আমাকে নিয়ে হোটেলে ওঠে। হোটেলকক্ষে নিয়ে আওলাদ ও শামীম মিলে আমাকে অস্ত্র দেখিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখায় এবং তাদের কথামতো চলার নির্দেশ দেয়। আমার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বাড়িতে ফোন করে সিঙ্গাপুর পৌঁছেছে বলে আমার বাবার কাছে জানাতে বলে। এরপর তাঁরা সিঙ্গাপুরের পরিচয়পত্রের জন্য আমার বাবার কাছে আরও দেড় লাখ টাকা দাবি করে।’বিজ্ঞাপন
জুয়েল দাবি করেন, ‘সুযোগ পেয়ে আমি হোটেলের এক ব্যক্তির ফোন থেকে বাড়িতে ফোন দিয়ে ঘটনাটি খুলে বলি। এর কিছুক্ষণ পর আওলাদ ও শামীম আমাকে সেখান থেকে বাসে করে ঢাকার সায়েদাবাদ নিয়ে এসে তারা লাপাত্তা হয়ে যায়। আমি বাড়িতে ফিরি। আমি পুরোপুরি প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমি এর বিচার চাই।’
জুয়েলের বাবা শহীজল মাঝি বলেন, ছেলেকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাবেন, এমন আশ্বাস দিয়ে তাঁর বাড়িতে স্বজনসহ দীর্ঘদিন মেহমান হিসেবে ছিলেন বোন আলেয়া বেগম। এ সময় ছেলেকে সিঙ্গাপুর নেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে চার লাখ টাকা নেন। পরে গত ২৮ এপ্রিল সিঙ্গাপুরের ফ্লাইটের কথা বলে জুয়েলকে উড়োজাহাজে চড়িয়ে ঢাকার বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রামের বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, ‘জুয়েলকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার ভিসা বাবদ আমার বোন প্রথমে ১২ লাখ টাকা দাবি করে। পরে ৯ লাখ টাকায় সমঝোতা হয়। ৫ লাখ টাকা আমি পরিশোধ করব। ভিসার বাকি টাকা আমার বোন আলেয়া নিজ থেকে পরিশোধ করবে বলে জানান।’
শহীজলের ছোট ভাই মাহে আলম বলেন, ‘আমার বোনের চাপাচাপিতে বড় ভাই শহীজল মাঝি ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য একটি এনজিও সংস্থা থেকে এক লাখ টাকা, তিন মেয়ের জামাইদের থেকে আড়াই লাখ, নিজের ৫০ হাজারসহ মোট চার লাখ টাকা জোগাড় করে। তাদের হাতে প্রতারিত হয়ে এখন ঋণের দায়ে হিমশিম খাচ্ছে।’
মামলার পর থেকে আলেয়া বেগম, আওলাদ হোসেনসহ সহযোগীরা পলাতক থাকায় তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।