বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেছেন, র্যাবের উপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হলে মানবাধিকার রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, এ দুটো বিষয় নিশ্চিত হলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা যাবে।
ঢাকার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত কূটনীতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার এসব কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মি. হাস।
“প্রেসিডেন্ট বাইডেন এটা পরিষ্কার করেছেন যে মানবাধিকার এবং মানবাধিকার রক্ষা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দু,” বলেন মি. হাস।
“র্যাব এবং তার কিছু কর্মকর্তার উপর আমরা যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি, এটা তার ফলাফল।”
র্যাব এবং তার কিছু কর্মকর্তার উপর আমেরিকা যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটি প্রত্যাহার করার জন্য বাংলাদেশ সরকার দেন-দরবার করছে।
এই নিষেধাজ্ঞার জন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিয়েছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, র্যাবের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, এটা এমন কোন বিষয় নয় যে তালিকা ধরে কাজ করতে হবে। এ দুটি মৌলিক বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।
কেন ও কী নিষেধাজ্ঞা:
দুই হাজারএকুশ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন অর্থ দফতরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সেসময় এ খবর প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের দিনে মার্কিন অর্থ দফতরের ফরেন অ্যাসেটস কনট্রোল অফিস (ওএফএসি) বিভিন্ন দেশের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ জন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে – যারা মানবাধিকার লংঘন এবং নিপীড়নের সাথে সংশ্লিষ্ট।
ছয় জন র্যাব কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ছয় জন কর্মকর্তা হচ্ছেন: চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক), বেনজির আহমেদ (সাবেক র্যাব মহাপরিচালক, জানুয়ারি ২০১৫-এপ্রিল ২০২০), খান মোহাম্মদ আজাদ (বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স), তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, জুন ২০১৯-মার্চ ২০২১), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, সেপ্টেম্বর ২০১৮-জুন২০১৯), এবং মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, এপ্রিল-২০১৬-সেপ্টেম্বর ২০১৮)।
এতে বলা হয়, গুরুতর মানবাধিকার লংঘনে জড়িত থাকার জন্য আজ বেনজির আহমেদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর – যার ফলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হবেন।
‘প্রায় ৬০০ বিচারবহির্ভূত হত্যা’
বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে যে র্যাব এবং অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৬০০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ৬০০-রও বেশি লোকের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, এবং নির্যাতনের জন্য দায়ী।
কিছু রিপোর্টে আভাস পাওয়া যায় যে এসব ঘটনায় বিরোধীদলীয় সদস্য,সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের টার্গেট করা হয়েছে – বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এতে ‘গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার’ অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর ৬ জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা বলা হয়।
এতে বলা হয়, “বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় র্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের ব্যাপক অভিযোগ – আইনের শাসন, মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা, ও বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে হেয় করার মাধ্যমে – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলছে।”