আজকাল যখন তখন মাথার ভিতরে কে যেন ডেকে উঠে জানতে চায়,
“কেমন আছিস?”
চমকে উঠে এদিক ওদিক তাকাই,
কেউ ডাকছে ভেবে আঁতকে উঠি বুকে ভিতর।
কেউ নেই আশেপাশে।
তখনই মনে পড়ে আমার মা বাবা নেই যে আমার খবর নিবে-
মন খারাপ হয়ে যায় আমার।
মন খারাপ হলে
আমি নিজেকে খুশি করতে মাঝেমধ্যে আয়রন করা ঝকঝকে পোষাক পরি,
পুরনো জুতায় কালি করি,
যত্ন করে নিজের দাড়ি কামাই সেদিন,
তারপর নিজেকে নিয়েই বের হয়ে পুরো ঢাকা শহর চক্কর দেই সারাদিন।
রাস্তায় প্রায়ই কোনো না কোনো মিছিলে আটকা পড়ি,
সব স্লোগান আমার কাছে একরকমই মনে হয়,
“মানতে হবে, মানতে হবে”
মিছিলের পিছনে হাঁটতে হাঁটতে নিজেও স্লোগান দেই কিছুক্ষণ,
একসময় মাথার ভিতরে কেউ জানতে চায়,
“কেমন আছিস?”
খুব মন খারাপ হয় আমার।
ফুটপাত ধরে হাঁটতে গিয়ে রাস্তায় বিছানো পত্রিকার হেডলাইনগুলোতে কিছুক্ষণ চোখ বুলাই-
ডলারের দাম আবারও বাড়ল,
তেলের দামের বিরাট লাফ,
মায়ের হাতে সন্তান খুন,
বাজারে সবকিছুর দামে আগুন,
এবার ধানের বাম্পার ফলন,
বৃদ্ধ বাবা মাকে ঘর থেকে বের করে দিলো সন্তানরা,
চালকের ভুলে গেল ছয় তাজা প্রাণ।”
মাথার ভিতর কে যেন চিৎকার করে ডাক দিয়ে ওঠে,
“কেমন আছিস?
মন খারাপ হয় আমার।
সিনেমা হলে ঢুকে পড়ি সন্ধ্যার শোতে।
নায়ক নায়িকার কষ্টের সংলাপে আমার চোখ দিয়ে টুপটুপ করে জল ঝরে।
একসময় মাথার ভিতরে কেউ জানতে চায়,
“কেমন আছিস?
মন খারাপ হয় আমার।
রাতের ঢাকা শহরের রাজপথের জ্বলন্ত সাইনবোর্ডের রংবেরঙের মেকাপের ভয়ে আজকাল চাঁদের আলো মাটিতে নামেনা!
একটু চাঁদের আলোর জন্য আমি ছুটতে থাকি শহরের অলিগলি ধরে।
একসময় মাথার ভিতরে ডেকে কেউ জানতে চায়,
কেমন আছিস?
মন খারাপ হয় আমার।
বাসায় ফিরি রাত করে।
টেবিলে ঢাকা কোনো গরম ভাত রাখার আমার আপন কেউ নেই,
গরম ভাতের জন্য কলিজা পুড়ে।
একটা গরম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘরের সব বাতি নিভিয়ে
সাততলার অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঝলমল ঢাকা শহরের দিকে তাকিয়ে থাকি
আর একটার পর একটা সিগারেট পোড়াই।
একসময় মাথার ভিতরে কে যেন ডেকে উঠে জানতে চায়,
“কেমন আছিস?”
তখনই তীব্র মন খারাপ হয় আমার।
দৌড়ে ঘরে ঢুকে সব বাতি জ্বালিয়ে দেই
আর আয়নার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে নিজেকেই বলি,
“ আমি এখনো বেঁচে আছি!”
————————
র শি দ হা রু ন
২৩/০৮/২০২২