শুধু নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ-র ক্ষেত্রে নয়, ভিসার ক্ষেত্রেও ধর্মীয় বিভেদের অবস্থান নিয়েছে ভারত। সম্প্রতি বাংলাদেশের এক ক্রিকেটারের ভিসা ফুরিয়ে যাওয়ার পরে এমনই তথ্য সামনে এসেছে।
তখনও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন লোকসভায় পাশ হয়নি। তবে বিলটি নিয়ে দেশ জুড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। প্রতিবাদ চলছে এনআরসি নিয়ে। তারই মধ্যে গত বছরের শেষ দিকে কলকাতায় আসেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলও। কর্মসূচির শেষে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনারকে ক্রিকেটার সাইফ হাসান জানান, এক দিন আগেই তাঁর ভারতের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। ডেপুটি হাই কমিশনার এর পর ভারতের ভিসা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, এক দিন বেশি থাকার জন্য সাইফ হাসানকে ৩০০ মার্কিন ডলার বা ২১ হাজার ভারতীয় টাকা জরিমানা দিতে হবে। জরিমানা হতেই পারে। তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু জানা যায়, সাইফ না হয়ে যদি লিটন দাসের এই সমস্যা হতো, তা হলে তাঁকে জরিমানা দিতে হতো ১০০ টাকা।
২০১৮ সালে ভারতের ভিসার নিয়মে বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে এক অদ্ভুত নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই সমস্ত দেশ থেকে সংখ্যালঘু হিন্দুরা ভারতে এসে ভিসার মেয়াদের বেশি সময় কাটিয়ে ফেললে একরকম জরিমানার অঙ্ক। কিন্তু ওই সমস্ত দেশ থেকে সংখ্যাগুরু মুসলিমরা সেই একই কাজ করলে তাঁদের ২০০ গুণেরও বেশি অর্থ দিতে হবে। নিয়মটা কী? ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে সে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু যদি ভারতে ২ বছরের বেশি সময় থাকেন, তাহলে তাঁকে জরিমানা দিতে হবে ৫০০ টাকা। ৯১ দিন থেকে দুই বছর পর্যন্ত হলে ২০০ টাকা। ৯০ দিনের ভিতরে হলে ১০০ টাকা। কিন্তু একই কাজ মুসলিম করলে জরিমানা হবে যথাক্রমে ৫০০ ডলার বা ৩৫ হাজার টাকা, ৪০০ ডলার বা ২৮ হাজার টাকা এবং ৩০০ ডলার বা ২১ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের সূত্র জানাচ্ছে, সম্প্রতি এক গরিব বাংলাদেশি মহিলাকে দেশে ফেরানোর জন্য তাঁদের তহবিল তৈরি করতে হয়েছিল। কারণ এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তাঁর কাছে ছিল না।
স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের এই ভিসার নিয়মের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকার একে ‘ধর্মীয় বিভেদমূলক’ বলে অভিহিতও করেছে। সূত্র জানাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে গেলে এ বিষয়ে তাঁদের ক্ষোভও জানাতে পারে হাসিনার প্রশাসন।
দীর্ঘ দিন ধরে যাঁরা এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে আন্দোলন করছেন, তাঁদের অনেকেই ভিসার এই নতুন নিয়ম শুনে আশ্চর্য হচ্ছেন না। তাঁদের বক্তব্য, মোদীর সরকার এ ভাবেই ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের অবমাননা করছে। সিএএ আইনের ক্ষেত্রেও তা করা হয়েছে, ভিসার নিয়মের ক্ষেত্রেও তা করা হয়েছে। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ”সরকার ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়ম তৈরি করে। এই সরকার অন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সব রকম ব্যবস্থা করছে। বরাবর ভারতের বিদেশনীতি স্বচ্ছ। সেখানে বিভেদের কোনও জায়গা নেই। কিন্তু এই সরকার সেখানেও বিভেদ তৈরি করে দিচ্ছে। যা ভারতের স্পিরিটের সঙ্গে খাপ খায় না। আমরা আগেও এর প্রতিবাদ করেছি, ভবিষ্যতেও করব।”