‘বাংলাপোস্ট২৪ ডেস্কঃ মাৎস্যন্যায়’ সম্পর্কে যারা জানেন তারা বর্তমান সময়ের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সাথে সেই অবস্থা মিলিয়ে নিতে পারেন। প্রকৃত অর্থেই আন্তর্জাতিক বিশ্বের বর্তমান অরাজকতা অনেকটা সেই শশাঙ্ক পরবর্তী মাৎস্যন্যায়ের যুগের আকার ধারণ করেছে। বড় মাছ যেমন ছোট মাছকে গিলে খায় তেমনি বড়/বলবান রাষ্ট্র ছোট/দুর্বল রাষ্ট্রকে গিলে খেতে চাচ্ছে! দক্ষিণ এশিয়াতেও সেই একই অবস্থা দেখতে পাচ্ছি…
এমতাবস্থায়, নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আমরা ছোট রাষ্ট্র হিসেবে ভারত বা মার্কিনিদের সাথে পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতে উভয়ের জন্য লাভজনক একটা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক তৈরি করতে পারি। যার সাথে থাকলে নিজের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ থাকবে তাকে বেছে নিব। ঠিক যেমনটা আছে জাপানের সাথে আমেরিকার এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে আমেরিকার। শুধুমাত্র আমারিকার সাথে থাকাতে তারা আজকে কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে গেছে! উদাহরণ তো আমাদের চোখের সামনেই! আমার ধারণা আমাদের ক্ষেত্রেও এটা সম্ভব…আমাদের কৌশলগত গুরুত্বপুর্ন ভৌগলিক অবস্থান এবং ১৮ কোটি জনসংখ্যাই আমাদের বড় সম্পদ। সেই সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের ভারও আমাদেরই।
মিউচুয়াল বেনিফিট ছাড়া কোন আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কই যে টেকে না তা আমরা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের দিকে তাকালেই বুঝতে পারি। (অবশ্য ভারতের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতে না পারা আমাদেরই ব্যর্থতা এ নিয়ে দ্বিমতের কোন সুযোগ নেই)
শুরুতে আপনাদের ‘মাৎস্যন্যায়’ সম্পর্কে বলেছি আর এখন আপনাদের ‘মিথোজীবী সম্পর্ক’ নিয়ে বলব। তার আগে আপনাদের একটা খুব সুন্দর প্রাকৃতিক মিথোজীবী সম্পর্কের উদাহরণ দেই…
হাঙ্গর তো প্রায় সবাইই চেনেন! হিংস্রতা আর শিকারের নৈপুণ্যতার বিচারে মহাসাগরে তার সমকক্ষ কেউ নেই! প্রায় সকল সামুদ্রিক প্রাণী ভয়ে পারতপক্ষে তাকে এড়িয়ে চলে। কিন্তু আজকে আমি আপনাদের এমন আরেকটা মাছের নাম বলবো যেটা সেই হিংস্র হাঙ্গরের ছোট্ট বন্ধু!! তার সাথে সাথেই থাকে কিন্তু হাঙ্গর নয়!! হাঙ্গরের এই বন্ধু মাছটির নাম ‘রিমোরা’ মাছ। জ্বি হ্যাঁ, আড়াই/তিন ফিটের এই ছোট্ট মাছটি বিশালাকায় হাঙ্গরের পাশে থাকে শুধুমাত্র সমঝোতার ভিত্তিতে! কি? বিশ্বাস হচ্ছেনা? ছবিতে দেখুন…
হাঙ্গর এবং রিমোরা মাছের এই বন্ধুত্ব কিন্তু মোটেও সমতার ভিত্তিতে নয়! বরং পারস্পারিক সমঝোতা ও সুবিধার আদান প্রদানের ভিত্তিতে। হাঙ্গরের করা শিকার থেকেই মুলত রিমোরার খাবারের প্রধান যোগান আসে, তাছাড়া হাঙ্গরের গায়ে থাকা বিভিন্ন পরজীবীও এঁরা খেয়ে নেয়। যার ফলশ্রুতিতে হাঙ্গর রিমোরার উপর খুব খুশি থাকে। এছারাও হাঙ্গরের সাথে থাকার দরুন রিমোরা অন্যান্য বড় শিকারিদের কাছ থেকে অত্যন্ত নিরাপদে থাকে। হাঙ্গরের সাথে থাকাতে ভয়ে কেউ তাঁদের ঘাঁটাতে আসেনা। আবার রিমোরারা হাঙ্গরের গায়ে থাকা পরজীবীদের খেয়ে হাঙ্গরকে সুস্থসবল এবং নীরোগ রাখে। অর্থাৎ, হাজার হাজার বছর ধরে শুধুমাত্র পারস্পারিক সুবিধার ভিত্তিতে দুটো ভিন্ন প্রজাতি বন্ধুর মতো পাশাপাশি থাকছে।
কে বলেছে প্রকৃতি আমাদের শেখায় না? হ্যাঁ, শেখায় তো!! বিষয় হচ্ছে, আমরা শিখতে রাজি কি না?!!
বাংলাপোস্ট২৪/মনির