♦ এক-তৃতীয়াংশ নেতা বাদ পড়তে পারেন

♦ গঠনতন্ত্রে তেমন পরিবর্তন আসছে না

♦ বাড়ছে না সম্মেলনের বাজেট তৈমুর

ফারুক তুষার , ৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ | পড়া যাবে ৬ মিনিটে

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। বর্তমান কমিটির অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নেতা বাদ পড়তে পারেন। নিষ্ক্রিয়, বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে। এবারের সম্মেলনে দলের গঠনতন্ত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন আসছে না। দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে কি না, তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল থাকলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বিষয়ে এখনো দলের নেতাদের কাছে কোনো মনোভাব ব্যক্ত করেননি। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ওই নেতারা জানান, এবার সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না বিদেশি অতিথিদের। সম্মেলনের বাজেটও গতবারের চেয়ে বড় হবে না।

যোগ্যতাসম্পন্ন, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির মেধাবী তরুণরা কমিটিতে স্থান পাবেন।

নেতৃত্বে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘এবারের কাউন্সিলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তরুণকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেওয়া হবে। যোগ্যতাসম্পন্ন, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির মেধাবী তরুণরা কমিটিতে স্থান পাবেন।’

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এবারের কমিটিতে অনেক নতুন মুখ আসবে। তরুণ প্রজন্মের মধ্য থেকে অনেককেই কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে। আর সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসবে কি না, এটা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে আমরা এখনো কিছু জানি না।’

 নিষ্ক্রিয় ও বিতর্কিত নেতাদের বাদ দেওয়া হবে

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারুণ্যনির্ভর একটি দল গড়ার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সে বিবেচনায় বর্তমান কমিটির নিষ্ক্রিয় ও বিতর্কিত নেতাদের বাদ দেওয়া হবে। এত দিন যাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন তাঁদেরও রাখা হবে না কমিটিতে। সম্পাদকমণ্ডলীর যেসব সদস্য নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেননি তাঁরাও বাদ পড়বেন। তাঁদের বদলে সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্য থেকে মেধাবী, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদের স্থান হবে কমিটিতে।

সূত্র মতে, আরপিওতে ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সব পর্যায়ের কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারী রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে বিষয়টি মাথায় রেখেই কমিটি করা হবে।

তরুণ নেতাদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ

জানা যায়, তরুণ নেতাদের মধ্যে চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কয়েকজন সাংগঠনিক সম্পাদক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে আগামী কমিটিতে ওই নেতাদের মধ্য থেকে সাধারণ সম্পাদক করা নিয়ে দুই ধরনের মত আছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে। কারো মতে, ওই তরুণ নেতাদের মধ্য থেকে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কাউকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিলে সাংগঠনিক কাজে গতি বাড়বে। আবার কারো মতে, শেখ হাসিনার মতো বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের একজন নেতা যেখানে আওয়ামী লীগের সভাপতি সেখানে তরুণ নেতাদের মধ্য থেকে কাউকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করাটা বেমানান হবে। সে ক্ষেত্রে সভাপতিমণ্ডলীর মধ্য থেকে কাউকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার পক্ষে তাঁরা।

জানা যায়, এবারের সম্মেলনের ব্যয় গতবারের চেয়ে বেশি হবে না। মূল ব্যয় হবে মঞ্চ, সাজসজ্জা, আপ্যায়ন ও প্রকাশনায়। জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতির উপকমিটিগুলোও তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। সম্মেলনের ব্যয় নির্ধারণে অক্টোবর মাসে অর্থ উপকমিটি অন্য ১১ উপকমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছে। আজ শনিবার বিকেলেও ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অর্থ উপকমিটির এক সভা হবে। সেখানে সম্মেলনের ব্যয় অনেকটাই চূড়ান্ত হবে।

খাদ্য উপকমিটির সদস্যসচিব ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন সামনে রেখে খাদ্য উপকমিটি যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। কৃষক লীগের সম্মেলনে ১০ হাজার প্যাকেট খাবার দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক লীগের সম্মেলনে ১৫ হাজার প্যাকেট দেওয়া হবে। যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনেও ১৫ হাজার প্যাকেট দেওয়া হবে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ২০ হাজার এবং কেন্দ্রীয় সম্মেলনে ৩০ হাজার প্যাকেট খাবার দেওয়ার কথা ভেবে রেখেছি।’

প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি গতবারের মতোই বিভিন্ন প্রকাশনার কাজ শুরু করে দিয়েছে। গতবার এই উপকমিটির খরচ ছিল এক কোটি ৮৫ লাখ টাকা। তবে এবার খরচ কিছুটা বাড়বে।

দুটি চকোলেট, ,পানির বোতল, প্যাড ও কলম

প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সদস্যসচিব ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ বলেন, ‘সম্মেলনে আগতদের জন্য আমরা একটি পাটের ব্যাগে বিভিন্ন প্রকাশনা, দুটি চকোলেট ও একটি পানির বোতল, লেখার জন্য প্যাড ও কলম দেব। প্রকাশনার মধ্যে থাকবে একটি স্মরণিকা, আওয়ামী লীগ সভাপতির ভাষণ, সাধারণ সম্পাদকের সাংগঠনিক রিপোর্ট, শোক প্রস্তাব, অভ্যর্থনা উপকমিটির স্বাগত ভাষণ, সরকারের বিগত দিনের উন্নয়ন নিয়ে একটি সিডি এবং বিএনপির ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, অপ্রচারের নানা বিষয় নিয়ে একটি সিডি। এ ছাড়া উপকমিটির পক্ষ থেকে সম্মেলনের পোস্টার, লিফলেট, ব্যাজ, ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।’

গঠনতন্ত্র উপকমিটি সূত্রে জানা যায়, এবার আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসছে না। ছোটখাটো দু-একটি পরিবর্তন আনার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। তবে সম্মেলন সামনে রেখে গঠনতন্ত্র উপকমিটির এবার কোনো ব্যয় নেই। ফলে কোনো বাজেটও হচ্ছে না। যদি গঠনতন্ত্রে কোনো পরিবর্তন আসেও তবে সেটা ছাপা হবে সম্মেলনের পর।

গঠনতন্ত্র উপকমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘গতবার আমরা অনেক খেটে গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছিলাম। ফলে এবার আর বড় কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। তবে সময়ের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে দু-একটি ছোটখাটো বিষয় পরিবর্তনের প্রস্তাব উঠেছে।’

অভ্যর্থনা উপকমিটির একাধিক নেতা জানান, এবারে সম্মেলনে বিদেশি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না। কারণ আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্ম সার্ধশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক বিদেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তবে দেশে কর্মরত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

বাংলাপোস্ট২৪/ জামিল
সূত্র: কালের কণ্ঠ