অনলাইন ডেস্ক :
অধিকৃত কাশ্মীরে অজ্ঞাত গণকবরের খোঁজ পাওয়ার কথা জানিয়ে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল পিপলস ট্রাইব্যুনাল অন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড জাস্টিস নামের একটি মানবাধিকার সংস্থা।
এ ধরনের নৃশংস অপরাধ বন্ধে তারা আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর দ্য হিন্দুর এক খবরে এমন তথ্য জানা গেছে।
কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরের একটি সংবাদ সম্মেলনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি এ দাবি জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, দুই হাজার ৭০০ অজ্ঞাত, অশনাক্ত গণকবরে দুই হাজার ৯০০ মরদেহ রয়েছে। উত্তর কাশ্মীরের বান্দিপোরা, বারামুল্লা ও খোপওয়ারা জেলার ৫৫টি গ্রামে এসব কবর রয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাটির তদন্তে বলা হয়েছে, ৮৭ দশমিক ৯ শতাংশ মরদেহ নামহীন। তারা এ ক্ষেত্রে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে।
কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহসহ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে এ প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল পিপলস ট্রাইব্যুনাল অন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড জাস্টিস (আইপিটিকে)।
সংস্থাটির আহ্বায়ক অঞ্জনা চ্যাটার্জি বলেন, সরকারের উচিত হবে না এ প্রতিবেদনকে অগ্রাহ্য করা। বরং গুরুত্ব দিয়েই দেখা উচিত বলে তিনি মনে করছেন।
ক্যালিফোর্নিয়া সেন্টার ফর ইন্টিগ্রাল স্টাডিজের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. অঞ্জনা চ্যাটার্জি বলেন, দুই হাজার ৭০০ কবরের মধ্যে দুই হাজার ৩৭৩টি অজ্ঞাত। ১৫৪টি কবরে দুটি করে মরদেহ রয়েছে। আর ২৩টিতে দুটির বেশি লাশ রয়েছে।
তিনি বলেন, এই ২৩টিতে তিন থেকে ১৭টি পর্যন্ত মরদেহ রয়েছে।
কাজেই এ নিয়ে ভাবতে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে ৩২টি সুপারিশ দিয়েছে সংস্থাটি। অধ্যাপক ড. অঞ্জনা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার ফলেই মূলত গণকবর রচিত হয়।
কাজেই গণকবরের অভিপ্রায় যদি হয় দায়মুক্তির মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা, একাধিক হত্যা করা, নিরবচ্ছিন্ন মৃত্যুর উপস্থাপনের মাধ্যমে এগিয়ে চলা, সেই ক্ষেত্রে বান্দিপোরা, বারামুল্লা ও খওয়াপাড়ার এসব কবর ভারতের সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর গণদাফনেরই অংশ। এতে গণকবরের একটি ভূদৃশ্য তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, আক্রান্তদের মৃত্যু-পরবর্তী মরদেহ নিয়মিতভাবেই সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর লোকজনই কবর দিয়েছে। এতে পুলিশ বাহিনীও হাত লাগিয়েছিল।
‘স্থানীয় কবর খননকারী ও তত্ত্বাবধায়কদের মাধ্যমে এগুলো খোঁড়া হয়েছে। যতটা সম্ভব আলাদা আলাদা ও সুনির্দিষ্টভাবে কবর দেয়া হয়েছে। এতে ইসলাম ধর্মীয় রীতিনীতিও বজায় রাখা হয়েছে।’
এই নারী গবেষক বলেন, সশস্ত্র বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় পুলিশ নিয়মিতভাবে দাবি করে আসছে, অজ্ঞাত ও অশনাক্ত কবরে দাফন করা লোকজন বিদেশি জঙ্গি হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা কাশ্মীরের বিভিন্ন জেলায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অর্ধশত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ যাচাই করে দেখেছে। তাদের মধ্যে ৩৯ জন মুসলমান, চারজন হিন্দু ও সাতজনের কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। এসব ঘটনায় ৪৯ জনকে জঙ্গি, বিদেশি বিদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর একজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন।
কাশ্মীরের ১০ জেলার মধ্যে তিনটিতে গবেষণা করতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন আইপিটিকের আহ্বায়ক। তিনি বলেন, যদি সব জেলায় স্বাধীন তদন্ত হয়, তবে ১৯৮৯ সাল থেকে আট হাজার গুমের খোঁজ যুক্তিযুক্তভাবেই পেয়ে যাওয়ার কথা। শত শত মরদেহ অশনাক্ত থাকার সঙ্গে যা সম্পর্কিত।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও প্রতিষ্ঠানগুলো রাজ্যটিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনাকে কখনও তদন্ত করে দেখেনি বলে অভিযোগ করা হয় প্রতিবেদনে।
কাশ্মীরকে ভারত সরকারের সামরিকায়নের বৈরী পরিণতি বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নীরব রয়েছে বলে এ গবেষক জানান। কাজেই কাশ্মীরে এখন কী ঘটছে, তা বিশ্বকে তারা জানাতে চান।
স্বাধীন মানবাধিকার সংস্থা আইপিটিকে বলছে, ১৯৮৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কাশ্মীরে সামরিকায়ন ও সহিংসতায় ৭০ হাজার লোক নিহত হয়েছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যা, ভুয়া বন্দুকযুদ্ধ, কারাহেফাজতে ও বিভিন্নভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
বাংলাপোস্ট২৪ /জামিল
সূত্র :যুগান্তর