অনলাইন ডেস্ক :

বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনসহ একটি প্রতিনিধিদলকে দেখা করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। দিনক্ষণ ঠিক না হলেও এই দুই নেতার সাক্ষাৎ নিয়ে এরই মধ্যে বিএনপি ও ফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, খালেদা জিয়া ও ড. কামালের সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব, স্থায়ী কমিটি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বের প্রতি নেতাকর্মীদের আস্থা তৈরি হবে। বিশেষ করে, সমন্বিত মনোভাবের ভেতর দিয়ে সৃষ্টি হতে পারে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির নতুন রোডম্যাপ।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী বিএনপির তৃণমূলে যে প্রশ্ন ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল, তা কেটে যাবে। ড. কামাল হোসেন বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখে এসে আইনি বিষয়ে আরো সুনির্দিষ্ট পরামর্শ ও সহযোগিতা দেবেন।

বিএনপির পক্ষে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকগুলোতে সমন্বয় করে দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি তাঁর মুক্তির বিষয়ে আইনি দিকগুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে আমরা মনে করছি।

সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ড. কামালের কাছ থেকে আরো বেশি পরামর্শ আশা করি আমরা।’ তিনি মনে করেন, সাক্ষাতের সময় দেশের চলমান রাজনীতি নিয়েও নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার আলোচনা হবে—এটিই স্বাভাবিক। হয়তো ভবিষ্যতে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট কী ধরনের কর্মসূচি প্রণয়ন করবে, সেটিরও একটি গাইডলাইন আসবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর এই প্রথম ফ্রন্ট নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন। এর আগে ২০১৫ সালে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে শোক জানাতে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ১০ মিনিটের বৈঠক হয়েছিল ড. কামালের নেতৃত্বে বর্তমানে ঐক্যফ্রন্টে থাকা নেতাদের। সেই বৈঠকের বেশির ভাগ সময়জুড়েই ছিল কোকোর স্মৃতিচারণা।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়ার এই সিদ্ধান্ত বিএনপি ও ফ্রন্টে নতুন উদ্যম তৈরি করবে। কেননা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. কামালের অংশ না নেওয়া, নির্বাচনের পর বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাঁর ‘দলীয় মতাদর্শভিত্তিক’ বক্তব্য দেওয়া, জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক ‘না’ বলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সভায় বিএনপি নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে গুরুত্ব না দেওয়াসহ নানা কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে কামাল হোসেনকে নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন উঠেছিল। এই সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে সন্দেহ-অবিশ্বাস দূর হবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফ্রন্ট নেতাদের সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব, স্থায়ী কমিটি ও ফ্রন্টের নেতৃত্বের প্রতি নেতাকর্মীদের আরো আস্থা তৈরি হবে। বিশেষ করে, সমন্বিত মনোভাবের ভেতর দিয়ে সৃষ্টি হবে ভবিষ্যতের রোডম্যাপ।’

সাক্ষাতের বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে জোটের মধ্যে কিছুটা হলেও যে সংকট বা সন্দেহ ছিল, তা কমে আসবে। সহমর্মিতা আরো বাড়বে।

যাঁরা যাচ্ছেন দেখা করতে : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হয়েছে। এ তালিকায় আছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) প্রধান আ স ম আবদুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিকল্পধারার আহ্বায়ক নুরুল আলম বেপারী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া ও জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব। দুই ভাগে ভাগ হয়ে তাঁরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন বলে ডা. জাফরুল্লাহ কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ৭২৫ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩,২০১৯
বাংলাপোস্ট২৪/জামিল
সূত্র: কালের কণ্ঠ