বাংলাপোস্ট২৪ ডেস্ক:

চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে চার শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দের তথ্য চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুদক মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খান স্বাক্ষরিত চিঠি বিএফআইইউর মহাব্যবস্থাপকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে দুদক কর্তৃক বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান ও মামলা করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিএফআইইউ কর্তৃক চার শতাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের প্রেক্ষাপটে দুদকের চলমান অনুসন্ধান এবং মামলাগুলোর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য জব্দকৃত ব্যাংক হিসাবগুলোর বিবরণী ও প্রকৃত অর্থ লেনদেন-সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করা জরুরি। এ পরিস্থিতিতে চার শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব বিবরণী, প্রকৃত অর্থ লেনদেনের তথ্য ও প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়।

বিএফআইইউ থেকে ২৩ জনের তথ্য পেয়েছে দুদক জানা গেছে, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলাকালে এরই মধ্যে দুদক বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ থেকে ২৩ ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দের তথ্য পেয়েছে। দুদক ওই সব হিসাব খতিয়ে দেখছে। ওই ২৩ ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন- এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, তার মা আয়েশা আক্তার, স্ত্রী শামীমা সুলতানা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ঢাকার সূত্রাপুরের দুই সহোদর ও আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু, রূপন ভূইয়া, এসএম রবিউল ইসলাম সোহেল, যুবলীগের বহিস্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, মুমিতুর রহমান, বহিস্কৃত ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাইদ, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকার কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শফিকুল আলম ফিরোজ, অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধান, সেলিম প্রধানের চার সহযোগী শাহনাজ পারভীন, আক্তারুজ্জামান, আলম গাজী, জাকির হোসেন পলাশ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিস্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, ঢাকার মোহাম্মদপুরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, এনামুল হক আরমান, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব, শাহেদুল হক, বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই।

এখন পর্যন্ত দুদক যাদের তথ্য পায়নি

অভিযান চলাকালে ব্যাংক হিসাব জব্দ ও লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে আরও কতিপয় ব্যক্তির। দুদক এখন পর্যন্ত বিএফআইইউ থেকে তাদের তথ্য পায়নি। তারা হলেন- ভোলা-৩ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু, যুবলীগের চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া ওমর ফারুক চৌধুরী, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের বহিস্কৃত সভাপতি মোল্লা আবু কাওছার, এমপি শাওনের স্ত্রী, বাবা, মা ও তার স্বার্থ-সংশ্নিষ্ট সবার হিসাবও জব্দ করা হয়েছে।

আরও যাদের ব্যাংক ও আয়কর-সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে সূত্র জানায়, আরও যাদের ব্যাংক হিসাব ও আয়কর-সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে তারা হলেন- সুনামগঞ্জ-১ আসনের ক্ষমতাসীন দলের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, এনামুল হক এনুর সহযোগী পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার নারিন্দার শরৎগুপ্ত রোডের হারুনুর রশিদ ও ওয়ারীর লালমোহন স্ট্রিটের আবুল কালাম আজাদ ওরফে আজাদ রহমান, জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ আসনের এমপি সামশুল হক চৌধুরী, ঢাকার মগবাজারের শফিকুল আলম, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান, জাকির এন্টারপ্রাইজের মো. জাকির হোসেন, মেসার্স আরমান এন্টারপ্রাইজের মালিক এনামুল হক আরমান, যুবলীগের বহিস্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানের স্ত্রী মিসেস সুমি রহমান, ঢাকার শফিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শফিকুল ইসলাম, ঢাকার কাকরাইলের মো. জাকির হোসেন ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার।

ক্যাসিনোকাণ্ডসহ দুর্নীতির আরও অভিযোগ ক্যাসিনোকাণ্ড ও অবৈধভাবে অর্থ সম্পদের মালিক হওয়া আরও কিছুসংখ্যক ব্যক্তির নাম রয়েছে দুদকের তালিকায়। তারা হলেন- গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত উল্লাহ, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান মুমিতুর রহমান, স্বপন চাকমা, উৎপল কুমার দে, মোহাম্মদ ফজলুল হক, মো. রোকন উদ্দিন, আবদুল কাদের চৌধুরী, মো. আফসার উদ্দিন, আবদুল মোমেন চৌধুরী ও মো. ইলিয়াস আহমেদ।

দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলাকালে দুদক জি কে শামীম ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আটটি মামলা করেছে।

বাংলাদেশ সময় :৭২৩ ঘন্টা ,৩০অক্টোবর ১৯
বাংলাপোস্ট২৪/ জামিল
সূত্র: সমকাল