অল্পের জন্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোগের নাম কোভিড টি-২০ হয়নি৷ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত হয়৷ একদিন পর শনাক্ত হলেই এর নাম পাল্টে যেতে পারতো৷

অবশ্য ৩১ ডিসেম্বর শনাক্ত হলেও এটির উৎপত্তি আরো আগেই৷

নাম কোভিড-১৯ হলেও অনেকের ধারণা ছিল এটির আচরণ হবে টি-২০ এর মতো৷ ঝড়ের মতো এসে ঝড়ের মতো চলে যাবে৷ কিন্তু করোনা নিয়ে আরো অনেক ধারণার মতো এই ধারণাও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে৷ ঝড়ের মতো এসেছে বটে, তবে গোটা বিশ্বকে তছনছ করে দিয়েও প্রলয়নাচন থামেনি৷ টি-২০ তো নয়ই, এমনকি দিন নির্ধারিত টেস্টও নয়, এ যেন অন্তহীন এক নিষ্ঠুর খেলা৷ কোথায় থামবে কেউ জানে না৷ ক্রিকেটের স্কোরের মতো প্রতিদিন গোটা বিশ্বের আক্রান্ত আর মৃত্যুর আপডেট হচ্ছে৷ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অনুবাদে নাজিম হিকমতের ‘জেলখানার চিঠি’ আপনাদের অনেকেরই পড়া৷ তারই একটি লাইন, ‘বিংশ শতাব্দীতে মানুষের শোকের আয়ু বড় জোর এক বছর!’ করোনা কালে মনে হচ্ছে, তিনি বেঁচে থাকলে লিখতেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে মানুষের আতঙ্কের আয়ু বড় জোর তিন মাস৷’ ১৮ মার্চ বাংলাদেশে কোভিড-১৯এ প্রথম মৃত্যুর ঘোষণা আসার পর দেশজুড়ে আতঙ্কের যে শীতল স্রোত বয়ে গিয়েছিল, তিন মাস পর যেন আতঙ্কটাও সবার গা সওয়া হয়ে গেছে৷ এখন প্রতিদিন ৪০ জন করে মারা যাচ্ছে, তারপরও আমরা সব মানিয়ে নিয়ে চলছি৷ মৃত্যুর পাশেই চলছে জীবনের বিশাল আয়োজন৷ 

বলছিলাম বাংলাদেশে করোনার প্রথম মৃত্যুর কথা৷ মৃত্যুর খবর ১৮ মার্চ হলেও প্রথম সংক্রমণের খবর এসেছিল আট মার্চ৷ এর আগে জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের পত্রিকার আন্তর্জাতিক পাতায় সিঙ্গেল কলামে করোনা ভাইরাসের খবর খুব বেশি কৌতূহলী করেনি আমাদের৷ কিন্তু যখন চীন থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় করোনার থাবা বিস্তৃত হলো, তখন আস্তে আস্তে আমাদের টনকে নড়াচড়া শুরু হয়৷ তখন আবার আশাবাদী বাহিনী মাঠে নামে, বাংলাদেশে যে গরম, তাতে করোনা টিকেব না৷ বাংলাদেশের মানুষের টিকা দেয়া আছে, তাই করোনা এখানে সুবিধা করতে পারবে না৷ থানকুনি পাতা, আদা চা খেয়ে করোনা মোকাবেলার পরামর্শও ছিল কারো কারো৷ আর ধর্মগুরুরা জানিয়ে দেন, করোনা আল্লাহর বাহিনী৷ এটা এসেছে শুধু বিধর্মীদের মারার জন্য৷ আর রাজনীতিবিদরা ঘোষণা করেন, আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী৷ করোনা সর্দি-জ্বরের মতো৷ কিন্তু কারো কোনো বাগাড়ম্বরকে পাত্তা না দিয়ে করোনার ভয়াল ঢেউ ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে গ্রাস করে নিয়েছে৷ এখন আমরা বসে বসে ঢেউ গুনছি আর কবে সেই ঢেউ চূড়ায় উঠবে তার দিন গুনছি৷ শেষ আশা হলো, ঢেউ যখন চূড়ায় উঠবে, তখন তা নামবেও৷ উঠলে নামতে হবে, তাই আমরা এখন করোনার চূড়ায় ওঠার অপেক্ষা করছি৷ এমন নিষ্ঠুর অপেক্ষা কে, কবে শুনেছে৷