বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরিকে ঘিরে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ভাস্কর্যটি স্থাপনের কাজ শুরু হয়ে গেছে।

জানা গেছে, ভাস্কর্যটি চীন থেকে তৈরি করে আনা হয়েছে। ওদিকে মুজিব ভাস্কর্যটি স্থাপনের বিরুদ্ধে আগামিকাল শুক্রবার আবারো দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বেশ কয়েকটি ইসলামপন্থী সংগঠন।

কিন্তু ঢাকার পুলিশ সতর্ক করেছে যে অনুমতি ছাড়া কোনও বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দেয়া হবেনা।

কেমন দেখতে এই ভাস্কর্য

যে ভাস্কর্য নিয়ে এতো বিতর্ক সেই ভাস্কর্যের নির্মাণ কাজ কতদূর? এই প্রতিবেদনের জন্য বিবিসি বাংলা সেখানে ভিডিও করতে গেলে সেনাবাহিনীর একজন সদস্য তার দিকে এগিয়ে আসেন।

তাকে বলা হয়, এটির ভিডিও করতে হলে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে আর সে জন্য তাকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে যেতে হবে।

ঢাকার যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে মাওয়ার পথে কয়েক মিনিট গাড়ি চালিয়ে গেলে চোখে পড়বে উঁচু গোলাকার মঞ্চের মতো বেশ বড় একটি জায়গা কাল কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

বিক্ষোভ
ভাস্কর্যটির বিপক্ষে ইসলামপন্থী দলগুলো ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ করেছে।

যে কাঠামোটি কাপড়ে ঢাকা তার উচ্চতা চার তলার মতো। ভেতরে ঠিক কি রয়েছে তা রাস্তা থেকে বোঝা মুশকিল।

ঢাকার দক্ষিণে ধোলাইপাড় মোড়ে এই ভাস্কর্যটি ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অংশ।

ভাস্কর্যটি চীনে নির্মাণ করা হয়েছে এবং এটির স্থাপনার কাজ প্রায় শেষের পথে। প্রকল্পের পরিচালক সবুজ উদ্দিন খান বিবিসিকে জানিয়েছেন, এমাসেই এটি উদ্বোধন করা সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছেন।

তিনি জানান, “এই ভাস্কর্যটির কাজ প্রায় শেষ। ১৬ই ডিসেম্বরের আগেই এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টি বোর্ড থেকে একটা আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের বিষয় রয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন হলে তারপর এটি উন্মোচন করা হবে।”

তিনি বলেন, ভাস্কর্যটি তৈরি করতে নয় কোটি টাকা খরচ হয়েছে। চীন থেকে ইতিমধ্যেই ভাস্কর্যটি দেশে পৌঁছানোর পর ধোলাইপাড় মোড়ে এটি স্থাপন করার কাজ প্রায় শেষের পথে।।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ভাস্কর্যটির শিল্পী, এর আকৃতি বা অলঙ্করণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

হেফাজতের বিক্ষোভ
ভাস্কর্যের বিপক্ষে বরাবরই আন্দোলন করে আসছে হেফাজতে ইসলাম।

পুলিশি নিষেধাজ্ঞা

ঢাকা শহরে কোন ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক সভা সমাবেশ করতে গেলে পুলিশের অনুমতির দরকার হয়। তবে এই তথ্য নতুন করে আবার মনে করিয়ে দিয়েছে মহানগর পুলিশ।

অনুমতি ছাড়া ঢাকা মহানগরীতে কোন ধরনের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের সমাবেশ, সভা, মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পুলিশের এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এল যখন ইসলামপন্থী বেশ কয়েকটি দল আগামিকাল শুক্রবার মুজিব ভাস্কর্যটি স্থাপনের বিপক্ষে আবারো মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে।

দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে তারা। ইতিমধ্যেই ইসলামপন্থী দলগুলো হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ করেছে।

তাদের বক্তব্য, ভাস্কর্যের নামে দেশে মূর্তি বানানো হচ্ছে। ভাস্কর্যটি নিয়ে চলমান টানাপড়েনের মধ্যে এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশে এর আগেও ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনাকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

গ্রীক দেবী থেমিস
ইসলামপন্থীদের চাপের মুখে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে গ্রীক দেবী থেমিসের ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়া হয়

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ন্যায় বিচারের প্রতীক গ্রীক দেবী থেমিসের একটি ভাস্কর্য স্থাপনের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের পর চাপের মুখে সেটি স্থানান্তর করা হয়।

সরিয়ে ফেলা হয় ঢাকায় বিমানবন্দর, জিপিও’র সামনের ভাস্কর্য।

গত মাসের শেষের দিক থেকে মুজিব ভাস্কর্যটিকে ঘিরে নতুন করে আবারো ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে।

ভাস্কর্যের বিপক্ষে বরাবরই কঠোর অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলছেন, তারা এর বিপক্ষে কথা বলেই যাবেন।

তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “(ভাস্কর্য) হতে দেবো কি দেবো না সেটা তো আসলে আমাদের বিষয় না। আমাদের বিষয় হল আমরা প্রতিবাদ করবো। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আন্দোলন করবো। যেটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের ইমানি দাবিটা জানিয়েই যাব, কথা বলেই যাব। সেটা সরকার রাখবে কি রাখবে না সেটা সরকারের বিষয়।”