গল্প :নির্বাকদের বৈঠকে
রচনা :মাহমুদুর রহমান
শ্রেণি : দশম
বিসিএসআইআর উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমন্ডি, ঢাকা।

শান্ত নামের এক কিশোর কিন্তু নামের মতো মোটেই শান্ত নয়। সে এদিক- ওদিক ছুটে বেড়াবে,গাছ-পালার পাতা ছিঁড়বে, ডালপালা ভাঙবে,পশুপাখিদের ঢিল ছুঁড়বে। মাকে ও অনেক বিরক্ত করে। এ জন্য মায়ের কাছে বেশ বকুনি খেতে হয়। এক দুপুরে কোনো কারণে মায়ের বকুনি খেয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। জানালা দিয়ে বাইরে দেখতে পায় গাছের ডালে একটি পাখি। খুব ইচ্ছে হলো তাকে ঢিল ছোঁড়ার। কিন্তু সুযোগ না পেয়ে শুয়ে থাকল। পাখিটির মিষ্টি ডাকে চোখ বুঁজে এলো। দারুণ একটা স্বপ্নের জগতে সে দেখলো একটা ঢালু পথ বেয়ে নদীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ আশপাশ থেকে অনেকের কথা শুনতে পায়। তাকিয়ে দেখে কোন মানুষ নেই। তবে কথা বলছে কে! শোনার জন্য একটা গাছের গুটির আড়ালে লুকালো। গোপনে তাকিয়ে দেখল- অনেকগুলো গাছ একত্রে কথা বলছে। সবার মুখ আছে।ভয় এবং উৎকণ্ঠা নিয়ে শান্ত তাদের কথা শুনছে।

বটগাছটা মাথা ঝাড়া দিয়ে বলল- কি ভাগ্য আমার! আমি তাদের ছায়া দিই। তারা ছায়ায় বিশ্রাম নিয়ে যাওয়ার সময় পাতা ছিঁড়ে ফেলে, চামড়াও ছিঁলে নেয়। বোঝে না আমার কষ্ট। আমগাছটা বলল- এ কষ্ট আমাদের সবাইকে সহ্য করতে হয়। কাঁঠাল গাছটা হালকা দুলে বলল- তোমাদের চাইতে আমরা কাঁঠাল, সেগুন, শালদের বিপদ আরও বেশি।মানুষেরা আমাদেরই বেশি কেটে নিয়ে যায়। তারা কেন বোঝে না কোথাও কোন গাছ না থাকলে পৃথিবী উতপ্ত হবে, পানি শুকিয়ে যাবে। নদী কলকল শব্দে বলল- তাহলে তো আমিও মারা যাব। আমার কোলে যে সব মাছেরা খেলা করে তারাও মারা যাবে। তেঁতুল গাছ বলল- মানুষেরা যদি আমাদের মেরে ফেলে এমনটাই হবে। দমকা হাওয়া বেশ জোরে এসে দুপ করে থেমে গিয়ে বলল- তখন আমি আমার বিশুদ্ধতা হারাবো। মানুষ ও সব প্রাণিরা দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে।
শান্ত দেখছে তার পায়ের তলার মাটি কাঁপছে। সে ভয় পেয়ে গেল। মাটি তখন বলল- সব গাছেরা মারা গেলে আমার বুক সূর্যের প্রখর তাপে ফেটে যাবে। মানুষেরা অনেক খারাপ। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে আমার চেহারা নষ্ট করে দিয়েছে। নদী বলল- ময়লা জমে জমে আমারও মৃত্যুদশা। তেঁতুলগাছ মনের দু:খে বলল- দেখ আমার হাতে বীজগুলো যতœ করে রেখে দিয়েছি। যদি কেউ এগুলো বপন করে,গাছে গাছে ভরে যাবে চারদিক। শান্ত আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে বলল-বীজগুলো আমাকে দাও। আমগাছ বলল-আরে তুমি তো আমাদের ক্ষতি করো।শান্ত বলল- আমি তোমাদের আর ক্ষতি করবো না। বীজগুলো আমাকে দাও, আমি বপন করবো। তেঁতুলগাছ বলল- তোমাকে বীজ দেবনা। তুমি নষ্ট করে ফেলবে।
শান্ত মন খারাপ করে চলে আসছে। রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে তার ঘুম ভেঙে যায়। বুঝতে পারে এতক্ষন স্বপ্ন দেখেছে। দৌড়ে গিয়ে তেঁতুল গাছের কয়েকটি বীজ নিয়ে এসে উঠানের পাশে মাটিতে পুঁতে দিল। সে ভাবল- যখন গাছটা বড় হবে, পাখি বসবে, তেঁতুল খাবে আর গান করবে। গান শুনে ছুটে আসবে কাঠবিড়ালী, ছায়ায় ঘুমাবে কুকুর।কিছুদিন পর ছোট ছোট চারাগাছ দেখতে পেয়ে আনন্দের সীমা থাকেনা।গাছগুলোতে পানি দিল, খুঁটি বেঁধে চারদিকে বেড়া দিল। তখন বৈশাখ মাস। প্রকৃতিতে মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে। একদিন শেষ বিকেলে খুব জোরে বাতাস বইতে শুরু করলো। সে ঘরের বাইরে ছুটে যাচ্ছে । মা বলল- এই ঝড়ের মধ্যে কোথায় যাচ্ছিস? শান্ত বলল- আমি যে গাছগুলো লাগিয়েছি সেগুলো অনেক ছোট। বাতাসে নিতিয়ে পড়তে পারে। মা বলল- তোর কি হয়েছে বাবা? আগে কত গাছপালা নষ্ট করতি। এখন এই ঝড় বাদলের মধ্যে গাছের এত যতœ নেয়ার কি দরকার? শান্ত বলল- মা আমি গাছদের কষ্ট বুঝতে পেরেছি। তারাই মানুষের প্রকৃত বন্ধু। তাই নিজের প্রাণের মতই গাছদের ভালোবাসা উচিৎ।