অনলাইন ডেস্ক:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও তাঁর পূর্বনির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করেছেন। তিন দিনের সফরে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নয়াদিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। আর কাল শুক্রবার সকালে মেঘালয়ে যাওয়ার কথা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আব্দুল মোমেনের ভারত সফরের বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে শেষ মুহূর্তে এসে কেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি বাতিল হয়েছে, তা নিয়ে তাঁরা কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে, ভারতের নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। এই আইন নিয়ে এরই মধ্যে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে সহিংসতা শুরু হয়েছে।
স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল করা হয়েছে। মন্ত্রী সুবিধাজনক কোনো সময়ে ভারত সফর করবেন। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের কথা ছিল। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের এক অনুষ্ঠানে এবং মেঘালয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল।
ভারতে নাগরিকত্ব আইন যে দুই নিকট প্রতিবেশীর বিশেষ সম্পর্কে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করেছে, গতকাল বুধবার তার আভাস দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সঙ্গে নিজের দপ্তরে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারত ঐতিহাসিকভাবে একটি সহনশীল দেশ, যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। সেখান থেকে পদস্খলন হলে ভারতের ঐতিহাসিক অবস্থান দুর্বল হবে।
ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় গত সোমবার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়। রাজ্যসভায় পাস হয় গতকাল।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক কমিশন (ইউএসসিআইএরএফ) সোমবারই এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিলটিতে ধর্মীয় মানদণ্ড বেঁধে দেওয়াটা বিপজ্জনক।
ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাসের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কী, তা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘ভারত ঐতিহাসিকভাবে একটা সহনশীল দেশ, যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। সেখান থেকে পদস্খলন হলে ভারতের ঐতিহাসিক অবস্থান দুর্বল হবে বলে আমি মনে করি। আমি মনে করি যে এ নিয়ে কতগুলো কথা উঠেছে, এর অনেকগুলো সত্যি নয়। আমাদের দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি অত্যন্ত বেশি। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমাদের দেশে অন্য ধর্মের লোক কেউ নিপীড়িত নয়। উন্নয়নের মহাসড়কে আমরা যাত্রা শুরু করেছি। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সবাইকে একই দৃষ্টিতে দেখি। বাংলাদেশে আমরা কে কোন ধর্মের, সেটা নিয়ে বিচার করি না। বিচার করি সে বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সব ধর্মের লোককে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে দেখি। যেটা তাঁরা তথ্য দিয়েছেন, বাংলাদেশে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, কথাটা সত্যি নয়। যাঁরা তথ্য নিয়েছেন, ওনাদের যাঁরা বুঝিয়েছেন, তাঁরা সত্যি কথা বলেননি।’