করোনা মহামারি মোকাবিলায় চলতি বছরের শুরুতে ভারতে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। তবে দেশটিতে এখনও প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়ার উন্নতি হয়েছে সামান্যই। তার মধ্যেই টিকা কেনার দায় রাজ্যগুলোর ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
তার যুক্তি, এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে টিকা কিনতে পরস্পরের সঙ্গে টেক্কা দিতে অক্ষম রাজ্যগুলো। তিনি আরও মন্তব্য করেন, এরপর এমন দিনও আসতে পারে, যে পাকিস্তান হামলা করলেও রাজ্যগুলোকে যার যার মতো অস্ত্রশস্ত্র এবং যুদ্ধ সরঞ্জাম কিনতেও বাধ্য করা হতে পারে।
বুধবারও দিল্লিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি মানুষ। দৈনিক মৃত্যুও রয়েছে দেড়শোর ওপরেই। কিন্তু সার্বিক টিকাকরণ এখনও সে ভাবে গতিই পায়নি। এ নিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন কেজরিওয়াল।
তিনি বলেন, ‘দেশ টিকা কিনছে না কেন? কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এভাবে রাজ্যের ওপর এ ভাবে দায় চাপিয়ে দেওয়া যায় না। এখন যদি পাকিস্তান হামলা করে, যার যার মতো করে আত্মরক্ষার ভারও কি রাজ্যগুলোর ওপর ছেড়ে দেবে কেন্দ্রীয় সরকার? উত্তরপ্রদেশ কি নিজের জন্য ট্যাংক কিনবে? দিল্লিকে কি নিজের জন্য বন্দুক কিনতে হবে?’
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করার জন্যও মোদি সরকারকেই দায়ী করেছেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, ‘বাকি দেশগুলো সময় থাকতেই টিকাদান কর্মসূচি এগিয়ে নিতে উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু ভারত ছয় মাস দেরি করেছে। ভারতে প্রথম টিকা ভারতীয়রাই তৈরি করেন। তখন থেকেই টিকা মজুত করা উচিত ছিল। তা হলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কিছু মৃত্যু অন্তত আটকানো যেত।
সামান্য ওঠানামা করলেও, গত ১২ মে থেকে অধিকাংশ সময়ই দেশে দৈনিক মৃত্যু ৪ হাজারের ওপরেই রয়েছে। বুধবারও দেশে ৪ হাজার ১৫৭ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তা সামাল দিতে যে পরিমাণ টিকার প্রয়োজন, তার কিছুই নেই বলে অভিযোগ তুলেছে একাধিক রাজ্য।
চাহিদার ৫০ শতাংশ টিকা কেনার ভার কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের ওপর ছেড়ে দিলেও, বেশিরভাগ সংস্থাই রাজ্যগুলোকে টিকা দিতে রাজি হচ্ছে না বলেও অভিযোগ সামনে এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নিষেধ রয়েছে জানিয়ে ভারত বায়োটেক তাদের টিকা দিতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছেন দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিং জানিয়েছেন, মার্কিন ফার্মানিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার তাদের কাছে টিকা বিক্রি করতে রাজি হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো কেন্দ্রীয় সরকারকেই দেশবাসীর টিকা দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে বলে উল্লেখ করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘আমাদের যুদ্ধ করোনার বিরুদ্ধে। পরস্পরকে টেক্কা দেওয়ার সময় নয় এটা। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, টিকা জোগাড় করা আমাদের কাজ নয়। আপনি এনে দিলে তবেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারব।’
এদিকে মহামারির মধ্যে ভারতে করোনার চেয়ে অনেকগুণ প্রাণঘাতী ব্ল্যাক, হোয়াইট ও ইয়েলো ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গোটা ভারতে এ পর্যন্ত ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৭১৭ জন। যার বেশিরভাগই গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের।
রাজ্যে রাজ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় মহামারি আইন অনুযায়ী গত সপ্তাহেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকারগুলোকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার ও এ সংক্রান্ত সব তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারকে জানানোর আহ্বানও জানানো হয়।
একের পর এক রাজ্যে এই ছত্রাকের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে। করোনার প্রকোপে বিপর্যয়ের মধ্যে নতুন এই ছত্রাকের সংক্রমণ দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও একটা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।