বাংলাদেশে যে ইসলামি চিন্তাবিদরা ভাস্কর্য নির্মাণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন তারা বলছেন এখনও তারা তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন এবং এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।

বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করতে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের বিষয়ে আশাবাদী তারা।

বিবিসি বাংলাকে এই তথ্য জানিয়েছেন যাত্রাবাড়ী বড় মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদী । তিনি শনিবারে যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় ইসলামী চিন্তাবিদদের বৈঠক এবং পরে যে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়-দুটিতেই উপস্থিত ছিলেন।

ওই বৈঠক শেষে ‘ভাস্কর্য নির্মাণ ইসলামে নিষিদ্ধ’ উল্লেখ করে এ বিষয়ে পাঁচ দফা একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।

সাথে জানানো হয়েছিল যে, এ বিষয়ে একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে।

তারা বলছেন, চিঠি ও প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে তাদের একজন নেতা মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবে।

মি. ফরিদী বলেন, যে চিঠি দেয়ার কথা ছিল সেটি তৈরির প্রস্তুতি চলছে। আশা করা হচ্ছে দু-একদিনের মধ্যেই সাক্ষাত অনুষ্ঠিত হবে।

তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ধর্মীয় বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছে।

এক ভিডিও কনফারেন্সে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ইতিহাসের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ধর্মীয় বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গায়ে পড়ে আক্রমণ করে না কিন্তু আক্রমণের শিকার হলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এক বিন্দুও পিছপা হয় না।

শুক্রবার জুমার পর বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বর থেকে বিক্ষোভকারীরা বের হওয়ার চেষ্টা করলে শুরুতে তাদের বের হতে বাধা দেয় পুলিশ।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বর থেকে বিক্ষোভকারীরা বের হওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেয় পুলিশ।

মি. কাদের বলেন, “বাড়াবাড়ি করলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মীরা ঘরে বসে চুপ করে থাকবে না।”

“আমি উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, আপনারা অনেক করেছেন, এনাফ ইজ এনাফ, এবার থামুন।”

ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতার জেরে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, এ বিষয়ে আলোচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

তবে গণতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতার মতো মূলনীতিকে ভিত্তি করে তৈরি করা সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলবে এবং এদেশে থাকতে হলে তা মানতে হবে বলে মন্তব্য করেন মি. হানিফ।

তিনি বরেন, “যাদের সংবিধান মানতে অসুবিধা আছে, তাদের এই দেশে থাকার কোন অধিকার আছে বলে জনগণ মনে করে না।”

এ বিষয়ে সরকারের একজন মন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, উদ্ভুত এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সহিংসতার বিষয়গুলো সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করবে।

“আপনি যখন নিজের হাতে কোন কিছু ভাঙতে যাবেন সেটা তো বেআইনি। আর বেআইনি কোন কিছু ফেস করা সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ।”

মি. চৌধুরী মনে করেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে সমাধানে আসার পথ হচ্ছে উভয় পক্ষের আলোচনায় বসা।

“তারা তাদের দাবি দিচ্ছেন, সেই দাবি নিয়ে আলোচনা হবে, বিতর্ক হবে, এমনকি তারা বড় বড় মাহফিল করবেন। কিন্তু সেখানে সহিংসতা উস্কে দেয় এমন কিছু বলা যাবে না। সব কিছু সমাধানের পথ হচ্ছে আলোচনা করা।”

রাজধানী ঢাকার ধোলাইপাড় এলাকায় ভাস্কর্যটি স্থাপনের কাজ শেষের পথে
রাজধানী ঢাকার ধোলাইপাড় এলাকায় ভাস্কর্যটি স্থাপনের কাজ শেষের পথে

ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ছাড়াও আলেমরা আরও যেসব বিষয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন তার মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে “ইসলামের নবীর প্রতি অবমাননাকর আচরণের ওপর কঠোর নজরদারি ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের” দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি ওয়াজ মাহফিল নিয়ে “শব্দ-দূষণের অজুহাতে লাউড স্পিকার ব্যবহারের ব্যাপারে নির্দেশনা জারি”কে তারা “অনভিপ্রেত” বলেও উল্লেখ করেছেন।