বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর থেকে সব রকমের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের কাছ থেকেও এমন পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেছে তারা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়, এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানের হাইকমিশন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে গতকাল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহম্মেদ সিদ্দিকী। এর পরই এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায় পাকিস্তান। পাকিস্তান হাইকমিশনের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, দুই দেশই দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগে সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
তুর্কি সংবাদ সংস্থা আনাদুলু এজেন্সিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহম্মেদ সিদ্দিকী জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও এমন ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার অপেক্ষা করছে ইসলামাবাদ। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি নাগরিকদের ওপর বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞাগুলো এখনো বলবৎ রয়েছে। তবে আমি প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছি আমাদের পক্ষ থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।’
বৈঠকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানের চালানো বর্বর গণহত্যার জন্য দেশটিকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এ সময় পাকিস্তানি হাইকমিশনার ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দিল্লিতে হওয়া ত্রিপক্ষীয় চুক্তির একটি অনুলিপি তুলে দেন। তিনি বলেন, ‘চুক্তিটি বিদ্যমান ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদারের ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।’
১৯৭৪ সালে সই হওয়া ওই চুক্তিতে বলা ছিল, বাংলাদেশের আমন্ত্রণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফর করবেন। চুক্তিতে যুদ্ধবন্দীদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হতে পারে বলেও উল্লেখ ছিল। সমঝোতার সুবিধার্থে বাংলাদেশের জনগণকে পাকিস্তানিদের অতীতের ভুলগুলো ক্ষমা এবং ভুলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইমরান আহম্মেদ সিদ্দিকী।
পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৭১ সালে টানা নয় মাস যুদ্ধ শেষে জয়লাভ করে জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। এতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছিল পাকিস্তানের চিরশত্রু ভারত। শুরু থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের শীতল সম্পর্ক বজায় রয়েছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল চালু করলে বিরোধ আরও তীব্র হয়।
তবে বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে আল জাজিরা বলছেন, অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগি, সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যা, বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) পাসের মতো বিষয়গুলোতে ভারতের ‘পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব’- এর কারণে সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গত বছরের জুলাইয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফোন করেন।