অনলাইন ডেস্ক :
ভারতে বাবরি মসজিদ-রামমন্দির মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর প্রায় দেড়দিন হতে চললেও কীভাবে এই রায়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, তা নিয়ে দেশের শীর্ষ মুসলিম সংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র বিভক্তি দেখা যাচ্ছে।
মামলার অন্যতম পক্ষ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এই রায় মেনে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
কিন্তু তাদের আইনজীবীরা এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড আবার এর বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করার কথা বিবেচনা করছেন।
অযোধ্যারই অন্যত্র মসজিদ বানানোর জন্য সুপ্রিম কোর্ট যে পাঁচ একর জমি বরাদ্দ করেছে তা নিয়েও মুসলিম সমাজের নেতারা একমত নন।
তারা কেউ বলছেন এই ‘দয়ার দান’ প্রত্যাখ্যান করা উচিত, কেউ আবার মনে করছেন ওই জমি নিয়ে সেখানে স্কুল-কলেজ বা হাসপাতাল গড়া দরকার।
![রায় ঘোষণার পর সাংবাদিক সম্মেলনে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্যরা](https://ichef.bbci.co.uk/news/624/cpsprodpb/FD20/production/_109600846_gettyimages-1181070455.jpg)
বস্তুত সাতাশ বছর আগে অযোধ্যার যে বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানে বাবরি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, ঠিক সেখানেই রামমন্দির বানানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ভারতের এক একটি প্রভাবশালী মুসলিম সংগঠন এক একভাবে দেখছে।
অন্যতম মামলাকারী সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ ফারুকি যেমন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, “আমরা বিনম্রতার সঙ্গে এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি।”
“যদি কেউ এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার কথা বলেন, সেটা তার ব্যক্তিগত মত – ওয়াকফ বোর্ডের নয়।”
“দেশের হিত ও শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে আমরা এই আকারেই রায়টি কবুল করে নিচ্ছি।”
![মামলায় সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী শাকিল আহমেদ সাঈদ](https://ichef.bbci.co.uk/news/624/cpsprodpb/14B40/production/_109600848_gettyimages-1041984114.jpg)
অথচ রায় ঘোষণার ঠিক পর পরই বোর্ডের অন্যতম আইনজীবী ও বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির নেতা জাফরইয়াব জিলানি কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন সুরে কথা বলেছিলেন।
তিনি জানিয়েছিলেন, রায়ের ভেতর অনেক ‘স্ববিরোধিতা’ আছে বলে তারা মনে করছেন এবং এর বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন কীভাবে করা যায় সেটা বিবেচনা করা হচ্ছে।
বস্তুত রায় পর্যালোচনার সেই প্রক্রিয়া এখনও জারি আছে, মজলিস বাঁচাও তেহরিকের মতো কয়েকটি সংগঠন তো এই রায়ের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের দ্বারস্থ হওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছে।
মামলায় মুসলিমদের পক্ষে আর এক আইনজীবী এম আর শামসাদও বলেছেন, “রায়ের বেশ কয়েকটি দিক নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে।”
![কামাল ফারুকি](https://ichef.bbci.co.uk/news/624/cpsprodpb/16A8/production/_109600850_gettyimages-1175410864.jpg)
“সিনিয়র আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান-সহ অন্যরা এখন খতিয়ে দেখছেন এক্ষেত্রে কোন আইনি পথটা নেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে।”
রায়ে যে তারা খুশি নন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অল ইন্ডিয়া পার্সোনাল ল বোর্ডের সচিব মৌলানা ফজরুর রহমান মুজাদ্দেদিও।
ভারতীয় মুসলিম সমাজে সম্ভবত সবচেয়ে ক্ষমতাশালী এই সংগঠনটির আর এক প্রবীণ সদস্য কামাল ফারুকি আবার বলছেন, বাবরি মসজিদ যেখানে ছিল সেই এলাকার বাইরে ৫ একর জায়গা দিতে চেয়ে আদালত আসলে দেশের মুসলিমদেরই অপমান করেছে।
মি ফারুকির কথায়, “আমি তো আপনাদের আগেই বলেছি অন্য জায়গায় আমাদের একশো একর জমি দিলেও কোনও লাভ নেই।”
![হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি](https://ichef.bbci.co.uk/news/624/cpsprodpb/64C8/production/_109600852_gettyimages-1152069548.jpg)
“মুসলিমদের ৬৭ একর জমি তো কবে থেকেই অধিগ্রহণ করে রেখেছে, তো কীসের আবার দান?”
“৬৭ একর জমি আগেই ছিনিয়ে নিয়ে এখন আবার ৫ একর দিতে চাইছেন, এটা কেমন বিচার?”
হায়দ্রাবাদের এমপি ও অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি গতকালই বলেছিলেন, মুসলিমরা দুর্বল হলেও অতটাও গরিব নয় যে নিজেরা চাঁদা তুলে আল্লাহর ঘর বানানোর জন্য পাঁচ একর জমি কিনতে পারবে না।
এই ‘খয়রাতির দান’ ফিরিয়ে দেওয়ারই পক্ষপাতী তিনি – কিন্তু বলিউড লেজেন্ড ও শোলে-সহ বহু সফল ছবির চিত্রনাট্যকার সেলিম খান কিন্তু মনে করেন ওই জমি মুসলিমদের অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত।
সেলিম খান বলছেন, “মুসলিমদের প্রতি আমার পরামর্শ হবে জমিটা নিন, কিন্তু ওখানে মসজিদ বানাবেন না।”
![বলিউড চিত্রনাট্যকার সেলিম খান, ছেলে ও সুপারস্টার সালমান খানের সঙ্গে](https://ichef.bbci.co.uk/news/624/cpsprodpb/9FC4/production/_109600904_gettyimages-480905168.jpg)
“তার বদলে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি বা হাসপাতাল বানান – পাঁচ একর কিন্তু খুব কম জায়গা নয়।”
“আমাদের মসজিদের আর দরকার নেই, নামাজ তো আমরা ঘরে বসে বা ট্রেনে-বাসে-প্লেনে যেখানে খুশি পড়তে পারি – কিন্তু আমাদের শিশুদের সবার আগে দরকার শিক্ষা।”
হিন্দি সিনেমা জগতের এই প্রবীণ চিত্রনাট্যকারের কথায়, সুপ্রিম কোর্টের গতকালের রায়ের পরই মসজিদ-মন্দির নামক এই পিকচারের ‘দ্য এন্ড’ হয়ে যাওয়া উচিত।
তবে ভারতীয় মুসলিম সমাজের নেতারা সবাই যে অন্তত সেভাবে ভাবছেন না, সেটাও কিন্তু পরিষ্কার।
বাংলাদেশ সময় :৬৪০ ঘন্টা ,১১নভেম্বর ২০১৯.
বাংলাপোস্ট /জামিল
সূত্র : বি বি সি