অনলাইনডেস্ক:
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘ঔষধ প্রশাসনের মহাপরিচালক (ডিজি) বাণিজ্যিক স্বার্থে অন্যের শেখানো বুলি আওড়িয়ে যাচ্ছেন। জনগণের স্বার্থ তার কাছে গৌণ। ঔষধ প্রশাসনের ডিজি বলেছেন, করোনা শনাক্তের কিট উৎপাদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন লাগে। অথচ কিট উৎপাদনের কোথাও অনুমোদন দেয়নি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। যে কোনো ওষুধ বা কিটের অনুমোদন দেয় সেই দেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। এ ক্ষেত্রে আমাদের ডিজির জ্ঞানের অভাব রয়েছে। তিনি এ নিয়ে অজ্ঞতাপ্রসূত ভুল বক্তব্য দিয়েছেন।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সর্বশেষ ২৭ এপ্রিল ভারত সরকারের পরামর্শক আইসিএমআর বলেছে, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপকভাবে কিট উৎপাদন এবং পরীক্ষা করে তা ব্যবহারও করা যেতে পারে। এ ছাড়া ইরানে প্রতিদিন অন্ততপক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে ১০ লাখ কিট ব্যবহার করছে। আমার দেশে এত বাধা কেন? এখানেও ওষুধ প্রশাসনের ব্যর্থতা রয়েছে।’ তিনি বলেন, আমি সরকারকে কিট উৎপাদন করে দিচ্ছি। জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে। ওষুধ প্রশাসনের ডিজি আমাকে বলছেন, দালালের মাধ্যমে আসতে হবে। আমি কেন দালালের মাধ্যমে যাব? তাদের যুক্তি হলো, নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এটা অনুমোদন করাতে হবে। এটা যদি আমি নিজে করাই, তাহলে তো তারা টাকার বিনিময়ে পক্ষপাতমূলক আচরণ করতে পারে। কিন্তু ঔষধ প্রশাসন বা সরকার করালে তারা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করতে পারবে না। আমি সব সময় চাই, জনগণের স্বার্থ। ডা. জাফরুউল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি সরকারকে কিট দিচ্ছি। এখানে ফড়িয়া শ্রেণি কেন থাকবে? তাছাড়া প্রয়োজন হলে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কিটের মান যাচাইয়ের পরীক্ষা করাতে পারে। আমি আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ বা ৫০ লাখ টাকা দিয়ে পরীক্ষা করাতে যাব কেন? এতে সময়ও বাড়বে। টাকাও লাগবে। আবার আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও তৈরি হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বা শিশু হাসপাতালের মাধ্যমে এক সপ্তাহের মধ্যেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারে। তাছাড়া তারা বলছে, আইসিডিডিআরের মাধ্যমে পরীক্ষা করাতে। সেখানে অন্তত ৫০ লাখ টাকা লাগবে। এই টাকা আমার নেই। মনে রাখতে হবে, যত মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে, তত খরচ বাড়বে। সময়ও লাগবে। তিনি বলেন, ‘সরকার তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরীক্ষা করালেই ভালো হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বলবে, আপনারা এর তুলনামূলক কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেন। তারা পরীক্ষা করে এক লাইনে বলে দেবে, এই কিটের কার্যকারিতা সম্পর্কে। এতে দেশেরই লাভ হবে। এ নিয়ে আজগুবি কথাবার্তা বলছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। তাদের যথেষ্ট অজ্ঞতা রয়েছে।’ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ডেঙ্গু রোগের একমাত্র চিকিৎসা প্যারাসিটামল সেবন। বাংলাদেশে যখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়, আমরা ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে চেয়েছিলাম, ডেঙ্গুর একমাত্র ওষুধ হচ্ছে প্যারাসিটামল। এর দাম মাত্র ৭০ পয়সা।
ডিজি বললেন, এখানে ওষুধের মূল্য দেওয়া যাবে না। কারণ, ওই প্যারাসিটামল বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হয়। আমি বলেছি, আপনাকে সেখানে বসানো হয়েছে জনগণের স্বার্থের জন্য, ব্যবসায়িকদের স্বার্থে নয়। এই হলো অবস্থা।ডা. জাফরুল্লাহ আরও বলেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর যখন আমাদের সহযোগিতা করেছে, সেখানে আমরা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু যেখানে বাধাগ্রস্ত হয়েছি, তাও বলেছি। আমি সব সময় চেয়েছি, আমার দেশের স্বার্থ। আমার কাছ থেকে নমুনা নিয়ে প্রতিদিন ইরান ১০ লাখ কিট তৈরি করছে। আরও অনেকেই নিতে চাচ্ছে। আমি ব্যবসায়িক স্বার্থ চিন্তা করলে, বিশ্বের অনেক দেশই এগিয়ে আসবে। অথচ আমি নিজের দেশকে কিট দিতে পারছি না।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আমি নিশ্চিত, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ব্যবস্থা নেবেন। প্রয়োজনে তিনি কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে আমাদের কিট পরীক্ষা করাবেন। এটা যত দ্রুত সম্ভব হবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল হবে। আশা করি, শিগগিরই এটা হবে।
সূত্র:বি ডি প্রতিদিন