সোনাগাজী প্রতিনিধি: সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্ত আইনে দায়ের করা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মা শিরিন আক্তার ও তার ছোট ভাই রাশেদুল হাসান। আজ বুধবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে এই দুজন সাক্ষ্য দেন।

তাদের জেরা করার পর বিচারক আস সামস জগলুল হোসেন আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন। ফেনী থেকে রাফির মা ও তার ছোট ভাই ঢাকা আসেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলার সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য। দুপুর ২টার পর তারা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।
রাফির মা শিরিন আক্তার বলেন, চলতি বছরের ২৭ মার্চ আমার মেয়ে নুসরাত জাহান রাফিকে ফেনীর সোনাগাজী মাদরাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করতে যাই। এ সময় রাফি আমার সঙ্গে ছিল। রাফিকে ঢুকতে দিলেও আমাকে ওসি মোয়াজ্জেমের কক্ষে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ সময় পর নুসরাত ওসির কক্ষ থেকে বের হয়ে আসার পর আমাকে সে জানায়, তার নিকাব খুলে ওসি বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। ওসির জিজ্ঞাসাবাদের ভাষা ছিল খারাপ। নুসরাতের কথাবার্তা ওসি মোয়াজ্জেম ভিডিও করেন।

রাফির মা ট্রাইব্যুনালকে বলেন, মাদরাসার ছাদে রাফির গায়ে অধ্যক্ষের নির্দেশে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার আধাঘণ্টার মধ্যে ওসি সাহেব ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। রাফির ভাই রাশেদুল হাসানও একই ধরনের বক্তব্য দেন। পরে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ।
মামলার বাদী ব্যারিস্টার ছৈয়দ সায়েদুল হক সুমন গত ২০ আগস্ট সাক্ষ্য দেন। পরে আরো দুজন সাক্ষী গত ২৩ আগস্ট সাক্ষ্য দেন। এ পর্যন্ত পাঁচজনের সাক্ষ্য দেওয়া হয়।
গত ১৭ জুলাই মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। গত ১৬ জুন হাইকোর্ট থেকে বের হওয়ার পর শাহবাগ এলাকা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ফেনীর সোনাগাজী থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। সোনাগাজী থানা পুলিশ ওসিকে ১৭ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির করেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
এর আগে গত ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন এই ট্রাইব্যুনাল। আগের দিন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মোয়াজ্জেমের অপরাধসংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
গত ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এই মামলা দায়ের করেন। ট্রাইব্যুনাল পিবিআইকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় মামলাটি করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই সদর দপ্তরের সিনিয়র এএসপি রিমা সুলতানা তদন্ত প্রতিবেদনে বলেন, রাফিকে যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর তাকে থানায় জেরা করার দৃশ্য নিজের মোবাইল ফোনে ধারণ করে তা প্রচার করেন। ভিডিও ধারণ ও প্রচার করে ওসি মোয়াজ্জেম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।
মাদরাসার অধ্যক্ষ গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত ৬ এপ্রিল সকালে রাফির শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাফি মারা যান।