দীর্ঘদিন পর রাজপথমুখী হচ্ছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামছে দুই দল। লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে দলীয় কর্মীদের মাঠ দখলে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। মূল দলের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনগুলোও পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। ‘আঘাতের বিপরীতে পাল্টা আঘাত’ নীতিতে এখন থেকে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ।
দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা বলছেন, বিএনপিকে ‘রাজনৈতিক স্পেস’ দেওয়ায় তারা রাজপথে সহিংস হয়ে উঠছে। ছাত্রদলকে দিয়ে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। অন্যদিকে ‘৭৫-এর হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেকবার’- এ স্লোগান দিয়ে মূলত তাদের স্বরূপ করেছে। এখন আবারও জ্বালাও-পোড়াও সহিংস আন্দোলন করতে চায় বিএনপি। কিন্তু সে সুযোগ আর দেওয়া হবে না। বিরোধীরা যাতে ‘অযৌক্তিক’ ইস্যুতে মাঠ দখল করতে না পারে সে জন্য নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর এবং সহযোগী সংগঠনের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি আওয়ামী লীগকে রাজপথে থাকার নির্দেশনা দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচি দিলে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু শেখ হাসিনাকে তারা হত্যার হুমকি দিচ্ছে, আর আমরা কি বসে বসে তামাক খাব? রাজপথ কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বলে দিচ্ছি আগুন নিয়ে খেলবেন না। আওয়ামী লীগ আছে। সন্ত্রাস করলে কোনো ছাড় নেই। রাজপথ ইজারা দেওয়া হয়নি।’ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনা মানেই বাংলাদেশ। সেই নেত্রীকে নিয়ে যখন কেউ কটূক্তি করে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। এখন থেকেই রাজপথ দখল এবং পাল্টা কর্মসূচি ও পাল্টা আঘাতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে জ্বালাও পোড়াও টাইপের কোনো কিছু করলে তার জবাব সঙ্গে সঙ্গেই দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো ভুঁইফোড় সংগঠন কিংবা বিশেষ জায়গা থেকে গজিয়ে ওঠা সংগঠন নয়। জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। যারা মনে করছে এই দলকে উপড়ে ফেলে দেবেন কিংবা ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে, তাহলে তারা কুয়োর ব্যাঙ। যে দলটির (বিএনপি) প্রধান দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, আরেকজন পলাতক। সেই দলের নেতা-কর্মীরা বিশৃঙ্খলা করলে আওয়ামী লীগ সমুচিত জবাব দেবে।’ দলীয় সূত্র জানায়, আজ থেকে সারা দেশে লাগাতার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন। ৪ জুন সারা দেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছে মহিলা আওয়ামী লীগ। এতে বিপুল উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। একই স্থানে আজ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করবে যুব মহিলা আওয়ামী লীগ। ৪ জুন বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে কৃষক লীগ। এ ছাড়া ৮ জুন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এবং ১০ জুন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। দলীয় সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেউ যেন কোন ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে ছাত্রলীগকে সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা ও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যেন কোনো ধরনের ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রেখে কর্মসূচি পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ছাত্র সংগঠনটিকে। এ ছাড়া ঢাকার চারপাশের জেলাগুলোর নেতা ও এমপিদের সঙ্গে মহানগর নেতাদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। রাজধানীতে হঠাৎ বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি ডাকলে যেন লোকসমাগম বেশি করা যায় সেজন্য ওই যোগাযোগের নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। বিএনপি গণতান্ত্রিক যে কোনো আন্দোলন করলে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হবে না। কিন্তু আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য, জ্বালাও-পোড়াও সহিংসতা করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ লাগাতার কর্মসূচি ছাড়াও নিয়মিত সম্মেলন করে চলেছে। আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ওই সম্মেলনকে সামনে রেখে তৃণমূলকে এখন ঢেলে সাজানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতারা ছুটে চলেছেন জেলা-উপজেলায়। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী দল-এটা সর্বজনস্বীকৃত। কাজেই সন্ত্রাসী দল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করবে-এটাই স্বাভাবিক। জনগণ তাদের অতীতেও প্রতিহত করেছে। এখনো আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করলে প্রতিহতই নয়, প্রতিরোধও করবে। আমরা এখন জাতীয় সম্মেলন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি।
দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ রাজপথের দল। তাই রাজপথেই বিএনপির যে কোনো সহিংস কর্মকাণ্ড মোকাবিলা করা হবে। প্রয়োজনে পাড়া-মহল্লায় একাধিক কমিটি গঠন করা হবে। তাদের প্রতিহত করতে ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, তাঁতী লীগ, শ্রমিক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছি। বিএনপিকে সময় দিচ্ছি। তাদেরকে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছি। কিন্তু তারা গায়ে পাড়া দিয়ে বিবাদ করবে, আর আমরা বসে আঙ্গুল চুষব- এটা হতে পারে না। রাজপথেই কঠোর জবাব দিতে আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। যেখানেই সহিংসতা, সন্ত্রাস সেখানেই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-প্রতিহত করা হবে। আওয়ামী লীগ রামকৃষ্ণ মিশন চালাতে আসেনি।’