অনলাইন ডেস্ক :
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মনিরুল ইসলাম নামে এক যুবক সরকারি চাকরির বয়স শেষ হওয়ার হতাশায় আত্মহত্যা করে থাকতে পারে বলে মির্জাপুর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. সামাদ মিয়া জানিয়েছেন। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি আত্মহত্যা। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর নিশ্চিত করে বলা যাবে এটি আত্মহত্যা না অন্য কিছু।
মঙ্গলবার মনিরুল ইসলাম মির্জাপুর উপজেলা সদরের বংশাই রোডে অবস্থিত শ্বশুর কয়েদ আলীর বাসার তৃতীয় তলার একটি কক্ষে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। তার স্ত্রী আইভি আক্তার টাঙ্গাইলের করটিয়া সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। মনিরুল ইসলাম যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের আনোয়ার গাজীর ছেলে। মনিরুল দম্পত্তির মুসা নামে পাঁচ বছরের এক ছেলে ও আরিশা নামে পাঁচ মাসের এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মনিরুল ইসলাম ও প্রভাষক আইভি আক্তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। লেখাপড়া করার সময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে পারিবারিকভাবে ৯ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। ৩২ তম বিসিএসে স্ত্রী আইভি আক্তারের শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি হয়। পরে তিনি করটিয়া সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে যোগদান করেন। তিনি সেখানেই বসবাস করতেন। আর স্বামী চাকরির জন্য ঢাকায় অবস্থান করতেন। আইভি আক্তার মাতৃত্বকালীন ছুটিতে মির্জাপুর উপজেলা সদরের বংশাই রোডে অবস্থিত বাবা কয়েদ আলীর বাসায় সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন। গত শুক্রবার স্বামী মনিরুল ইসলাম সরকারি একটি ব্যাংকে লিখিত পরীক্ষা শেষে শনিবার মির্জাপুরে স্ত্রীর কাছে আসেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি শ্বশুরের বাসায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। সন্ধ্যায় মযনা তদন্ত শেষে তার মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
মনিরুল ইসলামের শ্যালক হাসান জানান, তার সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি খুব হতাশায় ভুগছিলেন। তিনি আরো জানান, সরকারি চাকরির বয়স ৩৫ করার যে আন্দোলন চলছে সেই আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের মাধ্যমে তিনিও সক্রিয় ছিলেন। গত ৩১ জানুয়ারি সরকারি চাকুরির বয়স ৩০ শেষ হওয়ার পর থেকে তিনি আরো মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন বলে হাসান জানান।
মনিরুল ইসলাম সোমবার রাতের খাবার শেষে স্ত্রীর সাথে একই কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিচে নামেন। নয়টার দিকে বাসায় ফিরলে স্ত্রী তাকে নাস্তা খাওয়ার জন্য যেতে বলেন। এ সময় মনিরুল স্ত্রীকে পরে খাবেন বলে হঠাৎ তার কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। এ সময় স্ত্রী আইভি ও শ্বাশুরির সন্দেহ হলে দরজা খোলার চেষ্টা করেন। কিন্ত তারা দরজা খুলতে না পেরে চিৎকার করলে অন্য ভবনে কর্মরত শ্রমিকরা এসে স্টিলের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পান মনিরুল গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
স্ত্রী আইভি আক্তার জানান, মনিরুল ইসলাম উচ্চ শিক্ষিত হওয়া সত্যেও দীর্ঘদিন যাবৎ বেকার জীবন অতিবাহিত করছিলেন। এ নিয়ে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। রাতে মনিরুল তার মা ও বোনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন। মঙ্গলবার সকালে মনিরুল ইসলামের যশোর যাওয়ার কথা ছিল বলে তিনি জানান।