করোনা পরিস্থিতির কারণে গত মার্চ থেকে বন্ধ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷ গত জুন থেকে অনলাইনে ক্লাস চললেও কোনো পরীক্ষা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার হুট করেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর থেকে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষ এ–ও জানিয়েছে যে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ অর্থাৎ আবাসিক হলগুলো বন্ধই থাকছে৷
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়৷ কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের অনেকে আপত্তি জানিয়েছেন৷ বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বলছেন, আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক নয়৷ তাঁদের দাবি, পরীক্ষা নিতে হলে হলগুলো সীমিত পরিসরে হলেও খুলে দিতে হবে কিংবা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করতে হবে৷
তবে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলছেন, এই মুহূর্তে পরীক্ষাগুলো নেওয়া খুব জরুরি৷ ফলে তাঁরা এর কোনো বিকল্প ভাবছেন না৷ উপাচার্য বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষাগুলো নেওয়া খুব জরুরি৷ করোনা পরিস্থিতির কারণে আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গার বিষয়টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলো সমন্বয় করবে৷ এই মুহূর্তে আমাদের হাতে আর কোনো অপশন নেই৷’
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী কনক ফারজানা করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে আছেন৷ তিনি বলছেন, আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তটি অযৌক্তিক৷ কনক প্রথম আলোকে বললেন, ‘হল বন্ধ থাকলে করোনার এই সময়ে ঢাকায় গিয়ে আমরা কোথায় থাকব? ঢাকায় যাঁদের আত্মীয়স্বজনের বাসা আছে, তাঁরাও করোনার সময়ে থাকার জায়গা পাবেন কি না সন্দেহ৷ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা তো আছেই৷ ঢাকায় বাসা ভাড়া করার জন্য অগ্রিম টাকা লাগে৷ করোনার সময়ে অনেক পরিবারের টিকে থাকাই যেখানে কঠিন হয়ে পড়েছে, সেখানে বাসা ভাড়া করার মতো সামর্থ্য কয়জনের আছে? তা ছাড়া হুট করে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে; শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগের পরীক্ষার প্রস্তুতিও তেমন নেই৷’
হল খোলার বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ ‘স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে’ বৃহস্পতিবার একটি পোস্ট দেওয়া হয়৷ সেখানে ১৫ ঘণ্টায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী বলেছেন, সীমিত পরিসরে হলেও (যাদের পরীক্ষা, শুধু তাদের জন্য) হল খুলে দিয়েই পরীক্ষা নেওয়া উচিত৷ হল খোলার বিরুদ্ধে বলেছেন ১৭০ জনের মতো৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ একটি বিকল্প ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, রসায়ন বিভাগ তাদের অ্যালামনাইদের সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করার একটি উদ্যোগ নিয়েছে বলে জেনেছি৷ যেহেতু এমন একটি উদাহরণ সামনে আছে, অন্য বিভাগ-ইনস্টিটিউটগুলোও যদি একই রকম উদ্যোগ নেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় প্রশাসন তাদের সহযোগিতা করতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হবে৷