অনলাইন ডেস্ক:প্রবাসে এসে স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকে শামিল হচ্ছেন মৃত্যুর কাতারে। আকস্মিক হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে প্রবাসীদের মৃত্যুর মিছিল লম্বা হয়ে আসছে।
নিজ জন্মভূমি ছেড়ে জীবন জীবিকার তাগিদে সহায় সম্বল বিক্রি করে পরবাসে ঠাঁই নেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা খ্যাত প্রবাসীরা।
দেশের মায়া ত্যাগ করে হাজার মাইল দূরে শ্রম বিক্রি করা এই স্বপ্নবাজ প্রবাসীরা স্বপ্ন পূরণের আশায় কাজ করে বছরের পর বছর রেমিট্যান্স পাঠিয়ে পরিবার এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। সকলেরই লক্ষ্য থাকে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হয়ে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার। অথচ শ্রম বিক্রিতে ব্যস্ত প্রবাসীদের কর্মক্ষমতার পাশাপাশি কমতে থাকে আয়ুষ্কাল। তাই, হৃদরোগ-স্ট্রোক, সড়ক দুর্ঘটনা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, হত্যাসহ প্রতিবছরেই মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয় হাজারও প্রবাসীর নাম।
এমনই একজন কুমিল্লা চান্দিনার কোরবানপুর গ্রামের আব্দুল মজিদের পুত্র মাসুদ। ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে রিয়াদের মোবারক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। আজিজিয়া সবজি মার্কেটে একটি মুদি দোকানে কর্মরত ছিলেন। তিনি দুই ছেলে সন্তানের জনক। তার মৃতদেহ সেই হাসপাতালের হিমঘরে রয়েছে।

আরেকজন, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের, পাঁচকিত্তা গ্ৰামের আ. হক মেম্বার বাড়ীর হাজি মো. চারু মিয়ার ছেলে মোস্তফা কামাল। ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে সৌদি আরবের আল-খারিজে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। সেখানে তাসিদ আল বীনা কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন মোস্তফা। তিনি দুই মেয়ে এবং এক ছেলের জনক। তার মৃতদেহ স্থানীয় একটি হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে।

সরকারি হিসাবে গেল বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীকর্মী মারা গেছে ৩ হাজার আটশত জন। এদের মধ্যে ১ শত ৭ জনই মহিলাকর্মী। শুধুমাত্র গেল মাসেই রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসে ৭৬ জন প্রবাসীর মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।

যার সিংহভাগই হৃদরোগী। যদিও এ হিসাব দেশে ফেরত আসা বৈধকর্মীর লাশের হিসাব মাত্র। এই হার আগের বছরগুলোর তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। চলতি বছর আরও বাড়ছে। বিজলী বাতির আলো দেখে যে প্রবাসীদের ভোর হয়, তাদের চোখে রাতও নামে বিজলী বাতির আলোতে।

মাঝখানে সূর্য্যের আলো শুধুই কর্মব্যস্ততা। ৮ থেকে ১২ কিংবা ১৮ ঘণ্টা কর্মস্থলে ব্যয় করে যখন তারা ঘরে ফেরেন তখনই শুরু হয় নানামুখী চিন্তা। কখনো পারিবারিক, কখনো ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার চাপ, ভিসা পরিবর্তনের খরচ জোগাতে হিমশিম খাওয়া, কখনো বা কোম্পানি বন্ধ হয়ে দেশে ফেরার ভয়, ভালো কর্মসংস্থান না পাওয়া, মাস শেষে ঠিক মত বেতন না পাওয়া। নিদ্রাহীন এসব প্রবাসীদের পেয়ে বসে হৃদরোগ। নিয়তির বিধানে কারো কারো জীবন অবসান ঘটে যায় নিষ্ঠুর প্রবাসে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যয়ের তুলনায় কম আয়ের কারণে মানসিক চাপ ও দীর্ঘদিন স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে একাকীত্বই প্রবাসী কর্মীদের স্ট্রোক ও হৃদরোগের প্রধান কারণ। তাছাড়া দৈনিক ১২-১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম, অপর্যাপ্ত খাবার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকার কারণেও প্রবাসে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন, ‘হৃদরোগ ও মৃত্যুঝুঁকি কমাতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দেয়া, নিয়মিত ব্যায়াম ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা, ব্লাড প্রেশার ও ডায়াবেটিস চেক করাসহ প্রবাসীদের সচেতন করতে কমিউনিটি সংগঠনগুলোর উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। তবে সিগারেট সেবনের প্রবণতাও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

[প্রিয় পাঠক, বাংলাপোস্ট২৪ অনলাইনে পরবাস বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাসে আপনার কমিউনিটির নানান খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন news.banglapost24@gmail.com এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।] আগ্রহী বন্ধুরা বায়োডাটাসহ ইমেইল করুন:
বিস্তারিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন:
বাংলাপোস্ট২৪.নিউজ
ই-মেইল : news.banglapost24@gmail.com
নিউজ রুম নাম্বার : +88 01707078613 (WhatsApp), +88 01316263461 (Call)