সাত বছরের বেশি সময় ধরে কোমায় থাকার পর অবসরের আগে পদোন্নতি দেওয়া হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজাকে। গত সোমবার তাকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল থেকে কর্নেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র কর্মকর্তা যাকে এভাবে পদোন্নতি দেওয়া হলো।

বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে গত সাত বছরের বেশি সময় ধরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) কোমায় রয়েছেন। তার চাকরির মেয়াদ শেষ হয় গত সোমবার। ওই দিন তাকে সেনাবাহিনীর পক্ষ কর্নেল র‌্যাংকে উন্নীত করা হয়। তার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে হাসপাতালের কক্ষেই সম্পন্ন হয় পদোন্নতির আনুষ্ঠানিকতা।

দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা ২০১৩ সালের মার্চ মাসে হার্ট অ্যাটাকের পর থেকেই কোমায় চলে যান। তিনি ‘হাইপোস্কিক স্কিমিক ইনজুরি টু ব্রেইন ইফেক্টস’ এ ভুগছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজার মস্তিষ্কের নিচের অংশ ভালো আছে, কিন্তু মস্তিষ্কের যে অংশ মানুষের চিন্তা-চেতনার সঙ্গে জড়িত, সেই অংশের কোষগুলো সুস্থ হয়নি। অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) আছেন। এর মাঝে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি।

দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা ২৩ জুন ১৯৮৯ সালে সাঁজোয়া বাহিনীতে কমিশন পাওয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ২০১৩ সালে হার্ট অ্যাটাক করার আগে তিনি শিক্ষা পরিচালকের পদে ছিলেন। প্রায় ৩২ বছরের চাকরি জীবনে তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনেও ছিলেন। সেখানে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ‘পিস মেডেল’ পান। তিনি সেনাবাহিনীর একাধিক প্রশিক্ষণ স্কুলের রণকৌশল প্রশিক্ষক ছিলেন।

সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে বইও লিখেছেন দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা। সেনাবাহিনীর ইতিহাস এবং প্রখ্যাত কর্মকর্তাদের জীবনী ছাড়া তিনি নিজের পূর্বসূরি, বাউল সাধক দেওয়ান হাছন রাজাকে নিয়েও বই লিখেছেন।

স্বামীকে পদোন্নতি দেওয়ায় ও অসুস্থতায় চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজার স্ত্রী মোসলেহা মুনিরা রাজা। তিনি বলেন, ‘প্রমোশনের ঠিক এক মাস আগে আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে যান। আমাদের সবার মনে এক রকম আশা ছিল যে, তার পদোন্নতি হওয়ার পরেই যেন তিনি অবসরে যান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার অবসরের দিন তাকে যেভাবে সম্মানিত করেছে, সে জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’