দক্ষিণ ভারতের ব্যাঙ্গালোরে কংগ্রেস-সহ দেশের ২৬টি বিরোধী দলের নেতারা মিলে তাদের জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ হবে বলে ঘোষণা করেছেন।

এই ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটির পুরো কথাটা হল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স।

ব্যাঙ্গালোরে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলোর বৈঠকের দ্বিতীয় তথা শেষ দিনে আজ মঙ্গলবার বিরোধী জোটের এই নামকরণ চূড়ান্ত করা হয়।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আলোচনায় কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীই প্রথম এই ‘ইন্ডিয়া’ নামটি সুপারিশ করেছিলেন।


বৈঠক শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবার বিকেলে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, “এনডিএ আর বিজেপি – আপনাদের কি ক্ষমতা আছে আমাদের ইন্ডিয়াকে চ্যালেঞ্জ করার?”

ওই সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে জানান, পাটনা ও ব্যাঙ্গলোরের পর বিরোধী দলগুলোর পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে মুম্বাইতে।সম্পর্কিত খবর :

বৈঠকে ছিলেন মমতা ব্যানার্জি, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, স্টালিনের মতো নেতানেত্রীরা
ছবির ক্যাপশান,বৈঠকে ছিলেন মমতা ব্যানার্জি, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, স্টালিনের মতো নেতানেত্রীরা

সেখানে বিরোধী শিবিরের মধ্যে নানা বিষয়ে সমন্বয় স্থাপনের জন্য ১১জন সদস্যকে নিয়ে একটি কোঅর্ডিনেশন কমিটিও গঠন করা হবে।

আজকের সাংবাদ সম্মেলনে মি. খাড়গে ও মিস ব্যানার্জি ছাড়াও আম আদমি পার্টির নেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, শিবসেনার (উদ্ধব গোষ্ঠী) নেতা উদ্ধব ঠাকরে ও সাবেক কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীও ভাষণ দিয়েছেন।

মঞ্চে ছিলেন এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার কিংবা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও।

তবে যে ২৬টি বিরোধী দল আলোচনায় অংশ নিয়েছিল, তার বেশ কয়েকটির নেতাদের ওই সভায় দেখা যায়নি। মল্লিকার্জুন খাড়গে দাবি করেন, ফেরার বিমান ধরার তাড়া ছিল বলেই কয়েকজন সেখানে থাকতে পারেননি।

তবে ‘ইন্ডিয়া’ নামের এই বিরোধী জোটের নেতা কে হবেন বা প্রধানমন্ত্রী পদে তাদের কোনও একজন প্রার্থী থাকবে কি না – এই প্রশ্ন বিরোধী নেতারা সবাই এড়িয়ে গিয়েছেন।

‘কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রিত্ব চায় না’

তবে বৈঠকে মল্লিকার্জুন খাড়গে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের দল (কংগ্রেস) প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য আদৌ উৎসুক নয়।

রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনা ছিল, এর আগে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের যিনি চেয়ারপার্সন ছিলেন, সেই সোনিয়া গান্ধীকে এই নতুন বিরোধী জোটেরও প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হবে।

ব্যাঙ্গালোরে যখন দ্বিতীয় দিনের বৈঠক চলছে
ছবির ক্যাপশান,ব্যাঙ্গালোরে যখন দ্বিতীয় দিনের বৈঠক চলছে

বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন :

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ও জেডি (ইউ) দলের নেতা নীতিশ কুমারকে জোটের আহ্বায়ক করা হতে পারে বলেও অনেকে ধারণা করছিলেন।

তবে এদিন শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি।

পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন, এখনই জোটের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সোনিয়া গান্ধীকে ঘোষণা করা হলে সেটা বিরোধীদের মধ্যে মতভেদ উসকে দিতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই সম্ভবত ‘ইন্ডিয়া’ জোট কোনও নেতার নাম ঘোষণা করেনি।

এর আগে গত মাসের ২৩ তারিখ বিহারের রাজধানী পাটনাতে জেডি(ইউ) দলের নেতা ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের ডাকে বিরোধী দলগুলো তাদের প্রথম বৈঠকে মিলিত হয়েছিল।

ব্যাঙ্গালোরে বিরোধী শিবিরের দু’দিনব্যাপী এই বৈঠক ছিল তারই পরবর্তী পদক্ষেপ, তবে এবারের এই বৈঠকের মূল আহ্বায়ক দল ছিল কংগ্রেস।

বৈঠকে রাহুল গান্ধীই (মাঝে) ইন্ডিয়া নামটি প্রস্তাব করেন বলে বলা হচ্ছে
ছবির ক্যাপশান,বৈঠকে রাহুল গান্ধীই (মাঝে) ইন্ডিয়া নামটি প্রস্তাব করেন বলে বলা হচ্ছে

রবিবার থেকেই বিরোধী নেতা-নেত্রীরা ব্যাঙ্গালোরে জড়ো হতে শুরু করেছিলেন । সোমবার রাতে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার দেওয়া নৈশভোজের মধ্যে দিয়েই ঘরোয়াভাবে তাদের আলোচনা শুরু হয়ে যায়।

দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সাবেক প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গান্ধীও ওই নৈশভোজে উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিজে সেখানে অতিথিদের আপ্যায়নও করেন।

আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে এই বৈঠকে যোগ দেওয়া মোট ২৬টি দল আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসে, যেখানে প্রস্তাবিত বিরোধী জোটের রূপরেখা এবং বিরোধী শিবিরের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

সেই আলোচনাতেই বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের বিকল্প হিসেবে বিরোধী জোটের এই ‘ইন্ডিয়া’ নামটি স্থির করা হয়।