অনলাইন ডেস্ক :
কাশ্মীর প্রশ্নে জাতিসংঘের মঞ্চে মালয়েশিয়া ভারতের তীব্র সমালোচনা করার পর ভারতের আমদানিকারকরা সে দেশ থেকে তেল পাম তেল আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের সব চেয়ে বড় ক্রেতা ভারত, তারা এখন মালয়েশিয়ার পরিবর্তে ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে তা আমদানি করার কথা ঘোষণা করেছে।
অন্য দিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এদিন জানিয়েছেন, ভারত তাদের পণ্য বয়কট করলেও কাশ্মীর প্রশ্নে করা মন্তব্য থেকে তিনি পিছু হঠতে রাজি নন।
কারণ তিনি যা বলেছেন, তা ‘মন থেকেই’ বলেছেন।
কিন্তু কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও মালয়েশিয়ার সংঘাত এখন কীভাবে দুদেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে?
কূটনৈতিকভাবে মালয়েশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মোটামুটি ভালই, কিন্তু গত মাসেই নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে তা বেশ খারাপ মোড় নেয়।
সেখানে তার ভাষণে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতকে ‘আক্রমণকারী ও দখলকারী’ শক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
এছাড়াও ড: মাহাথির যেভাবে পাকিস্তান ও তুরস্কের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিবিসির ধাঁচে একটি ইসলামপন্থী চ্যানেল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন, সেটাকেও ভারত ভালভাবে নেয়নি।
ফলে ইতিমধ্যেই ভারতে মালয়েশিয়ার পণ্য বর্জন করার ডাক উঠতে শুরু করেছে – ড: মাহাথির কেন ইমরান খানের সঙ্গে হাত মেলালেন, সেই প্রশ্নও উঠছে।
এরপরই ভারতে ভোজ্য তেল আমদানিকারকদের সবচেয়ে বড় সমিতি, মুম্বাইয়ের সলভেন্ট এক্সট্রাক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন তার সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছে মালয়েশিয়া থেকে পাম তেল আনা অবিলম্বে বন্ধ করতে।
দিল্লিতে বাণিজ্য সংবাদদাতা ঋষভ গুলাটি জানাচ্ছেন, “এই নিষেধাজ্ঞা এর মধ্যেই কার্যকর হয়েছে।”
“এছাড়া মালয়েশিয়ার পাম তেলের ওপর অতিরিক্ত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানো হয়েছে।”
“ভারতে এখন যে ৯০ লক্ষ টন পাম তেল আমদানি করা হয় তার অর্ধেকের বেশিই আসে মালয়েশিয়া থেকে, আর এই ব্যবসা থেকে তাদের টার্নওভারও প্রায় দুশো কোটি ডলারের কাছাকাছি।”
“ফলে এই ব্যবসা বন্ধ হলে মালয়েশিয়ার জিডিপি-র ২.৫ শতাংশ আসে যে পাম তেল রফতানি থেকে সেটা ব্যাহত হবে, ছয় লক্ষ লোকের রুটিরুজিতে টান পড়বে।”
এদিকে এই বয়কটের ডাককে তিনি কীভাবে দেখছেন, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এদিন মন্তব্য করেছেন “সব সময় সবাইকে খুশি করে চলা সম্ভব নয়।”
ড: মাহাথির বলেন, “মালয়েশিয়া একটি বাণিজ্যনির্ভর দেশ – ফলে আমাদের বাজার দরকার, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা দরকার।”
“কিন্তু কখনও কখনও নির্যাতিত মানুষের হয়েও মুখ খুলতে হয় – সেটা কেউ পছন্দ করবে, কেউ আবার করবে না।”
কিন্তু কাশ্মীর নিয়ে জাতিসংঘে করা মন্তব্যের জন্য তিনি কি এখন আফসোস করছেন?
এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের যেটা মনে হয়েছে সেটাই বলেছি – সেটা থেকে পিছু হঠতে বা সেটা পাল্টাতে আমরা রাজি নই।”
“আমরা মনে করি জাতিসংঘের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে কাশ্মীরিরা উপকৃত হবে।”
“এটা শুধু ভারত-পাকিস্তানের ব্যাপার নয়, আমেরিকা-সহ গোটা বিশ্বেরই উচিত জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাব মেনে চলা। নইলে জাতিসংঘ থেকে লাভটা কী?”
দিল্লিতে আরএসএস-পন্থী বিশ্লেষক দেশরতন নিগম অবশ্য দাবি করছেন মালয়েশিয়ার জন্য এটাই ভারতের ‘সঠিক দাওয়াই’।
আরও নানাভাবে ভারত তাদের স্বার্থকে আঘাত করতে পারে বলেও তিনি জানাচ্ছেন।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, “পাম তেল আমদানি বন্ধ হলে অবশ্যই তাদের অর্থনীতি হোঁচট খাবে।”
“তা ছাড়া প্রতি বছর আট থেকে নয় লাখ ভারতীয় পর্যটক মালয়েশিয়া বেড়াতে যান, তারাও এখন এর বদলে থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুর-বালি-ভিয়েতনামও বেছে নিতে পারেন।”
“মালয়েশিয়ায় প্রায় দশ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ আছেন – অর্থনীতিতে তাদের অবদান বিরাট – সেখানেও অস্থিরতা তৈরি হবে।”
“ড: মাহাথিরকে বুঝতে হবে এই দুনিয়াটা শুধু ইসলামিক জিহাদ নয় – এটা বিরাট একটা পরিবার যেখানে সবার সবাইকে দরকার।”
ইসলামী ভাবধারার বিতর্কিত প্রচারক জাকির নায়েক গত কয়েক বছর ধরে মালয়েশিয়ার আশ্রয়ে আছেন।
মালয়েশিয়া তাকে ভারতের হাতে তুলে দিতে রাজি না-হওয়ায় দুদেশের সম্পর্কে একটা অস্বস্তি আগে থেকেই ছিল।
কিন্তু এখন কাশ্মীরিদের প্রতি মালয়েশিয়ার খোলাখুলি সমর্থন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে, যার প্রভাব পড়ছে পাম তেলকে ঘিরে দুদেশের বাণিজ্য-যুদ্ধে।
বাংলাদেশ সময়:৮.১৬ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩,২০১৯
বাংলাপোস্ট২৪/জামিল
সূত্র:বিবিসি