রাশিয়ার নিয়োগ করা আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান সের্গেই আকসনভ জানিয়েছেন যে ক্রাইমিয়ায় একটি বিমান ঘাঁটিতে বিস্ফোরণে অন্তত একজন নিহত হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ক্রাইমিয়া উপত্যকার পশ্চিম উপকূলে নভোফেদোরিভকার কাছে স্যাকি বিমান ঘাঁটিতে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিস্ফোরণের যেসব ফুটেজ দেখা যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে সেখানে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটেছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরে জানিয়েছে যে সেখানে গোলাবারুদ ধ্বংস করা হয়েছে। যদিও এ দাবি নিরপেক্ষ সূত্র থেকে যাচাই করা হয়নি।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা জানিয়েছে গোলাবারুদ সংরক্ষণাগার এলাকার কোথাও কোন আগুন ধরেনি।
মস্কো ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখল করে নিয়েছিলো। এলাকাটি রাশিয়ার পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
এই বিষ্ফোরণের কয়েকঘণ্টা পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার রাত্রিকালীন ভাষণে বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ ক্রাইমিয়া দিয়ে শুরু হয়েছে, এর স্বাধীনতার মাধ্যেই শেষ হবে।
তিনি বিষ্ফোরণের উল্লেখ না করে বলেন, “ক্রাইমিয়া ইউক্রেনের এবং আমরা কখনোই হাল ছাড়বো না”।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে স্থানীয় সময় বেলা তিনটা বিশ মিনিটের দিকে বিস্ফোরণ শুরু হয় এবং কমপক্ষে বারটি বিস্ফোরণের শব্দ তারা শুনেছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে কালো ধোঁয়া উড়ছে আর পর্যটকরা সাগর সৈকত ছেড়ে পালাচ্ছে।
পরে ওই এলাকায় পৌঁছানোর পর মিস্টার আকসনভ বলেন বিস্ফোরনস্থলের আশেপাশের তিন মাইল এলাকা নিয়ে একটি সংরক্ষিত জোন ঘোষণা করা হয়েছে।
ওদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা মিখাইলো পদোলিয়াক বলছেন যে এই বিস্ফোরণের জন্য কিয়েভ দায়ী নয়।
এর আগে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী সামাজিক মাধ্যমে ব্যঙ্গাত্মক একটি পোস্ট দিয়েছিলো যেখানে যুদ্ধজাহাজ মস্কভা ও আরও কিছু সামরিক হামলা রাশিয়াকে অগ্নি নিরাপত্তা ও বিরোধপূর্ণ এলাকায় ধোঁয়ার বিষয়ে মনে করিয়ে দিয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার রাতের ভিডিও ভাষণ ক্রাইমিয়াকে উৎসর্গ করেছেন কিন্তু সরাসরি বিস্ফোরণের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি।
“ক্রাইমিয়া ইউক্রেনের এবং আমরা কখনোই এটি ছেড়ে দেব না,” সামাজিক মাধ্যমে দেয়া ভিডিও ভাষণে বলেছেন তিনি।
তিনি বলেন ক্রাইমিয়ার যুদ্ধ এটিকে মুক্ত করার মাধ্যমেই শেষ হতে পারে এবং তার বিশ্বাস যে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই তারা ক্রাইমিয়া উপত্যকা পুনর্দখল করতে পারবে।
দুই হাজার চৌদ্দ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে রাশিয়া ক্রাইমিয়াকে সংযুক্ত করে নেয়। তবে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে এটি বৈধতা পায়নি।
মূলত ক্রাইমিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর ওই গণভোট অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে তখনকার ইউক্রেনে রাশিয়া সমর্থিত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তখন ইউরোপপন্থীরা কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ করছিলো।
চলতি বছরের ২৪শে ফেব্রুয়ারি মস্কো ইউক্রেনে হামলা করে এবং ক্রাইমিয়াকে তাদের সৈন্য ইউক্রেনের ভেতরে যাওয়ার করিডোর হিসেবে ব্যবহার করছে।
নভোফেদোরিভকার স্যাকি সেভাস্তপোল বন্দর থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তরে । এটি রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরে থাকা জাহাজের অবস্থানস্থল। এখান থেকেই রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজগুলো ইউক্রেনের উপকূল অবরোধে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
মস্কো থেকে বিবিসি সংবাদদাতা বলছেন, যদি শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে আসে যে ক্রাইমিয়ার এ বিস্ফোরণে জন্য ইউক্রেনই দায়ী তাহলে এটি হবে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
কারণ এটিই হবে ক্রাইমিয়ার ভেতরে প্রথম ইউক্রেনের বড় ধরণের কোন হামলা।
গত জুনে ক্রাইমিয়ার রাশিয়া মনোনীত নেতা বলেছিলেন যে ইউক্রেন কৃষ্ণসাগরে তেল খনন এলাকাগুলোতে গুলিবর্ষণ করছে।
পরে জুলাইতে রাশিয়া বলেছিলো যে সেভাস্তপোলে ড্রোন হামলায় রাশিয়ার নৌ ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।