করোনাভাইরাস সঙ্কটের কারণে দুনিয়ার নানা প্রান্তে যে হাজার হাজার ভারতীয় আটকা পড়ে আছেন, তাদের বিমানে ও জাহাজে করে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বৃহস্পতিবার থেকে এক বিশাল অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে।
এই অভিযানের প্রথম ধাপেই প্রায় দু’লক্ষের কাছাকাছি ভারতীয়কে ফেরানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে – যেটাকে বলা হচ্ছে বিশ্বের ‘বৃহত্তম ইভ্যাকুয়েশন’।
তবে ভারত এই দফায় নাগরিকদের কাছ থেকে চড়া হারে বিমান ভাড়া নেবে বলে ঘোষণা করেছে। এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন আমেরিকায় আটকে পড়া ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রী থেকে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদের অনেকেই।
১৯৯০-এ প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজারের মতো ভারতীয়কে ফিরিয়ে এনেছিল। বিশ্বের ইতিহাসে এতোদিন সেটাই বেসামরিক নাগরিকদের বৃহত্তম ইভ্যাকুয়েশন বলে স্বীকৃত।
চলতি করোনাভাইরাস সঙ্কটে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া অন্তত তিন লক্ষ ভারতীয় দেশে ফিরে আসার জন্য দূতাবাসগুলোয় আবেদন করেছেন। এদের একটা বড় অংশকে ফিরিয়ে আনতেই ৭ই মে থেকে শুরু হচ্ছে ভারতের মেগা অভিযান।
উদ্ধার করা মানুষের সংখ্যা বা অভিযানের ব্যাপ্তি – দু’দিক থেকেই আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিতে চলেছে এই অপারেশন।
ভাড়া দিয়ে কিনতে হবে বিমানের টিকিট
তবে ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী জানিয়ে দিয়েছেন, এই বিশেষ ফ্লাইটে ভাড়া দিয়েই টিকিট কিনতে হবে এবং দেশে ফিরেও চোদ্দ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
যেমন তিনি বলেছেন, “লন্ডন থেকে ভারতে আসার ভাড়া হবে ৫০ হাজার রুপি, আমেরিকা থেকে এক লক্ষ রুপির মতো – কিংবা ঢাকা-দিল্লি বা ঢাকা-শ্রীনগরের ভাড়া হবে বারো হাজার রুপির মতো।”
ভারতীয় নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ – আইএনএস জলশ্ব, আইএনএস মগর ও আইএনএস শার্দূলকেও এই অভিযানে যুক্ত করা হচ্ছে।
এই রণতরীগুলো উভচর – অর্থাৎ সোজা সমুদ্রতটের বালুতে গিয়েও ভিড়তে পারে – আর এগুলোকে কাজে লাগানো হবে মধ্যপ্রাচ্য ও মালদ্বীপে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতে।
দেড় মাসেরও ওপর ভারতের আকাশে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ – তারপর সরকারের এই সিদ্ধান্ত বিদেশে আটকে পড়া অনেক ভারতীয়র মুখেই হাসি ফোটাচ্ছে।
সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রী নুপূর প্যাটেল বলছিলেন, “চল্লিশ দিনেরও বেশি অপেক্ষা করার পর অবশেষে হাই কমিশন থেকে এই খবর পেয়ে আমরা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেছি।”
“একটা পরিকল্পনা অবশেষে নেওয়া হয়েছে, আমরা এখন দ্রুত ঘরে ফেরার জন্য প্রার্থনা করছি।”
ছাত্র-ছাত্রী ও অভিবাসী শ্রমিকরা এতো দামী টিকিট কীভাবে কিনবেন?
আমেরিকায় বহু কলেজ-ইউনিভার্সিটি বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছে। তারা এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ ইভ্যাকুয়েশন ফ্লাইটের খবরেও তেমন আশ্বস্ত নন।
নর্থ আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টসের কর্ণধার সুধাংশু কৌশিক জানাচ্ছেন, “এদেশে বহু ছাত্রছাত্রী খোলা গ্যারেজে রাত কাটাচ্ছেন – কারণ তাদের লটবহর সমেত বের করে দেওয়া হয়েছে।”
“ভারত বা মার্কিন সরকার কেউই তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। যে স্কলারশিপ বা ছুটকো কাজের ভরসায় তারা খরচ চালাতেন, সেটাও বহুদিন বন্ধ।”
“এই অবস্থায় কীভাবে তারা লাখ টাকা প্লেনের ভাড়া দেবেন? আর আমরা যখন কমিউনিটির কাছে সাহায্য চাইতে যাচ্ছি, তখন শুনতে হচ্ছে এরা তো অনেক খরচ করে বিদেশে পড়ে – এদের কেন সাহায্য লাগবে?”
ভারতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কুরিয়াকোস ভার্গিস মধ্যপ্রাচ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের দেশে ফেরানোর জন্য জনস্বার্থ মামলা করেছেন।
তিনিও বলছেন, “ওই মানুষগুলোর সঞ্চয় গড়ে তোলার কোনও সুযোগই নেই – কারণ তারা আয়ের প্রায় পুরোটাই দেশে পাঠিয়ে দেন, আর সেই রেমিট্যান্সে দেশ উপকৃত হয়।”
“আজ যদি ফ্রি-তে টিকিট দেওয়া সম্ভবও না-হয়, অন্তত ভর্তুকি দিয়ে বা প্রচুর ডিসকাউন্ট দিয়ে তাদের প্লেনে ফেরানোর ব্যবস্থা করাটা ভারতের দায়িত্ব।”
কাল অভিযানের প্রথম দিনেই ১০টি ফ্লাইটে ২৩০০ ভারতীয়র দেশে ফেরার কথা।
আগামী এক সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রিটেন, আমেরিকা, সৌদি, সিঙ্গাপুর, কাতার, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, বাংলাদেশ, কুয়েত, ওমান ও বাহরাইনে চালানো হবে এমন অন্তত ৫০টি ফ্লাইট।
সূত্র:বি বি সি বাংলা