বাংলাপোস্ট২৪:
মাল্টার “গোল্ডেন পাসপোর্ট” স্কিমের মাধ্যমে অন্যান্য দেশের ধনীরা দেশটির নাগরিকত্ব কিনতে পারছে।
এই ব্যবস্থাটির কড়া সমালোচনা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
গল্পের পেছনের সঠিক ঘটনা এবং পরিসংখ্যান যাচাই করে, সেই টিম অনুসন্ধান করেছে – কেন অসংখ্য মানুষ মাল্টার পাসপোর্ট কিনতে এতটা আগ্রহী।
একজন সাংবাদিককে হত্যার ঘটনার পর তদন্তের ধারাবাহিকতার প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল মাল্টায় সফর করছে দেশটিতে “আইনের শাসন অনুসন্ধান” করতে ।
২০১৭ সালের মাঝামাঝি এবং ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়কালের মধ্যে এই স্কিম থেকে আয় ১৬ কোটি ২৩ লাখ ৭৫ হাজার ইউরোতে উন্নীত হয়, যেটা সেই সময়ে মাল্টার জিডিপির ১ দশমিক ৩৮ শতাংশের সমান, যদিও ২০১৮ সালে পাসপোর্ট কেনার হার পড়ে যায়।
মাল্টার মত ছোট দেশগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এই ধরনের স্কিম নেয়ার পরিষ্কার প্রণোদনা রয়েছে।
ফ্লোরেন্সের ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট এর অভিবাসন বিষয়ক গবেষক লুক ভন ডের ব্যারেন বলছেন, “অনেক ক্ষুদ্র রাষ্ট্র এই ধরনের ব্যবস্থার মাধ্যমে আয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে,”।
কারা কিনছে মাল্টার পাসপোর্ট?
যেসব দেশের নাগরিকেরা এই “সোনালী পাসপোর্ট” এর জন্য আবেদন করেছেন তাদের সম্পর্কে পৃথক দেশ হিসেবে কোনো তথ্য মাল্টার সরকার প্রকাশ করে না, কিন্তু তারা অঞ্চল হিসেবে তথ্য দিয়ে থাকে।
আবেদনকারী নাগরিকদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে ইউরোপের নাগরিকেরা, এরপরে মধ্যপ্রাচ্য এবং উপসাগরীয় এলাকা এবং তারপরে এশিয়া অঞ্চল।
যাইহোক, ইউরোপীয় সদস্যভুক্ত দেশগুলোর বার্ষিক নাগরিকত্ব গ্রহণ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে বাধ্যবাধকতা রয়েছে-ওই বছর কারা কারা নাগরিক হয়েছেন।
২০১৪ সালে মাল্টাতে এই নীতি চালুর পর, সৌদি আরব, রাশিয়া এবং চীন থেকে নাগরিকত্ব গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে যায়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৫ সালের আগে সৌদি আরব থেকে ন্যাচারাইলাইজড কোনো নাগরিক ছিলো না, কিন্তু ওই সময় থেকে তা ৪শ ছাড়িয়ে যায়।
আরেকটি পাসপোর্ট চাওয়ার বৈধ কারণ রয়েছে, কিন্তু মাল্টিজ এই ব্যবস্থাটির অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ইউরোপীয় কমিশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে বলা হচ্ছে, মাল্টার এই স্কিমের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের চেয়ে “কম কঠোর” ।
এক্ষেত্রে আবেদনকারীদের বাসস্থান থাকার বাধ্যবাধকতা নেই, এবং আগে থেকে দেশে দেশটির সাথে কোনো যোগাযোগ থাকাও প্রয়োজনীয় নয়।
দি অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) গতবছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যেখানে মাল্টাকে কর ফাঁকির উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশ হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, আর এর কারণ দেশটির ‘গোল্ডেন পাসপোর্ট” স্কিম।
মাল্টার সরকারের বক্তব্য, তারা সমস্ত আবেদনকারী এবং রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের বিষয়ে যাচাই করে থাকে।
গবেষক মিস্টার ভন ডের ব্যারেন বলছেন, অনেক পরিবার এটাকে ব্যবহার করছে তাদের সন্তানদের বিদেশে শিক্ষার সুযোগ হিসেবে অথবা কেউ সুযোগ নিচ্ছে নিজের দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য।
কিন্তু তিনি আরো যে বিষয়টি যোগ করেন: “এই কর্মসূচি নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্যকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে, কেননা কেবলমাত্র অল্প কিছুসংখ্যক বিত্তশালী অভিজাত-ই এই দ্বিতীয় নাগরিকত্ব কিনতে পারে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সাইপ্রাস এবং বুলগেরিয়াতে একই রকম স্কিম রয়েছে।
২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সাইপ্রাস ১৬৮৫ বিনিয়োগকারী এবং তাদের পরিবারের ১৬৫১ সদস্যের নাগরিকত্বের আবেদন গ্রহণ করেছে। যদিও চলতি বছরের নভেম্বর মাসে দেশটি ২৬ জন বিনিয়োগকারীর গোল্ডেন পাসপোর্ট প্রত্যাহার করে নিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত “ভুল” এর অভিযোগ দেখিয়ে।
সূত্র:বিবিসি বাংলা