এস, এম, হক , নিউইয়র্ক থেকে:
মুজিব বর্ষ’ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরীর কুইন্স বোরোতে অবস্থিত কেন্দ্রীয় কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘বাংলা কর্নার’ স্থাপন করা হয়েছে।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের উদ্যোগে ও কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির সহযোগিতায় এই কর্নার স্থাপন করা হয়। গত মঙ্গলবার এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ কর্নারের উদ্বোধন করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির সর্ববৃহৎ আবাসস্থল নিউইয়র্কের কুইন্স বরো। সেখানে ইংরেজি, স্প্যানিশ ও চাইনিজ ভাষার পরে বাংলা চতুর্থ বৃহৎ ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ কারণে কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘বাংলা কর্নার’ স্থাপন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
বাংলা কর্নারটিতে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে ৩০৯টি বই প্রদান করা হয় ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘২০২১ সাল বিভিন্ন দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ বছর আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও আজ (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্ম দিন। সে কারণে এ বছরের এদিনে বাংলা কর্নারের শুভ উদ্বোধন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।’
তিনি এ সময় কুইন্স লাইব্রেরিকে ঘিরে তার অতীত স্মৃতিচারণ করেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি। প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মদের নিয়ে এই ‘বাংলা কর্ণার’-এ আসবেন এবং বই পড়বেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি এ বিশেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ৩২টি ভাষণের সংকলন ও বিশ্লেষণ এবং প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে ৭৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির লেখনি সম্বলিত বিশেষ সংকলন কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরিকে উপহার দেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন তার বক্তব্যে বলেন, মুজিব বর্ষে স্থাপিত এই ‘বাংলা কর্ণার’টি আমাদের বাংলাদেশী-মার্কিন কমিউনিটির জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরিসহ অন্যান্য মূলধারার প্রতিষ্ঠানের সাথে কনস্যুলেটের যোগাযোগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ও ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা এবং কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেনিস এম. ওয়ালকট অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় ভাষণ প্রদান এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক বাংলা ভাষণকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি এ প্রসঙ্গে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধুর বারংবার কারাবরণের সময়কাল উল্লেখ করে বলেন মুজিব বর্ষে এই ‘বাংলা কর্ণার’ স্থাপন যথার্থ প্রতীকী এবং গুরুত্ব বহন করে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন সি. ল্যু, এবং কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট ডোনাভান রিচার্ডস এবং সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস। প্রত্যেকেই বাংলা ভাষাকে নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশী-মার্কিনিদের কাছে তুলে ধরার এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন। এর মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষি সকলের, বিশেষ করে শিশু কিশোরদের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরি হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
বক্তব্য শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রী তার নিজের লেখা বেশ কয়েকটি বই কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির প্রেসিডেন্ট ডেনিস ওয়ালকটের হাতে তুলে দেন। কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেনিস এম. ওয়ালকট কমিউনিটিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পররাষ্ট্র মন্ত্রীর হাতে একটি সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন। এ বইগুলো কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির প্রধান শাখায় ৬ মাস প্রদর্শিত হবে এবং পরবর্তীতে উক্ত লাইব্রেরির বিভিন্ন শাখায় এই বইগুলো সংগৃহীত থাকবে।