প্রবাসী আয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়ার তিনটি দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। করোনার কারণে ২০১৮ সালের চেয়ে চলতি বছর দেশের প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) এক-চতুর্থাংশ কমে যেতে পারে। ওই বছরের তুলনায় বাংলাদেশের প্রবাসী আয় কমতে পারে ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে প্রবাসী আয় নিয়ে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এডিবির এ পূর্বাভাসের মধ্যে জুলাইয়ে দেশে প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী করোনায় ২০২০ সালে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় হারাবে বাংলাদেশ।

গত সোমবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে এশিয়ার দেশগুলোর প্রবাসী আয়ের প্রবাহ তছনছ হয়ে যেতে পারে। ওই প্রতিবেদনে ২০১৮ সালের তুলনায় কোন দেশের কত প্রবাসী আয় কমতে পারে, সেই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এডিবির মতে, সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় কমতে পারে নেপালের। দেশটির প্রায় ২৯ শতাংশ প্রবাসী আয় কমে যেতে পারে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তাজিকিস্তানের প্রায় ২৮ শতাংশ প্রবাসী আয় কমতে পারে।

প্রবাসী আয়ের প্রবাহের গতিধারা কোন দিকে যাচ্ছে, তা জানতে এডিবি একটি পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। করোনা সংকট যদি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকে এবং তা যদি প্রায় এক বছর টিকে থাকে, তাহলে এশীয় দেশগুলো কী পরিমাণ প্রবাসী আয় হারাতে পারে, তা দেখানো হয়েছে।

এডিবির ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী করোনার কারণে ২০২০ সালে সারা বিশ্ব প্রায় ১০ হাজার ৮৬০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় হারাতে পারে। করোনা না থাকলে যত প্রবাসী আয় প্রত্যাশা করা হয়েছিল, এর চেয়ে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ কম প্রবাসী আয় আসবে। তবে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে এশীয় দেশগুলো। এশীয় দেশগুলোর প্রবাসী আয় কমতে পারে প্রায় ৫ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ কম।

এডিবি বলেছে, করোনা সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে, বিশেষ করে কর্মসংস্থানে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এতে প্রবাসী শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন। তাঁদের চাকরির ঝুঁকি বেড়েছে। তাঁরা সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাও তেমন একটা পান না। বহু প্রবাসী শ্রমিক বেকার হয়ে বসে আছেন। আবার অনেকের মজুরি কমে গেছে।

এশিয়ার কোন অঞ্চলে কত প্রবাসী আয় কমতে পারে, সেই হিসাবও দিয়েছে এডিবি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ২ হাজার ৮৬০ কোটি ডলার কম পাবে, যা ২০১৮ সালের মোট প্রবাসী আয়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম। এ ছাড়া সেন্ট্রাল এশিয়া ৩৪০ কোটি ডলার, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ১ হাজার ১৭০ কোটি ডলার, পূর্ব এশিয়া (চীন ও জাপান ছাড়া) ১৭০ কোটি ডলার ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার প্রবাসী আয় হারাতে পারে বলে মনে করছে এডিবি।

এ বছর বিশ্বের কোন অঞ্চল থেকে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমবে, তা-ও বলেছে এডিবি। সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে ২ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ প্রবাসী আয় কমে যাবে। এই অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক কাজ করেন। এশীয় দেশগুলো এ বছর যত প্রবাসী আয় হারাবে, তার ৪১ শতাংশই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসবে না। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে কমবে ২ হাজার কোটি ডলারের প্রবাসী আয়। যুক্তরাজ্য থেকে প্রায় ৩৪০ কোটি ডলার কম অর্থ আসবে।

করোনার কারণে প্রবাসী আয়ের ওপর প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সরকারকে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে এডিবি। বিশেষ করে ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধি করার কথা বলেছে এডিবি। এ ছাড়া প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল দরিদ্র পরিবারগুলোকে নগদ সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

Source:Prothom -Alo