সরকার পতনের একদফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার প্রথম মাঠে নামছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। বিএনপি রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের ৮২ সাংগঠনিক জেলায় একযোগে পদযাত্রা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে। এর কর্মসূচির মাধ্যমে একদফা আন্দোলনের পক্ষে জনসমর্থন আদায় এবং সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে দলটি দেশব্যাপী বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, ঢাকা জেলা এবং গাজীপুর মহানগরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। একইভাবে রাজধানী ঢাকার ১১ স্পট থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি বের করবে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা ৩৬টি রাজনৈতিক জোট ও দল।
একদফার যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি আজ রাজধানীর গাবতলী থেকে দয়াগঞ্জ রায় সাহেববাজার মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার এবং কাল বুধবার আব্দুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটারের পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে। ব্যাপক লোকসমাগম ও কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ রাখতে প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানার নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই দিনে রাজধানী ঢাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচি থাকায় সতর্কতা অবলম্বন করছে দলটি। এ ছাড়া পদযাত্রা কর্মসূচির শৃঙ্খলা ধরে রাখতে এ জন্য নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
advertisement
আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচি বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সর্বশেষ গত ১২ জুলাই নয়াপল্টনে কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে বিএনপি অশান্তিতে নয়, শান্তিতে বিশ্বাস করে। একদফা দাবিও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করা হবে। তিনি কর্মসূচিতে দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। অভিন্ন দাবিতে একই কর্মসূচি ঘোষণা করে সমমনা দলগুলো। সেই অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১০ দফা দাবিতে কর্মসূচি করে আসছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এর প্রায় সাত মাস পর গত ১২ জুলাই রাজধানীর নয়াপল্টনে বিশাল সমাবেশ করে একদফার ভিত্তিতে দুদিনের পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। একই দিনে অভিন্ন দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে সমমনা দলগুলো।
একদফার মধ্যে রয়েছে- বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও বর্তমান সংসদ বিলুপ্তি; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার।
একদফার ভিত্তিতে আজ মঙ্গলবার বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা সকাল ১০টায় পদযাত্রা কর্মসূচি গাবতলী থেকে শুরু করবে। এর পর টেকনিক্যাল মোড় হয়ে মিরপুর-১, মিরপুর-১০ গোল চত্বর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা (আগারগাঁও), বিজয় সরণি, কারওয়ানবাজার, এফডিসি সড়ক হয়ে মগবাজার এলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার নেতাকর্মীরা যুক্ত হবেন। এর পর মালিবাগ, কাকরাইল, নয়াপল্টন (দলীয় কার্যালয়), ফকিরাপুল, মতিঝিল (শাপলা চত্বর), ইত্তেফাক মোড় হয়ে দয়াগঞ্জ রায়সাহেববাজার মোড়ে গিয়ে এ কর্মসূচি শেষ হবে বিকাল ৪টায়। পদযাত্রা শুরুর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় গাবতলী এসএ খালেক বাসস্টেশনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হবে।
আগামীকাল বুধবার একই সময়ে ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা আব্দুল্লাহপুর থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হবে এবং প্রগতি সরণি হয়ে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হবে। এ কর্মসূচির শুরুতেও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, দেশকে বাঁচাতে, দেশের স্বাধীনতাকে বাঁচাতে সবাই আজ ঐক্যবদ্ধ। পদযাত্রা কর্মসূচি কেন্দ্র করে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে।
অন্যদিকে আজ মঙ্গলবার ঢাকা জেলা বিএনপি ধামরাইয়ের ডুলিপিঠা থেকে ইসলামনগর হয়ে সাভারের নয়ারহাট হয়ে নবীনগর পর্যন্ত (ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক) পদযাত্রা করবে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী এ তথ্য জানান।
সমমনা দলগুলোও মাঠে নামছে : যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বেলা ১১টায় মিরপুর-১২ থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের পদযাত্রা শুরু হবে। সেখান থেকে তালতলা আগারগাঁও গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করবেন। একই দাবিতে ১২-দলীয় জোটের উদ্যোগে দুপুর আড়াইটায় কাকরাইল মোড় থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট দুপুর ১২টায় রাজধানী বিজয় নগর থেকে পদযাত্রা বের করবে। কাকরাইল, নয়াপল্টন, ইত্তেফাক মোড় হয়ে দয়াগঞ্জে গিয়ে কর্মসূচি শেষ হবে।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি বেলা ১১টায় রাজধানীর পূর্বপান্থপথ এফডিসিসংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করবে। এটি মালিবাগ, নয়াপল্টন হয়ে মতিঝিলে গিয়ে শেষ হবে। গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি বিকাল ৩টায় গণফোরাম চত্বর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে।
গণঅধিকার পরিষদ (নুর) বিকাল ৪টায় পুরানা পল্টন কালভার্ট রোড দলীয় অফিসের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করে মগবাজার, কারওয়ানবাজার হয়ে নির্বাচন কমিশন ভবন অভিমুখে যাবে। গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু করবে। লেবার পার্টি বেলা ১১টা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে টিকাটুলি মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য জোট সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শাহবাগ হয়ে ধানমন্ডি পর্যন্ত পদযাত্রা করবে।