বাংলাপোস্ট ডেস্ক ডেস্ক :
একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ভোলার বোরহানউদ্দীনে সহিংস বিক্ষোভ ও পুলিশের গুলির ঘটনায় রোববার চারজন নিহত হওয়ার পর সেখানকার পরিস্থিতি এখনো থমথমে।
ফেসবুকে ইসলামের নবীকে নিয়ে কটুক্তি করে দেয়া একটি পোস্টকে ঘিরে এর আগে তিন দিন ধরে বোরহানউদ্দিনে বিক্ষোভ চলছিল।
রোববার সকালে বোরহানউদ্দিনের ঈদগাহ মাঠে ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে একটি সমাবেশে আসা লোকজনের সাথে এক পর্যায়ে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে।
এ সময় পুলিশ গুলি চালালে ৪ জন নিহত ও পুলিশ সহ বহুলোক আহত হয়।
কিন্তু কী ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল?
এ প্রশ্নের জবাবে ভোলার সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের নেতা মাওলানা মোহাম্মদ তাজউদ্দিন বলছিলেন, প্রশাসনের চাপে রোববার তাদের বিক্ষোভ সমাবেশ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করে দেবার কারণে সহিংস পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল।
“সমাবেশে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসছিল। কিন্তু সময়ের আগেই সমাবেশ শেষ করে দেয়ার কারণেই পরিস্থিতি সেদিন খারাপ হয়” – বলেন তিনি।
“পুলিশেরও হয়তো তেমন প্রস্তুতি ছিল না পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। আর তৌহিদী জনতাও হয়তো ক্ষুব্ধ হয়েছে। তারাও প্রতিবাদী হয়েছিল।”
‘এসপি সাহেব বললেন, স্যার আমাদের বাঁচান’
রোববারের সংঘর্ষ এবং পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে বোরহানউদ্দিন থানায় যে মামলা হয়েছে তাতে ‘অজ্ঞাত ৪/৫ হাজার ব্যক্তিকে’ অভিযুক্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, এই মামলার কারণে সেখানে আতংক দেখা দিয়েছে ।
বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ইসলামের নবী মোহাম্মদকে নিয়ে মেসেঞ্জারে যে পোস্ট দেয়া হয়েছিল, তার সাথে জড়িত সন্দেহে দু’জনকে পুলিশ আটক করে।
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মো: কায়সার বলছিলেন, এ নিয়ে প্রশাসনের সাথে আলেম-ওলামাদের এক আলোচনায় সমাবেশের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ব্যাপারে কথা হয়েছিল।
কিন্তু তার পরও ”তৌহিদী জনতা”র ব্যানারে রোববার বিক্ষোভ করা হয়।
“আলোচনায় আমরা বিশ্বাস করেছিলাম যে তারা আর বিক্ষোভ করবে না। কিন্তু রোববার সকালে মাইক লাগানোর খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই” – বলেন পুলিশ সুপার।
“তারা বলেন যে, অল্প কিছু লোক আসতে পারে এবং নেতারা বক্তব্য দিয়ে সমাবেশ শেষ করবেন। সেটাই হলো।”
“কিন্তু হঠাৎ করে সেখানে উত্তেজনা শুরু হলো এবং তা চললো। কেন এটা হলো, তা তদন্ত সাপেক্ষ” – বলেন পুলিশ সুপার।
সরকার সজাগ
সরকারের একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী বলেছেন, ভোলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোন পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ যাতে কেউ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে সরকার সজাগ রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ঘটনার তদন্ত এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া বলছিলেন, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং নিহতদের ক্ষতিপূরণেরও ব্যবস্থা করা হবে।
‘তবে তদন্ত এবং আইনগত ব্যবস্থাগুলোর ক্ষেত্রে কিছুটা সময় প্রয়োজন’ বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলছিলেন, “আমরা আগেও দেখেছি, রামু কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটনা যা নয় তা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে কিছু মতলববাজ মানুষ উত্তেজনা সৃষ্টি করে, নিরাপরাধ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। এটা দুর্ভগ্যজনক।”
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকালই নির্দেশনা দিয়েছেন যাতে করে সকল মানুষের নিরাপত্তা দেয়া হয়। এর পাশাপাশি সেখানে আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। আর নিহতদেরও ক্ষতিপূরণ অবশ্যই দেয়া হবে।”
ভোলায় রোববারের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার ঢাকা এবং বরিশালে তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ করা হয়েছে।
বিরোধীদল বিএনপি বুধবার এ ব্যাপারে এক বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৮১৬ঘণ্টা, অক্টোবর ২২ ,২০১৯
বাংলাপোস্ট২৪/জামিল
সূত্র:বিবিসি বাংলা