অনলাইন ডেস্ক :
সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় নুসরাত জাহান রাফির সহপাঠী ছিলেন কামরুন নাহার মনি। নিজেদের কত কথাই না একে অপরকে শেয়ার করেছেন হয়তো। হঠাৎ নুসরাতকে যৌন হয়রানি করার অপরাধে কারাগারে যেতে হয় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন অনেকেই। মনিও পক্ষ নেন ওই শিক্ষকের। এর মধ্যেই সিরাজের নির্দেশে নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়
গত ৬ এপ্রিল সেই কিলিং মিশনে অংশ নেন মনি। গায়ে আগুন দেওয়ার জন্য জাপটে ধরেন সহপাঠীকে। কিছুদিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার হন। গত ২১ সেপ্টেম্বর কারারুদ্ধ মনি জন্ম দেন এক কন্যাসন্তান।
এর এক মাসের মাথায় গত বৃহস্পতিবার ফেনীর আলোচিত ওই হত্যাকা-ের রায় হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ১৬ আসামির সবাইকেই মৃত্যুদ- দেন আদালত। হত্যাকা-ের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় নুসরাতের সহপাঠী কামরুন নাহার মনিকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়। ওই দিন আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার পর ১৪ দ-িতকে কনডেম সেলে নেওয়া হলেও মনি ও উম্মে সুলতানা পপিকে রাখা হয়েছে নারী ওয়ার্ডে। মায়ের সঙ্গেই রাখা হয়েছে মনির শিশু সন্তানকেও।
এ প্রসঙ্গে ফেনী জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল কাদের বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আদালত থেকে আসার পর ১৪ জনকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। কামরুন নাহার মনি ও উম্মে সুলতানা পপিকে রাখা হয়েছে ওয়ার্ডে। যে ওয়ার্ডে মনিকে রাখা হয়েছে সেখানে তার শিশুকে রাখতে কোনো সমস্যা হবে না।’
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছেন সেটি কার্যকর হতে আরও কিছু সময় লাগবে। কারণ আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করবেন, পেপারবুক তৈরি হবে এবং সেটা যাবে আপিল বিভাগে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ফুল কোর্টে এ বিষয়ে শুনানি হবে। তাতেও ফাঁসি বহাল থাকলে আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। এ প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সময় লাগবে। এর মধ্যে মনির শিশু কিছুটা বড় হয়ে যাবে। তখন সে তার বাবার জিম্মায় চলে যেতে পারবে।’
এলাকাবাসী বলছে, উচ্চ আদালতে মনির দ- লাঘব হলেও তার শিশু সন্তানটি ভবিষ্যতে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ এ হত্যা মিশনে কামরুন নাহার মনির যে ন্যক্কারজনক ভূমিকা ছিল, সাজা তাকে ভোগ করতেই হবে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কীভাবে তিনি বান্ধবীকে হত্যার মতো এ ঘৃণ্য কা-ে যুক্ত হলেন?
মনি সোনাগাজী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রয়াত আজিজুল হকের মেয়ে। নুসরাতের সঙ্গে তিনিও এবার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। গত ৯ এপ্রিল তাকে নিজ বাসা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে জানিয়েছিলেন, মনি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই তিন পুরুষ সহযোগীর সঙ্গে কিলিং মিশনে অংশ নেন। এমনকি সহযোগীদের জন্য হাতমোজা ও বোরকাও কেনেন তিনি। হত্যার সময় নুসরাত যেন নড়াচড়া করতে না পারে সে জন্য তার শরীর চেপে ধরেছিলেন মনি।
বাংলাদেশ সময় :১০৫২ ঘন্টা ,২৬ অক্টোবর ১৯
বাংলাপোস্ট২৪/ জামিল