বাংলাপোস্ট২৪ঃ
রাষ্ট্র কখনওই সবসময় ‘মানবিকতা’ কিংবা ‘ন্যায়’ এর মানদন্ড অনুসরণ করেনা। রাষ্ট্র সবসময় তার স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, সে তার অখণ্ডতা ও নিরাপত্তার জন্য যা যা প্রয়োজন তাই করে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে তখনই যখন আমরা (মানুষ) মানবিকতা কিংবা ‘ন্যায়’ এর মানদন্ডে রাষ্ট্রকে মাপতে যাই! বিপত্তির চূড়াnন্ত হয় যখন আমরা কোন নির্দিস্ট কওম, ব্যক্তি কিংবা গোত্রের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রকে মূল্যায়ন করি।
আপনাদের কিছু কমন প্রশ্ন করি, আপনারা মনে মনে উত্তর দেন…কিছু বলা কিংবা লেখার প্রয়োজন নেই।
১। ভারত কাশ্মীরীদের উপর নির্যাতন করে। কেন করে? কারন কাশ্মীরিরা মুসলিম এবং বেশিরভাগই বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবে বিশ্বাসী। একইসাথে স্বাধীন কাশ্মীর কিংবা পাকিস্থানে যোগ দেয়া কাশ্মীর ভারতের অখন্ডতার জন্য হুমকি। কেননা এই প্রক্রিয়ায় আরও প্রদেশ যুক্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে ভারত যে কাশ্মীরীদের প্রতি দমনের নীতি অনুসরণ করছে আপনি সেটা সমর্থন করেন? হ্যাঁ অথবা না!
২। মায়ানমার রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন করে। জাতিগত বিদ্বেষের কারনে তাঁদের নিধন করতে চায়। কেন? কারন মায়ানমার (সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মিজরা) মনেকরে রোহিঙ্গারা বহিরাগত এবং জনসংখ্যা দিয়ে তাঁদের দেশ ভরে ফেলতে চায়। এবং সংখ্যায় বাড়লে ভবিষ্যতে স্বাধীন আরাকানের দাবী তুলতে পারে! এক্ষেত্রে মায়ানমার যে রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার এবং নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে আপনি তা সমর্থন করেন? হ্যাঁ অথবা না!
৩। চীন উইঘুরদের তার অখন্ডতার প্রতি হুমকি মনে করে। কেন? মুসলিম উইঘুরদের যদি মেইন্সট্রিম চাইনিজদের সাথে একীভূত করা না যায় তাহলে ভবিষ্যতে উইঘুররা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে যেতে পারে! যেন সেটা না হয় তাই তারা উইঘুরদের আলাদা পরিচিতি মুছে দিতে চায়। এক্ষেত্রে উইঘুরদের প্রতি চীনের এই নিপীড়ন আপনি সমর্থন করেন? হ্যাঁ অথবা না!
৪। পাকিস্থান বেলুচদের তার অখন্ডতার প্রতি হুমকি মনে করে তাঁদের উপর অমানবিক নির্যাতন করে। কেন? কারন বেলুচিস্থান হচ্ছে পাকিস্থানের ইকোনমিক লাইফ লাইন, বালুচ জনগোষ্ঠী নয়। তাই বেলুচদের স্বাধীনতার দাবীকে নির্মম অত্যাচারের মাধ্যমে পাকিস্থান দাবিয়ে রেখেছে আজ বহু বছর। এক্ষেত্রে আপনি কি পাকিস্থানের এই বালুচ দমনের নীতি সমর্থন করেন? হ্যাঁ অথবা না!
৫। সৌদি ইয়েমেনীয়দের সুন্নি সুপিরিয়রিটি/ রাজতন্ত্রের প্রতি হুমকি মনে করে। কেন? কারন তারা ভিন্নমতাবলম্বী (শিয়া) ইরান পন্থী এবং আঞ্চলিক সৌদি আধিপত্যবাদের প্রতি হুমকি। এই হুমকি মোকাবেলায় সৌদি ইয়েমেনে হামলা করে আগেই তাঁদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে। লাখ লাখ নির্দোষ ইয়েমিনীয় সৌদির এই নির্মম অত্যাচারে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। এক্ষেত্রে আপনি কি সৌদির এই দমননীতি সমর্থন করেন? হ্যাঁ অথবা না!
৬। তুরস্ক তার অখন্ডতার প্রশ্নে কুর্দিদের হুমকি বলে মনে করে। কেন? জাতিগত বিভাজনের কারনে সৃষ্ট হুমকি থেকে রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষায় তুরস্ক স্বাধিনতাকামী কুর্দিদের দমন করছে। কারন, এই কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন করতে না পারলে তুরস্ক তার বিশাল একটা অঞ্চল হারাবে এবং দুর্বল হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে আপনি কি কুর্দিদের প্রতি তুরস্কের এই অনৈতিক আগ্রাসন কিংবা দমন নীতি সমর্থন করেন? হ্যাঁ অথবা না!
৭। ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের তাঁদের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি মনে করে। কেন? মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের টিকে থাকা নির্ভর করে ফিলিস্থিনিদের কতটা দমিয়ে রাখা যায় তার উপর। ইসরাইল ভালকরেই জানে একটা নামেমাত্র ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেই তাঁদের নিশ্চিহ্ন হবার দিন গোনা শুরু হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আপনি কি ফিলিস্তিনিদের প্রতি রাষ্ট্র ইসরাইলের এই দমন নীতি সমর্থন করেন? হ্যাঁ অথবা না!
যেহেতু উপরের সবগুলো সিচুয়েশনই প্রায় একই ধরণের সেহেতু আপনার কাছে তার উত্তর যদি এরকম হয়…
**যদি সবগুলো প্রশ্নের উত্তর “হ্যাঁ” হয় তবে আপনি মোটেই মানবিক নন। বরং আপনি রাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেয়া একটি রাজনৈতিক প্রাণী মাত্র।
**যদি সবগুলো প্রশ্নের উত্তর “না” হয় তবে আপনি বাস্তবতা বিবর্জিত একজন মানবিক মানুষ। শুধুই একজন মানুষ, তীব্র অনুভুতিসম্পন্ন রক্তমাংসের অসহায় একজন মানুষ।
**যদি র্যান্ডমলি কিছু প্রশ্নের উত্তর “হ্যাঁ” হয় আর কিছু প্রশ্নের উত্তর “না” হয় তাহলে আপনি একজন সুবিধাবাদী মানুষ। স্থান, কাল, পাত্রভেদে আপনার বিচারিক মানদণ্ড পরিবর্তনশীল।
**যদি যদি (বিশেষ) কিছু প্রশ্নের উত্তর “হ্যাঁ” হয় আর (বিশেষ) কিছু প্রশ্নের উত্তর “না” হয় তাহলে আপনি একজন পক্ষপাতমূলক অবিবেচক এবং চরম মাত্রার প্রতিক্রিয়াশীল মানুষ।
উত্তর মিলিয়েছেন? আপনার কি মনেহয়? আপনি কোনটা??
মনির হোসেন
ম্যনেজিং পার্টনার
তাকওয়া ইন্টারন্যাশনাল